নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ ১০টি বিদেশি সংস্থা ও দেশ শিক্ষা খাতে বর্ধিত পরিমাণে আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে। প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তারা।
বিশ্বব্যাংক প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গত ২৮ জুন পরিকল্পনা কমিশনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে এ মাসেই চুক্তি হওয়ার কথা।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, পরিবেশ উন্নত করা, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা, বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ, চারপাশে দেয়াল দেওয়া, কম্পিউটার শিক্ষা চালু করা, পরীক্ষার চাপ কমানো, ইংরেজি ও অঙ্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ, মহিলা শিক্ষয়িত্রী নিয়োগে অগ্রাধিকার, ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী নিয়োগ, প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের মধ্যে নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা সৃষ্টি, নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করা, মিডডে খাবারের আওতায় স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো, পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি সংশোধন, মেধাভিত্তিক বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো, স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার্থে স্কুলসংলগ্ন রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়ন, স্কুলের একটা কক্ষ দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক হিসেবে সংরক্ষিত করা প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হবে এ অর্থ। প্রকল্পভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ছাড়াও জাইকা, ডিএফআইডি, ইউনেসকো, ইউনিসেফ, কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে।
শিক্ষকদের মধ্যে সাধারণভাবে নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে লিডারশিপ গড়ে তোলার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ জন্য ভারত, শ্রীলঙ্কা ও যুক্তরাজ্য থেকে শতাধিক শিক্ষক আনা হবে। জেলাভিত্তিক প্রধান শিক্ষকদের এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেবেন তারা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই প্রধান শিক্ষকেরাই পর্যায়ক্রমে অন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। বিদেশিরা নৈতিক মূল্যবোধ ও নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি, যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেবেন।
ইংরেজি ও অঙ্ক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ৬৫ হাজার স্কুলের মধ্যে বর্তমানে ৫ হাজার স্কুল ক্লাস্টার। এ সংখ্যা আগামী এক বছরের মধ্যে ১০ হাজারে উন্নীত করা হবে। ১০ হাজার শিক্ষক আগামী বছরের মধ্যে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। গ্র্যাজুয়েট ছাড়া কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে না। মহিলা শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতে ক্লাস এসেসমেন্ট পদ্ধতি চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও জুনিয়ার সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষাই শুধু চালু থাকবে।
বর্তমানে মেধাভিত্তিক বৃত্তি ৩০০ টাকা ও সাধারণ বৃত্তি ২০০ টাকা করে ৮৫ হাজার শিক্ষার্থীকে দেওয়া হচ্ছে। এ সংখ্যা ও বৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো হবে। মেধাভিত্তিক বৃত্তি মাসে ৪০০ টাকা ও সাধারণ বৃত্তি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে। বৃত্তির সংখ্যা বাড়িয়ে ১ লাখে উন্নীত করা হবে। আইসিটি-ভিত্তিক স্কুলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১৩ হাজার স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।