ঠিকানা ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ‘নিষ্ঠুর’ নীতির ফলে বৈষম্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের সদ্য প্রতিবেদনে এ বিষয়ে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ট্রাম্পের নীতির ফলে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় অনেক কমে গেছে। গার্ডিয়ান।
ট্রাম্প লাখ লাখ মার্কিনীকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি এটি করেছেন। তারা খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে ধনীরা কাটাচ্ছে বিলাসিতাপূর্ণ জীবন। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফিলিপ আলস্টনের করা একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। আলস্টন জাতিসংঘের পক্ষে বিশ্বে অতিদরিদ্রের বিষয়টি নজরদারি করে থাকেন। তিনি এবার আমেরিকা সম্পর্কে বিপজ্জনক চিত্রটি তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, দরিদ্রদের শাস্তি ও ধনীদের পুরস্কৃত করার মাধ্যমে ট্রাম্প তার রাষ্ট্রীয় নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নি আয়ের লোকজন জীবন ধারণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রীরও সংস্থান করতে পারছে না। গার্ডিয়ানকে আলস্টন বলেন, জনকল্যাণমূলক খাতের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংস্থান করতে পারে না এই খাত মূলত তাদের জন্য। যখন আপনি প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেলেন তখন আপনি নিষ্ঠুরতার পথে পা বাড়ালেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, লাখ লাখ মার্কিনী আর্থিকভাবে ধ্বংসের মুখোমুখি অবস্থায়। এখন খাদ্য, ওষুধ, গৃহায়ন ভর্তুকি তুলে নেয়া হলে প্রান্তিক অবস্থানে থাকা বিশাল জনগোষ্ঠীর অবস্থা কঠিন হয়ে পড়বে। ধ্বংসের মুখোমুখি অবস্থা বলতে কি বোঝাচ্ছেন প্রশ্নের উত্তরে আলস্টন বলেন, খাদ্য ও ওষুধের তীব্র অভাব। যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্য পরিস্থিতি নিয়ে করা আলস্টনের প্রতিবেদনটি ১ জুন শুক্রবার প্রকাশিত হয়। চলতি মাসের শেষ নাগাদ এটি জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হবে।
আলস্টন গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি দরিদ্র এলাকা পরিদর্শন করেন। লস এ্যাঞ্জেলেসের স্কিড রাও থেকে আলাবামার দরিদ্র আফ্রিকান আমেরিকানদের বসতি এলাকাসহ ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার খনি শ্রমিকদের বসতি এলাকায় তিনি যান। ট্রাম্প ১৬ মাস হোয়াইট হাউসে আছেন। এ সময়ের সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কের ঝড় উঠতে পারে। ট্রাম্প কতটা বৈষম্য বাড়িয়েছেন সেটি নিয়ে দেশের মধ্যেই রাজনৈতিক বিতর্ক হতে পারে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীবিদ জোসেফ স্টিগলিৎস গার্ডিয়ানকে বলেন, অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বৈষম্য উত্তরাধিকার সূত্রেই ট্রাম্প প্রশাসন পেয়েছে। তবে ট্রাম্প এগুলো সমাধান না করে আরও তীব্রতর করে তুলেছেন। তিনি এখানে কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন। যেমন, কর্র্পোরেট কর হ্রাস।
গত ডিসেম্বরে ট্রাম্প ১৫ ট্রিলিয়ন কর ছাঁটেন। স্টিগলিৎস প্রশ্ন করেন, আপনি কি ভাবতে পারেন যে দেশে মধ্যবিত্ত ও নি আয়ের লোকদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ক্রমাগত কমছে সেখানে ধনীক শ্রেণী ও কর্পোরেট কর কমিয়ে কি অর্জন করা সম্ভব। লাখ লাখ মার্কিনীকে স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা বঞ্চিত করা হয়েছে। জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকও তার প্রতিবেদনে কর ছাঁটাই ও বিপুলসংখ্যক মার্কিনীর জীবন কঠিন করে তোলার জন্য ট্রাম্প ও রিপাপলিকান দলের সমালোচনা করেছেন। আলস্টন বলেছেন, জনকল্যাণমূলক খাত থেকে ভর্তুকি তুলে নেয়ার ফলে যে কেবল দরিদ্ররাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণীকেও এর মাসুল গুনতে হবে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ফেডারেল রিজার্ভের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা তুলে নেয়ায় প্রতি ১০ জনে ৪ মার্কিনীর পক্ষেই এখন নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।