ঠিকানা রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে স্পষ্টতই বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ এবং নিয়মের কিছু অসুবিধাও আছে। এসব নিয়ম প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে অফিস ছাড়ার পরেও তার পাশ ছাড়ে না। কর্ম থেকে অবসর নেয়া অবশ্যই একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলোর একটি। প্রায় সমগ্র
বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকলেও আপনাকে একজন সাধারণ নাগরিকের মতো সাদাসিদে জীবনে ফিরে যেতে হয়। মানুষের জীবনে অবিরাম পরিবর্তন হয়। কিন্তু একবার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষদের একজন হওয়ার পরে, সত্যিকার অর্থে আপনি কখনো আপনার পুরোনো জীবনে পুরোপুরি ফিরে যেতে পারবেন না। একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা না থাকার অর্থ এই নয় যে তিনি সংবেদনশীল তথ্য এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বহন করেন না। তাই প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের রক্ষা করার অর্থ মূলত সেই তথ্যগুলোকে রক্ষা করা যা রাষ্ট্রের অখণ্ডতার সাথে আপস করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫৮ সালে ‘ফরমার প্রেসিডেন্ট অ্যাক্ট’ প্রবর্তিত হয়। এই আইনটি প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আজীবন সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও এটি বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ রয়েছে যা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা তাদের অফিস থেকে ফিরে আসার পরে করতে পারেন না। যেমন :
দুই মেয়াদে নির্বাচিত একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তৃতীয়বার এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। এটি আইনের ২২ তম সংশোধনী হিসেবে সংবিধানে এসেছে। সহজ কথায়, একজন প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদে দায়িত্ব¡ পালন করে থাকলে তিনি আইনগতভাবে আবার এ পদের জন্য নির্বাচন করতে পারবেন না। এর অর্থ হলো সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামা পরপর দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকায় আইনত আবার এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট খোলা রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবেন না। এই সংশোধনী সম্ভবত জেএফ কেনেডির মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পরে এসেছে।
একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ধরণ বেছে নিতে পারেন না। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ধরণ বেছে নেওয়া বা তারা যেকোনো ধরণের একটি চান কিনা তা প্রাক্তন প্রেসিডেন্টর উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ মৃত প্রেসিডেন্ট কি ধরনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পছন্দ করতেন সেব্যাপারে অবিলম্বে পরিবার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদি পরিবার একটি রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নেয়, সেক্ষেত্রে রাজ্য বিভাগ খরচসহ অন্যান্য দায়িত্ব গ্রহণ করে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের বাধ্যতামূলকভাবে ভ্রমণ করতে হবে। তারা অফিস ছাড়ার পরেও যে দায়িত্ব¡ পালন করেন তার মধ্যে একটি হলো ভ্রমণ। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তাদের দায়িত্ব¡ পালন করে দেশের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ভ্রমণ করে থাকেন। তাদের জন্য ১ মিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাজেট রয়েছে যা তারা এ খাতে ব্যয় করতে পারেন। তাদের স্ত্রীদের বার্ষিক ভ্রমণ বাজেট ৫০ হাজার ডলার। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরাও কূটনৈতিক পাসপোর্টের অধিকারী, যা তাদের বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য আবেদন করার অসুবিধাকে বাইপাস করতে দেয়।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের এখনো জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠকে আসতে হয়। প্রজ্ঞা এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ রাজনৈতিক পরামর্শের জন্য অতীতের প্রেসিডেন্টদের দিকে তাকানোর প্রথা রয়েছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা নিয়মিতভাবে জাতীয় নিরাপত্তা ব্রিফিংয়ে যোগদান করেন যার ফলে বর্তমান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে অবগত থাকেন। তারা নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে এবং পরামর্শ দিতে পারেন বা প্রয়োজনে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এটির জন্য অনুরোধ করতে পারে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা তাদের নিজস্ব স্মার্টফোন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস কিনতে পারেন না। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের রাষ্ট্র-অনুমোদিত ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়