যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী শিশুদের দুর্দশা

মোহাম্মদ এন মজুমদার

রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের সম্প্রতিকালের নিষ্ঠুরতম আচরণ পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লিডার, কমিউনিটি লিডার, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরণের আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ যাবৎ ২,৩০০ শিশুকে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী পিতা-মাতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিটেনশান ফেসেলিটি এবং অন্যান্য শিশু আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগকে নিউইয়র্ক শহরেই রাখা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতির বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ এই শিশু সেপারেশন প্রক্রিয়া, ইতিপূর্বে ১৯৯৭ সালের নিষ্পত্তিকৃত অধ্যাদেশকে বাতিল করার জন্য জেলা জজদেরকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়ে দেন। বর্তমানে ২,৩০০ শিশু যাদেরকে তাদের পিতা-মাতার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে, তাদেরকে তাদের পিতা-মাতার কাছে ফেরৎ পাঠাতে ট্রাম্প প্রশাসন রাজি হলেও এর প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতির অবসান হয়েছে কিনা- তাও পরিষ্কার করা হয়নি।
এদিকে পেন্টাগনের মুখপাত্র লে. কর্নেল হেইমি ডেভিস জানান, ট্রাম্প প্রশাসন এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পেন্টাগন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন- তারা যেনো ২০ হাজার পিতামাতাহীন শিশুকে মিলিটারি বেইসে রাখার মতো অবস্থা তৈরি করে রাখেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি স্টেটে একশ ডিটেনশান সেন্টারে এ শিশুদেরকে রাখা হয়েছে।
বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি হচ্ছে- শিশুদেরকে ডিটেনশান সেন্টারে পাঠানো এবং বয়স্কদের অপরাধী হিসাবে গণ্য করে বিচারের সম্মুখীন করা। বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারবে না। শিশুরা বিচারের আওতাবহির্ভূত বিধায় তাদেরকে পিতামাতার কাছ থেকে বিছিন্ন করে দূরে রাখা হচ্ছে।
বর্তমানে ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে আটক শিশুরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একবার ফ্যামিলি সেপারেশন করা হলে, তা একত্রীকরণ এবং একসাথে ডিপোর্ট করা আইনগত জটিলতার কারণে অনেকটা দূঃসাধ্য ব্যাপার।
ট্রাম্প প্রশাসনের জিরো টলারেন্স প্রক্রিয়া এবং ইতিপূর্বে ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট জজদেরকে দেয়া যে প্রজ্ঞাপণের মাধ্যমে ১৯৯৭ সালের রিফিউজি সেটেলমেন্ট এ্যাক্টকে বাতিল করা হয়েছিলো, তা পুনঃরুদ্ধারই হচ্ছে প্রকৃত সমাধান।
লেখক পরিচিতি : এই প্রবন্ধটির লেখক মোহাম্মদ এন মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং নিউইয়র্কস্থ টরো ল সেন্টার থেকে আইনে এলএলএম ডিগ্রিধারী, তিনি নিউইয়র্কস্থ একটি ল ফার্মে ১৯৯৯ সাল থেকে কর্মরত আছেন। এ ছাড়াও তিনি নিউইয়র্কের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বিজ্ঞ প্লানিং বোর্ড-৯ এর সদস্য ফাস্ট ভাইস চেয়ারম্যান এবং ল্যান্ড এন্ড জোনিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯১০ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উপরোক্ত লিখাটি লেখকের সুদীর্ঘকালের ল ফার্মে কর্ম অভিজ্ঞতা ও ল স্কুলের শিক্ষা থেকেই লিখা। এটিকে লিগ্যাল এডভাইজ হিসেবে গ্রহণ না করে আপনাদের নিজ নিজ আইনজীবীর সহযোগিতা নিন। তিনি এখন থেকে নিয়মিত ঠিকানার পাঠকদের জন্য লিখবেন।