যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে পরাণ

প্রবাসী বাংলাদেশি মহলে আলোড়ন

ঠিকানা রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রে ৭০টি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে বহুল আলোচিত বাংলা সিনেমা পরাণ। ইতিমধ্যে ৬০টি হল চূড়ান্তও হয়ে গেছে। বাকিগুলোর চেষ্টা চলছে। সিনেমাটি এ-যাবৎকালে আমেরিকায় নিয়ে আসা বাংলা সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করবে বলে প্রত্যাশা করছেন বায়োস্কোপ ফিল্মস ইউএসএর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আকতার হামিদ রাজ। তার মতে, এটি ভীষণ আলোচিত ও চমৎকার একটি সিনেমা। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগেই এটি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করেছে। এ পর্যন্ত যে ২৬টি সিনেমা এখানে এনেছেন, তার মধ্যে পরাণ সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করবে বলে তার আশা। এর আগে দেবী সিনেমাটি সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছিল। পরাণ দেবীকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে রাজের বিশ্বাস।
রাজ হামিদ নামেই পরিচিত আকতার হামিদ রাজ একজন হসপিটালিটি কনসালট্যান্ট। তার স্ত্রী নওসেবা রুবানা রশিদ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে উচ্চ পদে কর্মরত আছেন। দুজনে মিলে ২০১৭ সালে পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশ ও কলকাতা থেকে সিনেমা এনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন থিয়েটারে প্রদর্শন করবেন।
রাজ হামিদ বলেন, বাংলাদেশে মনপুড়া সিনেমাটি অনেক ব্যবসাসফল হয়েছিল। কিন্তু সিনেমাটি আমরা দেখতে না পারায় খুব আফসোস হচ্ছিল। তখন আমরা চিন্তা করি, বাংলাদেশের ছবি এখানে এনে প্রদর্শন করব। সেই হিসেবে আমরা প্রথমে ভুবন মাঝি সিনেমাটি এখানে আনি ও দুটি হলে প্রদর্শন করি। তখন থেকেই যাত্রা শুরু। প্যান্ডামিকের সময় দুই বছর সিনেমা আনা সম্ভব হয়নি। কারণ সব বন্ধ ছিল। এখন আবার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, এখানকার দর্শকেরা হাই ডেফিনেশনের সিনেমা দেখে। এ জন্য আমাদেরকে তাদের ভালো লাগার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয়।
রাজ হামিদ আরো বলেন, আমরা শখের বশেই বায়োস্কোপ ফিল্মস ইউএসএ প্রতিষ্ঠা করেছি। ভুবন মাঝি দিয়ে দুটি শহরে যাত্রা শুরু করেছিলাম। এখন ৫৫টি শহরে সিনেমা মুক্তি দিচ্ছি। মূলত ডিস্ট্রিবিউশন সমস্যার কারণে এখানে সিনেমা আসত না। আমরা যখন কাজ শুরু করলাম, তখন দেখলাম এটি অনেক কঠিন কাজ নয়। আমরা প্রযোজকদের পুরো অর্থ দিয়েই এখানে সিনেমা আনি।
তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে যেসব ছবি এনেছি, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেবী, ভুবন মাঝি, ফাগুন হাওয়া, এক যে ছিল রাজা, বিজয়া, বিনি সুতোয়, মিশন এক্সিম, যদি একদিন, সাপলুডু, স্ফুলিঙ্গ, রিক্সা গার্ল প্রভৃতি। আমরা রিক্সা গার্ল সিনেমাটি ৫৫টি শহরে দেখিয়েছিলাম।
রাজ বলেন, আমরা প্রডাকশনেও গিয়েছি। কলকাতার নতুন একজন মেয়ে পরিচালককে দিয়ে সিনেমা তৈরি করেছি। এটিও এখানে নিয়ে আসব। কৌশিক শংকর দাসের পরিচালনায় বাংলাদেশে একটি সিনেমার কাজ ১৯ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে। এটি নির্মাণের পর এখানে নিয়ে আসব। আমরা যুক্তরাষ্ট্রেই বাংলা সিনেমা তৈরি করার চিন্তাভাবনা করছি, যাতে এখান থেকে বাংলা ছবি তৈরি করে দেশে পাঠাতে পারি। আমাদের তৈরি সিনেমা বাংলাদেশের দর্শকেরা মোবাইল ফোনেও দেখতে পারবেন। আমরা চাইছি সিনেমার বাজার এখানে ও দেশে আরো প্রসারিত হোক। চেষ্টা করব ওয়েব সিরিজ ও টেলিফিল্মের মতো ৮০ মিনিটের মধ্যে সিনেমার দৈর্ঘ্য ধরে রাখতে।
রাজ হামিদ বলেন, আমরা কলকাতার কয়েকটি সিনেমাও এখানে এনেছি। এর মধ্যে সর্বশেষ সিনেমা ছিল ‘অপরাজিত’। ছবিটি বেশ ভালো চলেছে। এটি সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী তৈরি করার সময়ে করেছেন। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী ছবিটি ১৯৫৫ সালে ম্যানহাটনে প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল। এ কারণেই আমরা অপরাজিত সিনেমাটির প্রিমিয়াম প্রদর্শনী করি ম্যানহাটনে।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী বায়োস্কোপ ফিল্মস ইউএসএর নামকরণ করেছিলেন। এরপর আমরা বায়োস্কোপ ফিল্মস কানাডায় আত্মপ্রকাশ করেছি। এখন বায়োস্কোপ ফিল্মস দুবাই করতে যাচ্ছি। এ ছাড়া আমেরিকার যত স্টেটে ছবি নিয়ে যাচ্ছি, সবখানেই একটি করে বায়োস্কোট ফিল্মস করা হচ্ছে। আমাদের ফিল্মে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঘটনাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সিনেমা একটি অনেক বড় শক্তিশালী গণমাধ্যম। আমেরিকায় নারীদের পিছিয়ে থাকাসহ বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে ফিল্ম। বাংলাদেশি সিনেমা এখানে প্রদর্শন করার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করছি, আস্তে আস্তে এখানে বাংলা সিনেমার একটি বড় বাজার হবে।
তিনি বলেন, আমরা মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার এমপিএ নিয়েছি। আমাদেরটি রেজিস্টার্ড ও সদস্য কোম্পানি। এখানে যে ফরম্যাটে সিনেমা আনি, এটি সিনেমা হল ছাড়া অন্য কোথাও প্রদর্শন করার সুযোগ নেই। সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই আমরা সিনেমা নিয়ে আসি। যে ছবি আমরা রিলিজ দিই, এর একটি কোয়ালিট কন্ট্রোল করেই রিলিজ দিই।
রাজ হামিদের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। বড় হয়েছেন ঢাকায়। তার নানাবাড়ি রংপুরে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। বিশিষ্ট অভিনেত্রী তারানা হালিম তার ছোট বোন। তার স্ত্রী নওসেবা রুবানা রশিদও বায়োস্কোপের একজন প্রতিষ্ঠাতা। তাদের দুই কন্যা। একজন একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, আরেকজন কলেজে লেখাপড়া করছেন।