যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রেও দুর্বলতা আছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ঠিকানা অনলাইন : যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের নানা দিক তুলে ধরে সেসব নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করতে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

গণতন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের ছবক দেওয়া বন্ধ করে কূটনীতিকরা শিষ্টাচার মেনে চলবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চায় দুর্বলতা থাকতে পারে, আর সেটা যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য শুনতে চাওয়া ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রকাশ বলেও মন্তব্য করেছেন মোমেন।

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি থাকতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের আলোচনায়ও আসছে নির্বাচন প্রসঙ্গ।

সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র চায় বলে জানিয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতাকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসাবে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন রাজনৈতিক সংঘাতহীনভাবে সম্পন্ন করা গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রুনেইয়ের সুলতানের বাংলাদেশ সফর নিয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা মোমেন নির্বাচন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সেই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান।

গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সব দেশের গণতন্ত্রে ভালো-মন্দ আছে। ইট ইজ নট এ পারফেক্ট সিচুয়েশন। ইট ইজ এ ডাইনামিক প্রসেস, ইভলভিং প্রসেস। প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডেমোক্রেসি পরিপক্ক হয়।

“আমাদের কিছু দুর্বলতা আছে, আমরা সেই দুর্বলতা রেক্টিফাই করার চেষ্টা করছি। আমাদের এমপ্যাসিস রয়েছে। তার মানে এই নয়, উনাদেরটা সবচেয়ে ভালো। তাদেরও নিজস্ব দুর্বলতা রয়েছে।”

দীর্ঘ সময় যুক্তরাষ্ট্রে কাটানো মোমেন সে দেশে ভোট দেওয়ার হার কম থাকা, আলাবামায় ৭২ শতাংশ প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া, উপনির্বাচনে ১-২% ভোট পড়া এবং কোথাও কোথাও পোলিং বুথ কম থাকার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

এসব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করতে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন তিনি।

পিটার হাসের ওই বক্তব্যের সূত্র এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিজে থেকে এসব কথা বলেননি, সাংবাদিকরা ’জোর’ করে ধরার পর তার বক্তব্য এসেছে।

“আপনারা ওকে জোর করে বলতে যান। সেই বেচারা বাধ্য হয়ে উত্তরগুলো দেয়।”

মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতার সময় অনেক সংবাদ মাধ্যম বিভিন্ন বিষয়ে মতামত নিতে আসত। কিন্তু জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় কোনো বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তারা আর কখনও আসেনি।

“রাষ্ট্রদূত হওয়ার পরে আমার কাছে আর কিছু জানতে চায়নি। হারিকেন স্যান্ডির সময়ে ভাবছিলাম, তারা আমাদের মতামত চাইবে, কারণ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা বিশ্বে নেতৃস্থানীয়। কিন্তু কেউ আসেনি।”

‘উপনিবেশিক মানসিকতার’ কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের এ ধরনের প্রশ্ন করা হয় বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

“আমাদের দুঃখ বাংলাদেশে, আমরা ঔপনিবেশিকতার কারণে আমরা বাইরে কিছু হলে বেশি পছন্দ করি, সে কারণে আমরা ধরণা দিই। এই মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।”

অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতের চেষ্টা সরকার করছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। আপনারা বিদেশিদের কাছে ধরণা না দিলেই ভালো।”

বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে মোমেন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের দেশে যে কূটনীতিকরা আছেন, তারা আচরণবিধি জানেন এবং তারা তাদের নিজেদের মতো আচরণ করবেন।

“তাদেরকে আমাদের পরামর্শ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। তারা সম্মানিত ব্যক্তি, তাদের উচিত কূটনীতিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি মেনে চলা।”

ঠিকানা/এসআর