যুক্তরাষ্ট্র হতে পারে বাংলা সিনেমার লাভজনক বাজার

ঠিকানা রিপোর্ট : বাংলাদেশের সিনেমা একসময় কঠিন অবস্থা পার করেছে। এখনো অনেক কষ্ট করে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহ সংকট যেমন আছে, সিনেমার নির্মাণসংখ্যাও কমেছে। বিভিন্ন কারণে নির্মাতা, প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পীসহ কলাকুশলীদের অনেকেই এই জগৎ থেকে বিদায় নিয়েছেন। ভালো সিনেমা না হওয়ার কারণে অথবা ভালো কাজ করতে না পেরে অনেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তবে এও ঠিক, অনেক নতুন নতুন মুখ যোগ হয়েছে এই অঙ্গনে। নির্মাতা, প্রযোজনা, পরিবেশনা, প্রতিষ্ঠানসহ শিল্পী, কলাকুশলীরাও যোগ হয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করেন, যত সংকটই থাক না কেন, বাংলা সিনেমা টিকে থাকবে এবং এগিয়ে যাবে। মাঝেমধ্যে সংকট দেখা দিলেও সেটি কাটিয়ে উঠতে হবে। সিনেমা-সংশ্লিষ্টরা এ ক্ষেত্রে আরো বেশি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনের তাগিদ দিয়ে থাকেন।
কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি ছবি পরপর দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে। পেয়েছে পুরস্কারও। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শন করা হয়েছে কয়েকটি ছবি। এসব সিনেমা দেশ-বিদেশে প্রশংসা পাওয়ায় দেশের মতো প্রবাসেও এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রবাসে বসবাসরতদের মধ্যে বাংলা সিনেমার দর্শক তৈরি হচ্ছে। তবে যত সংখ্যক ছবি দেশে আলোচনায় আসছে ও প্রশংসা পাচ্ছে, এর সবগুলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শনীর জন্য আসছে না। কিছু কিছু আসছে। তবু অল্পবিস্তর আসার মধ্য দিয়েও তৈরি হচ্ছে দর্শকদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই আগ্রহ ধরে রাখার পাশাপাশি বিদেশে বাংলা সিনেমাকে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে নির্মাতা ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এর বাজার তৈরি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, মিশিগান, মিনেসোটা, ক্যালিফোর্নিয়া, ফিলাডেলফিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্টেটে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। ধারণা করা হয়, সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি থাকেন নিউইয়র্কে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সিনেমার বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে উঠতে পারে। এতে একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রে দর্শক তৈরি হবে, অন্যদিকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো আয়ও করতে পারবে।
বাংলাদেশ থেকে দেবী, ভুবন মাঝি, ফাগুন হাওয়া, এক যে ছিল রাজা, বিজয়া, বিনি সুতোয়, মিশন এক্সিম, যদি একদিন, সাপলুডু, স্ফুলিঙ্গ, রিক্সা গার্ল, গলুই, পাপ-পুণ্য, হাওয়া, ঊনপঞ্চাশ বাতাসসহ বিভিন্ন সিনেমা যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়। দু-একটি ছাড়া প্রতিটি সিনেমা ভালো ব্যবসা করে। এখন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই সিনেমা তৈরির। বাংলাদেশের সিনেমা সুপারস্টার কিং খান শাকিব খান বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সিনেমা তৈরি করছেন। তিনি ইতিমধ্যে একটি সিনেমা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। তিনি এখানে বেশ কয়েক মাস সিনেমার শুটিংও করেছেন।
শাকিব খান ঠিকানাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমি খুবই আশাবাদী, এ দেশে বাংলা সিনেমা হলে প্রদর্শিত হচ্ছে। এখানে বাজার রয়েছে। এখানে বাংলা ছবির বাজার তৈরি হওয়ায় আমার খুবই ভালো লাগছে। তবে এখানে বাজার প্রসারিত করতে হলে কাজ করতে হবে।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বাংলা সিনেমা ‘পরাণ’ দেশ-প্রবাসে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে। ছবিটি ইতিমধ্যে ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করেছে। সিনেমাটি আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাবে। সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লাইভ টেকনোলজির অন্যতম পরিচালক ইয়াসির আরাফাত ঠিকানাকে বলেন, ইন্টারন্যাশনালি পরাণ বিভিন্ন দেশে মুক্তি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এটি প্রদর্শন করতে যাচ্ছে বায়োস্কোপ ফিল্ম। আশা করছি, যুক্তরাষ্ট্রেও ছবিটি দারুণ জনপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল হবে। দেশের সিনেমার বাজার বিদেশে তৈরি হলে নির্মাতা এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো সিনেমা নির্মাণে আরো বেশি আগ্রহী হবে।