ঠিকানা অনলাইন : যেখানে প্রয়োজন, কেবল সেখানেই শক্তি প্রয়োগ করা হয় দাবি করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিদায়ী মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, আইন যে ক্ষমতা র্যাবকে দিয়েছে, তার ভেতরেই সদস্যরা কাজ করেন।
আসছে ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব নিতে যাওয়ার আগে আজ ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে আসেন মামুন। সেখানে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধজ্ঞা নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নিষেধাজ্ঞার কারণেই ইদানিং র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে কিনা। জবাবে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে র্যাবের নেতৃত্ব দিয়ে আসা মামুন বলেন, তিনি তা মনে করেন না।
“আমাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কেন আমরা দাঁড়াব? যখন আমরা আক্রান্ত হই, মাদক, অস্ত্র উদ্ধার, মানবপাচারকারী যখন আমাদের উপর আক্রমণ করে, তখন আমরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আইন যে ক্ষমতা র্যাবকে দিয়েছে, তা আমরা ক্রস করি না।
“যেখানে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই আমরা শক্তি প্রয়োগ করি। একটা লোক দৌড় দিল, ধাক্কা দিল, তাকে গুলি করে দিতে হবে? সিচুয়েশন যা ডিমান্ড করে, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।”
‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত ডিসেম্বরে র্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর।
র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক পুলিশের বিদায়ী আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল।
র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন বলেন, “আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করি। অপরাধীরা যে কত কুখ্যাত, তাদের সামনে যা আসে, সব বাধা উপেক্ষা করে তারা অপরাধ সংঘঠিত করতে চায়। আমরা যখন তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াই, তখন অপরাধীরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে অপরাধ সংঘঠিত করতে চায়।”
‘ক্রসফায়ার’ বা ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেই পুরনো ব্যাখ্যা এ সংবাদ সম্মেলনেও দেন নতুন আইজিপি মামুন।
তিনি বলেন, “যখনই অপরাধ সংঘঠিত হয়, তখন কিন্তু আমরা (র্যাব) থাকি না। প্রথমে থানা পুলিশ আসে। ম্যাজিস্ট্রেট আসে। সুরতহাল হয়। মরদেহ মর্গে নেওয়া হয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। থানায় মামলা হয়। ওপেন কোর্টে বিচার হয়। দুই পক্ষের বক্তব্যের ভিত্তিতে আদালত সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেয়।
“এসবের মধ্যে র্যাবের কোনো ভূমিকা থাকে না। সরকার গণমাধ্যম এসব মনিটরিং করে। এখানে র্যাবের কতোটুকু ভূমিকা আছে সেটা আমারো প্রশ্ন। আমরা যা করি স্বচ্ছতার সাথে করি।”
দুই বছর ৫ মাস র্যাবের দায়িত্ব সামলানো এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন অভিযানে তাদের সমস্যরাও আহত হন, প্রাণহানি-অঙ্গহানিও ঘটে।
“যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চিকিৎসা আমরা করেছি। আমাদের দায়িত্ব চ্যালেঞ্জিং, যে কারণে আমার অনেক সহকর্মীর চাকরি পর্যন্ত হারায়। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতেও র্যাবের প্রতিটি সদস্য সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।”
মাদকের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নও রাখা হয়েছিল বিদায়ী ডিজির কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কেবল র্যাবের নয়, কেবল বাংলাদেশেরও নয়; বিশ্বজুড়েই এ যুদ্ধ চলছে।
“আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজের কারণে কারাগারে যেসব আসামি, তার বেশিরভাগই মাদকের। প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পর যেখানেই মাদক, সেখানেই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু র্যাব নয়, সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই ধরছে।”
তিনি বলেন, মাদকের বিস্তার বন্ধে সচেতনতা দরকার সবার ঘর থেকেই। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ।
“সন্তান কোথায় যাচ্ছে, সেটার খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদের। ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই একটার সাথে আরেকটা জড়িত। এটা বন্ধে কাজ করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে নেই– এটা বলার অবকাশ নেই।
“যেখানেই খবর পাচ্ছি, সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা যদি মাদকের বিরুদ্ধে ব্যর্থই হতাম, তাহলে কারাগারে এত মাদকের আসামি থাকত না। সবাই সোচ্চার হলে অচিরেই মাদকমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা দেখতে পাব বলে বিশ্বাস করি।”
বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে সমালোচনা রয়েছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্ব পাওয়া মামুনকে।
উত্তরে তিনি বলেন, “নির্বাচনকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করা হয়। কারো বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।”
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমি মনে করি, অতীতে যেমন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পেরেছি, তেমনি অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীতেও আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
ঠিকানা/এসআর