যে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনার নির্ঘুমে বাঁচে

মুক্তারা বেগম নদী :

পৃথিবীর পথে হাঁটতে গেলে পায়ের তলায় খানিক অবলম্বন লাগে। তাই তুমি যখন ভালোবেসে কাছে ডাকলে, হাত বাড়ালে, আমিও পারলাম না তোমাকে ফিরিয়ে দিতে। তোমাকে ভালোবেসেই জেনেছিলাম, ভালোবাসায় কত্ত সুখ, তেমনি তোমাকে হারিয়েই জেনেছি ভালোবেসে দুঃখ পেলে কতটা পোড়ায় এই মন। তোমার জন্যই জেনেছি ভালোবাসা আর বিরহের কত্ত রং, কতটা পুড়লে সোনা খাঁটি হয় জানি না কিন্তু তোমার দেওয়া দুঃখের অনলে পুড়ে আমার আকুলতা বেড়েছিল বাঁচার আর তোমাকে একান্ত করে কাছে পাবার। আগুনে পুড়লে কষ্ট হয় কিন্তু ভালোবাসার অনলে না পুড়লে জানা যায় না তাতেও যে কত সুখ আর তাই পুড়ব জেনেও অনলেই ঝাঁপ দিয়েছিলাম, পুড়তেও যে ভালো লেগেছিল।

মাঝেমধ্যে রাতে ঘুম ভেঙে যায়, তীব্র পিপাসায় বুক ফেটে যেতে চায়। উঠি বসি, হাতের কাছে জল খুঁজে বেড়াই, কখনো কখনো পেলে এক চুমুক খাই, না পেলে ক্লান্ত হয়ে বসে থাকি। মাঝেমধ্যে চলে যাই খোলা ছাদে। খোলা ছাদ, বিশাল আকাশ, নির্জন, বিবর্ণ রাত আর আমি। সবকিছু মিলে কেন যেন কোনো কিছুতেই আর আগ্রহ পাই না, ঘুমাতে ইচ্ছে করে না। তাই বিছানাও টানে না তখন। নিস্তব্ধ রাত আরো গাঢ় হতে থাকে। রাতের নির্জনতা না ভেঙেই একসময় দু’চোখ ভরে ওঠে জলে। বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে যায়।

বেশ তো ভালো ছিলাম আমি, আমার নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্বকে নিয়ে। ছিল না কোনো চাওয়া-পাওয়া, ছিল না কোনো অভিমান-অভিযোগও। অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে ভালোই ছিলাম, জানা ছিল না কারও কাছে চেয়ে না পাওয়ার অনুভূতিটা কেমন। আজকাল কেমন যেন হয়ে গেছি, কোনো কিছুতেই আর মন বসে না। তীব্র ভালো লাগার জায়গাগুলোতে জেগেছে প্রচণ্ড অনীহা। আমার শূন্যতা এমনই গণনাহীন। আমি নেই, জানি তুমিও বয়ে চলো খুব গভীরে নিঝুম দ্বীপের গোপন হাতছানির মরীচিকাকে ভালোবেসে এমনই নিদ্রাহীন। অনন্ত অক্ষয় হৃদয় পঙ্্তিতে দৃশ্যহীন রঙের আঁকড়ানো ক্যানভাস।