ঠিকানা রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রে আরো বেশি সংখ্যক অভিবাসী কর্মী প্রয়োজন। এ বিষয়ে একমত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তাদের মতে, করোনা মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক এই পুনরুদ্ধারের সময় শ্রমঘাটতি বিরাজ করছে দেশজুড়ে। এদিকে, লাখ লাখ বিদেশি কর্মী প্রক্রিয়াকরণে বিলম্ব দেশের শ্রম ঘাটতিকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। আইন প্রণেতা এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বলছে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইমিগ্রেশন সিস্টেমের কর্মহীনতার কারণে শ্রমবাজারে সংকট আরো বাড়ছে।
এজেন্সির সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত জুনের শেষের দিকে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের কাছে ১.৩ মিলিয়নেরও বেশি কর্মসংস্থান অনুমোদনের আবেদন মুলতবি ছিল। তার উপরে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন অভিবাসী কর্মসংস্থান-ভিত্তিক গ্রিন কার্ডের জন্য লাইনে অপেক্ষা করছে- যা তাদের স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেবে। অথচ বছরে মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার গ্রিন কার্ড পাওয়া যায়।
দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাস পেলে বিদেশি শ্রমের উপর চাপ আসে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা মহামারির কারণে তাদের কাজ চালাতে প্রয়োজনীয় কর্মী খুঁজে পাচ্ছে না। শ্রম বিভাগের তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বরের শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০.৪ মিলিয়ন চাকরির সুযোগ ছিল। ইউএস চেম্বার অব কমার্সের অভিবাসন নীতির ভাইস প্রেসিডেন্ট জন বেসেলিস বলেছেন, ‘প্রসেসিং সমস্যাগুলো বিশাল। এটি সবচেয়ে বিঘ্নিত জিনিস, যা আমি নিয়মিত কোম্পানির কাছ থেকে শুনি।’ বেসেলিস বলেন, ‘প্রসেসিং বিলম্ব সবধরণের কাজ ধীর করে দেয়। সুতরাং যখন তারা সময়মতো বিষয়গুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না, তখন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।’ ইউএসসিআইএস ফিল্ড সেন্টারে প্রক্রিয়াকরণ বিলম্বের কারণে কর্মসংস্থান অথোরাইজেশন অনুমোদন বা বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিদেশি নাগরিকরা কয়েক মাস ধরে অপেক্ষা করছেন। কিছু ক্ষেত্রে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই বিলম্ব আশ্রয়প্রার্থীসহ কিছু লোককে ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছে।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের স্টাফ অ্যাটর্নি এমা উইঙ্গার বলেন, ‘যারা নিজের এবং তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য চাকরি নিয়েছিল, এখন এই বিলম্বের কারণে তারা তাদের চাকরি হারাচ্ছে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই অর্থনীতিতে অবদান রাখছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিই প্রয়োজন এমন চাকরি পূরণ করছিলেন।’
উইঙ্গার ইউএসসিআইএস প্রক্রিয়াকরণে বিলম্বের জন্য একটি মামলায় আশ্রয়প্রার্থী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছেন।
এজেন্সিজুড়ে বিলম্ব ইউএসসিআইএসকে গ্রিন কার্ড ইস্যু করা থেকেও বাধা দিয়েছে। ফলে এ বছর হাজার হাজার কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এখন ডেমোক্র্যাটদের ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিল্ড ব্যাক বেটার আইন নিয়ে বিতর্ক চলছে। ডেমোক্র্যাটদের অনুমান, মোটামুটি ২ লাখ ৬২ হাজার পরিবার-ভিত্তিক এবং ডাইভারসিটি ভিসা স্লট ছাড়াও বিলের হাউস সংস্করণটি ১৯৯২ সালের অব্যবহৃত অভিবাসী ভিসাগুলো পুনরুদ্ধার করবে ও এক লাখ ৫৭ হাজার কর্মসংস্থানভিত্তিক ভিসা মুক্ত করবে, যা আবেদনকারীদের কাজ করার অনুমতি দেবে। এটি ড্রিমার্স এবং ফার্মওয়ার্কারসহ যারা ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন, এমন আনুমানিক ৭ মিলিয়ন অনথিভুক্ত অভিবাসীর জন্য অস্থায়ী সুরক্ষা এবং কাজের অনুমোদন প্রদান করবে। ডেমোক্র্যাটদের মতে, এ পদক্ষেপ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ‘ত্বরান্বিত’ করবে। আইনটির হাউস সংস্করণটি ইউএসসিআইএসকে সেই নতুন কেসগুলো প্রক্রিয়া করতে এবং প্রক্রিয়াকরণে বিলম্বের সমাধান করতে ২.৮ বিলিয়ন ডলার প্রদান করবে। আমেরিকান বিজনেস ইমিগ্রেশন কোয়ালিশন এ সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট এবং ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের কাছে একটি চিঠিতে লিখেছে, ‘অভিবাসী শ্রমিকরা বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি রোধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শ্রমিক ঘাটতির ফলে নির্মাণ বিলম্ব, উচ্চ উৎপাদন খরচ এবং নিম্ন তালিকার স্তর হচ্ছে, যা মূল্যস্ফীতির দিকে দেশকে পরিচালিত করে।’ কিন্তু অভিবাসন বিরোধী গোষ্ঠীগুলো ডেমোক্র্যাটদের বিলের বিধানগুলোকে কয়েক লাখ মানুষকে ‘সাধারণ ক্ষমা’ প্রদানের সমালোচনা করেছে এবং সতর্ক করেছে যে, পরিবর্তনগুলো আসলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।