যুক্তফ্রন্ট কি হাওয়া?

গোলাম মোস্তফা : দুই প্রধান দলের বাইরে গিয়ে তৃতীয় শক্তি হওয়ার বাসনায় যুক্তফ্রন্ট গঠনের ঘোষণা দেওয়া চার রাজনীতিকের গত ছয় মাসে নিজেদের জোট শক্তিশালী করতে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। বরং জোটের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ইদানীং বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। রমজানে ইফতার পার্টির মতো আয়োজনে তাদের একসঙ্গে দেখা গেছে।
আলোচিত পাঁচ রাজনীতিক গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলÑজেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে জোট গঠনের উদ্যোগ নেন। গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ড. কামাল হোসেনকে বাইরে রেখে জোটের ঘোষণা দেন বাকি চার নেতা। নাম দেওয়া হয় ‘যুক্তফ্রন্ট’। সে সময় কামাল হোসেন দেশের বাইরে থাকায় তিনি এই জোটে আসেননি বলে জানানো হয়। তবে দেশে ফিরে কামাল হোসেন জোটে যোগ দেননি। তার বদলে ডাক দিয়েছেন ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র।
এ প্রসঙ্গে যুক্তফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা একসঙ্গেই চেষ্টা করছিলাম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল করার জন্য। যখন এটা ফাইনাল স্টেজে আছে, তখন উনি (ড. কামাল) আমাদের থেকে চলে গেছেন। কেন তিনি আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেলেন, সেটা তিনিই বলতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার অভীষ্ট লক্ষ্য আমি জানি না, যদিও যথেষ্ট শক্তিশালী বক্তব্য রেখেছেন। আমি আশা করব, উনি এ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রক্রিয়াগতভাবে সম্পৃক্ত হবেন।’
বিবৃতি আছে, দৃশ্যত নেই কর্মসূচি : যুক্তফ্রন্টের দৃশ্যত ঐক্যবদ্ধ কোনো কর্মসূচি নেই। তাদের কার্যক্রম বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সর্বশেষ ১ জুলাই কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে যুক্তফ্রন্টের নেতারা গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি পাঠিয়েছেন। সেখানে ৩০ জুন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা করে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সব ছাত্রই আমাদের সন্তান, সুতরাং তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা আমাদের কাম্য নয়। ৩০ জুনের ঘটনার কথা জেনে আমরা দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত না হয়ে পারি না।
এদিকে গত ডিসেম্বরের যুক্তফ্রন্ট ঘোষণার পর এর অন্যতম নেতা মান্না বলেছিলেন, ‘দুই জোটের বিপরীতে নতুন একটা রাজনৈতিক জোট গড়ার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল আমাদের। সাধারণ মানুষও সেটা চাইছে। আমরা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে পথচলা শুরু করেছি। আমরা মানুষের কাছে যাব। আশা করছি, দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে বৃহৎ শক্তি নিয়ে আমরা রাজনীতিতে আবির্ভূত হতে পারব।’
তবে বাস্তবে যুক্তফ্রন্ট রাজনীতিতে সেভাবে কোনো প্রভাব রাখতে পারছে না। এই জোটের কোনো কাজ দৃশ্যমান নয় কেন জানতে চাইলে জোট নেতা বলেন, ‘যুক্তফ্রন্টের কার্যক্রম আছে। কিন্তু সারা দেশের গণতন্ত্রের যে পরিবেশ, গণতন্ত্রহীনতার যে পরিবেশ তাতে কিছুতেই আমরা ভালো করে কাজ করতে পারছি না।’ তার দাবি, ‘আমরা দেশের বহু জায়গায় কমিটি করেছি, তারা প্রকাশ্য হতে পারছে না। বের হলেই তাদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কাজটা অনেক দূর এগিয়েছে। তারা ভেতরে ভেতরে সক্রিয়ভাবে যুক্তফ্রন্টের কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তাদের সমর্থনও পেয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আগামী আন্দোলনে যুক্তফ্রন্ট সক্রিয়ভাবে থাকবে। সেটা রাজপথের আন্দোলন হোক, নির্বাচনী আন্দোলন হোক, দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন হোক আমরা ভালো ভূমিকা রাখতে পারব।’