যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক বহিষ্কার

ঠিকানা ডেস্ক : আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক বহিষ্কারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আমেরিকা থেকে রাশিয়ার ৬০ কূটনীতিককে বহিষ্কারের প্রেক্ষিতে রাশিয়াও সে দেশ থেকে আমেরিকার ৬০ কূটনৈতিককে বহিস্কার করেছে।

আমেরিকা-রাশিয়ার দৃষ্টিতে অবশ্য তারা সবাই ‘গুপ্তচর’। একই সঙ্গে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অবস্থিত রাশিয়ার কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশও দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাজ্যে এক সাবেক রুশ গোয়েন্দার ওপর নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগের অভিযোগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে গত ২৬ মার্চ, সোমবার, এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

একই অভিযোগে লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্টোনিয়া, পোল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা গত ২৬ মার্চ জানান, বহিষ্কার করা ৬০ কূটনীতিককে আগামী সাত দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। তাঁদের মধ্যে ৪৮ জন কাজ করেন ওয়াশিংটনের রুশ দূতাবাসে। বাকি ১২ জন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে রুশ কূটনীতিক হিসেবে কর্মরত।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ন্যাটো সদস্য এবং সারা বিশ্বের সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে এ ব্যবস্থা নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেনের মাটিতে সামরিক গ্রেডের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে রাশিয়া বিশ্বকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়েছে। এরই জবাবে এ ব্যবস্থা নেয়া হলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকের (২৬ মার্চ) ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে আরো নিরাপদ করবে। কারণ এ ব্যবস্থা আমেরিকান এবং আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ কোনো ব্যবস্থা গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে নেয়ার ব্যাপারে রাশিয়ার সক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের সহযোগী এবং অংশীদাররা রাশিয়াকে একটি বার্তাও দিয়েছে যে মস্কোকে এ ধরনের তৎপরতার জন্য পরিণতি ভোগ করতে হবে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে সহযোগিতায় প্রস্তুত। তবে রাশিয়া সরকারের আচরণে পরিবর্তন এলেই তা সম্ভব হতে পারে।’
এ ছাড়া সিয়াটলের রুশ কনস্যুলেটও বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে স্যান্ডার্স বলেন, রুশ কনস্যুলেটের পাশেই যুক্তরাষ্ট্রের কিটস্যাপ সাবমেরিন ঘাঁটির অবস্থান। কনস্যুলেট থেকে ওই ঘাঁটির ওপর নজরদারি করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কয়েক দিন আগেই পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে অভিনন্দন জানান ট্রাম্প। টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানানোর সময় দুই নেতার মধ্যে ব্রিটেনের ঘটনাটি নিয়ে কোনো কথা হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, কূটনীতিক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ‘পুরোপুরি প্রেসিডেন্টের’। শুরু থেকেই তিনি এ ব্যাপারে অবহিত। গত সপ্তাহ থেকেই এ নিয়ে তিনি তাঁর টিমের সঙ্গে এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।

এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ জানায়, রুশ কূটনীতিকদের তারাও বহিষ্কার করতে যাচ্ছে। তবে এর সংখ্যা বা সব সদস্যই বহিষ্কার করবে কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি। গত ২৬ মার্চ লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্টোনিয়া ও পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নিজ নিজ দেশে অবস্থিত রুশ রাষ্ট্রদূতকে এ উদ্দেশ্যেই ডেকে পাঠায়।

এদিকে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত মার্কিন সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যতটুকু সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, এ সিদ্ধান্তের ফলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া, জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আমেরিকার সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ ও ‘অন্যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন। সূত্র : সিএনএন, এএফপি, বিবিসি।