মোস্তফা কামাল : একেকজন কতো নিচে নামতে পারেন, কতো নোংরা কাজে অভ্যস্ত সদ্য পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের উছিলায় নতুন করে কারো কারো জানা হয়েছে মাত্র। অপকর্ম ঢাকার দাওয়াইও আছে এই মহারথীদের। জঘন্য-জঘন্য কুকর্মকেও ‘ব্যক্তিগত’ বলে ধামাচাপা দেয়ার এন্তার সুযোগ তাদের। তাহলে গোলমাল বাধে কেন? প্রশ্ন এখানেই। ভাগের বা যোগের অমিলেই গোলমাল। কারোটা ধামাচাপা থাকে। কারোটা ফাঁস হয়ে যায়। এতোসব গুণের সুবাদেই তারা নেতা, এমপি, মন্ত্রী, আঁতিপাতি। মুরাদও নানা গুণে ছাত্রনেতা, এমপি, প্রতিমন্ত্রী হতে হতে সুপারম্যান পর্যায়ে চলে গেছেন! মানুষ কি হয়েছেন? বাদবাকি অন্যদের ভাষাও কি মুরাদের চেয়ে বেশি উন্নত?
মানুষ হয়েছেন, কি হননি- সেটা আরেক প্রশ্ন। কথায় কথায় বাবা মতিউর রহমান তালুকদারের সন্তান পরিচয় দেয়া এই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকেও রেহাই দেননি। বলেই দিয়েছেন, তিনি যা করেন-বলেন প্রধানমন্ত্রী সব জানেন। সব প্রধানমন্ত্রীর নলেজে আছে। মুরাদের বিকৃত-নষ্ট অসভ্য স্বভাব, নোংরা ভাষা কি কখনো দোষ হিসেবে দেখা হয়েছে? না-কি গুণ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে?
এসব গুণ না থাকলে মুরাদ এদ্দূর আসতে পারতেন কি-না, কে জানে! হয়তো এমন আলোচনায়ও আসতে পারতেন না। তিনি ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে আঘাত দিয়ে উন্মাসিক আচরণ করেছেন। ডাক্তারদের নিয়ে নিম্নমানের কথা বলেছেন। কন্যাসম জাইমা বা পিতৃতুল্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে যা বলেছেন, সেগুলো কোনো মানের মধ্যেই পড়ে না। এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নোংরা মন্তব্য করে নিজের নোংরা চরিত্র জানান দিয়েছেন। চিত্রনায়িকা মাহির সাথে যেভাবে যা বলেছেন, এগুলো তিনি ছোটবেলা থেকেই করে আসছেন। আজন্ম কুৎসিত-কদর্য-বিকৃত অমানুষ কি মুরাদ একাই? এই প্রজাতির আর কেউ নেই? এখন ঘটনাচক্রে একজন মুরাদকে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দিলেই পূণ্যতা এসে গেল? তিনি মন্ত্রীত্বের জন্য অশোভন? এমপিত্বের জন্য শোভন? মন্ত্রীত্বের সুযোগ নিয়ে পুলিশ, ডিবি, এনএসআই, এসবি ইত্যাদি বাহিনীর ভয় দেখিয়ে আরো কতো নারীকে ‘বাইন্ধা’ তিনি হোটেলে নিয়েছেন, সেগুলো তদন্তের দরকার নেই? তার সহযোগী এবং সাপ্লাইয়ারদেরও কি চেনার দরকার নেই?
মানসিক ভারসাম্যহীনতা আর নির্লজ্জতাই এদেশে মন্ত্রী হবার মূল যোগ্যতা? মানুষের এতো দূর্ভোগ! খুন, ধর্ষণ, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি মানুষের জীবনকে ধুঁকে ধুঁকে মারছে। সেখানে এইসব রাজনৈতিক বিষয়কে পাশ কাটিয়ে এই নোংরা চরিত্রের লোকগুলো রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে বিকৃত উল্লাস করছে! বিষ্ঠা কিন্তু বিষ্ঠাই। কাপড় ধুবেন, না বিষ্ঠা লাগিয়ে রাখবেন- সেই সিদ্ধান্ত কাপড়ের মালিকের। এই প্রতিমন্ত্রী হঠাৎ সরব নন। সেগুলো ফাঁস হওয়ার পেছনের কারণ নিশ্চয়ই আছে। তিনি তার পাবিবারিক শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত রুচির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। কিন্তু তার ব্যক্তিগত রুচি থেকে যে কথাগুলো তিনি বলেছেন, সেগুলো কি কেবলই ব্যক্তিত্বের? না-কি যেমনে নাচাও, তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।