যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হাসিনার গুরুত্ব

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেনের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের স্বাধীনতার শুভেচ্ছা বার্তা বিএনপিকে হতাশ করেছে। অন্যদিকে সরকার ও নির্বাচন কমিশন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যা বিশ্ব মোড়লকে প্রভাবিত করছে এবং স্থানীয়ভাবে জনসাধারণের মনেও নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখছে। এ অবস্থাটা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ভোটার সাধারণের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে। পাশাপাশি সংকট তীব্রতর করছে
বিএনপির জন্য। কূটনৈতিক সূত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মার্কিন প্রশাসন থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হয়। বাংলাদেশেও বরাবর তা হয়েছে। এবার উল্লেখযোগ্য মাত্রা যোগ হলো এতে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বয়ং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বরাবরই মার্কিন প্রশাসন থেকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন বার্তা পাঠানো হয়। এবার এর উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হলো। মার্কিন প্রশাসন ও শীর্ষ নেতৃত্বের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন সরকারকে নতুন শক্তি জুগিয়েছে। আর মুখ্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে হতাশ করেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পক্ষে, বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে মার্কিন সামরিক তৎপরতার মাশুল দিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন! বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের মন জয়ের চেষ্টা করছে তারা। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ সামরিক মহাশক্তিধর চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বৈরিতার পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক, ভৌগোলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশকে হাতে রাখার পরিকল্পনা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের যাবতীয় তৎপরতা হতে পারে। সরকারপ্রধান, সরকার ও জনগণের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ভূমিকা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে হতাশ করেছে। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে উন্নত সম্পর্ক গড়ে তুলতে নানাভাবে ভূমিকা রাখছেন। বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে আস্থাশীল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ব্যাপক তৎপরতাও চালান।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের সামরিক গুরুত্ব অনেক বেশি। চীনের বাংলাদেশের সঙ্গে আস্থাশীল উন্নত সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। চীন ওয়ান বেল্ট নীতিতে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ যাতে এতে যুক্ত না হয়, সে জন্য তৎপর মার্কিন প্রশাসন। তারা চায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতির পক্ষে বাংলাদেশ অবস্থান নিক। সামরিক জোটে শরিক হওয়া ছাড়া অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক, সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অবস্থানের নীতির প্রশংসা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যে রকম ক্রমবর্ধমান হারে চীন-মার্কিন বৈরিতা চলছে, তা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রত্যাশা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শেখ হাসিনা চীনের শীর্ষ নেতৃত্বের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত। ভারত-চীন সম্পর্কে বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে উন্নত সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা গভীর প্রশংসার চোখে দেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
অভ্যন্তরীণভাবে জামায়াতের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের দুর্বলতা রয়েছে। জামায়াতের প্রতি সরকারের রোষ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপির প্রতি তাদের দুর্বলতা থাকলেও দলটির নেতৃত্বহীনতা, নানামুখী সীমাবদ্ধতা বিদেশিদেরও হতাশ করছে। তার পরও সরকারের ওপর কার্যকর চাপ রাখার জন্য বিএনপিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করেন।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ও সরকার দৃশ্যমানভাবে বিভিন্ন কর্মতৎপরতা চালাচ্ছে, যাতে ভোটার সাধারণের পাশাপাশি বিদেশিদের মধ্যেও আস্থার মাত্রা বাড়ছে। বিএনপির সঙ্গে সংলাপের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব তারা প্রশংসার চোখে দেখেছে। সিইসির প্রস্তাব বিএনপি কর্তৃক প্রত্যাখ্যানকে তারা সুনজরে দেখেনি। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিলে সর্বনিম্ন দুই বছর ও সর্বোচ্চ সাত বছর সাজা প্রদানসহ সংশোধিত নির্বাচনী ব্যবস্থা বিদেশিদেরও সন্তুষ্ট করেছে। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার, নির্বাচন কমিশন আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যা দেশি-বিদেশিদের প্রশংসা কুড়াবে বলেই সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।