রক্ষণশীল কাভানগ সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারপতি

ফেডারেল আপিল কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানগকে সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর নেওয়া বিচারপতি অ্যান্থনি কেনেডির স্থলাভিষিক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার (৯ জুলাই) রাতে তার নাম ঘোষণা করেন তিনি।
সর্বোচ্চ মার্কিন আদালত সুপ্রিম কোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও আটজন বিচারপতি নিয়ে গঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট মনোনীত বিচারপতিদের নিয়োগ দেয় সিনেট। একবার নিয়োগ দেওয়ার পর পদত্যাগ, অবসর বা অভিশংসন ছাড়া ওই বিচারপতিরা আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সম্প্রতি বিচারপতি অ্যান্থনি কেনেডি অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর নতুন বিচারপতি নিয়োগের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সোমবার (৯ জুলাই) রাত ৯টার দিকে হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুম থেকে মনোনয়ন পাওয়া বিচারপতির নাম ঘোষণা করা হয়।
৫৩ বছর বয়সী ব্রেট কাভানগকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতিদের মধ্যে আবারও রক্ষণশীলরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠলো। আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রথম দেড় বছরের মধ্যে তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আজীবনের জন্য দুইজনকে নিয়োগ দিলেন।
কাভানগকে এখন সিনেটের অনুমোদনের জন্যও আরেকবার ভয়ানক লড়াই করতে হবে। কারণ সেখানে রিপাবলিকানদের খুব অল্প ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। আর সেখানে অনুমোদন পেলেই আজীবনের জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি থাকবেন তিনি। এর আগে গত ২৭ জুন অ্যান্থনি কেনেডি ৮১ বছর বয়সে অবসরের ঘোষণা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারপতির নাম ঘোষণার সময় কাভানগ সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আইনি জগতে তাকে বিচারপতিদের বিচারপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তিনি তার সহকর্মীদের মধ্যে একজন সত্যিকারের মতমোড়ল।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তিনি পরিষ্কার ও কার্যকর লেখার ধরনসম্পন্ন একজন মেধাবী আইনজ্ঞ। তাকে সার্বজনীনভাবে আমাদের সময়ের সবচেয়ে সুন্দর ও তীক্ষ্ণ আইনি চেতনা বলে মনে করা হয়। আর ঠিক বিচাপতি গোরসাচের মতো করে তিনিও বিচারপতি কেনেডির সমান পারদর্শী আইনজ্ঞের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন’।
কাভানগ ২০০৬ সালে ডিস্ট্রিক অব কলম্বিয়া সার্কিটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কোর্ট অব আপিলের দায়িত্ব পালনের সময় থেকেই কট্টর রক্ষণশীল বিচারক হিসেবে পরিচিত। ওই একই আদালতে কর্মরত ছিলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসসহ আরও তিন বিচারপতি। তবে মনোনয়ন দেওয়ার সময় কিছু কনজারভেটিভ কাভানগের ব্যাপারে আপত্তি তোলেন। রক্ষণশীল বিচারপতি কেনেডির অধীনস্থ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কাভানগের বিরুদ্ধে গর্ভপাতের মতো সামাজিক ইস্যুতে তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কনজারভেটিভরা। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় ওই বিষয়ে তার অবস্থান নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আছে। তবে সমর্থকরা তার অভিজ্ঞতা ও ব্যাপক মাত্রায় আইনি মতামতের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।
এর আগে কনজারভেটিভদের প্রস্তাবিত ২৫ জনের তালিকা থেকে বিচারপতি বেছে নিতে গত সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমানে ভ্রমণরত অবস্থায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ওই তালিকাকে কমিয়ে চারজনে নামিয়ে আনতে পেরেছি। আমি মনে করি, ওই চারজনের তালিকাকে দুইজনের বা তিনজনের মধ্যে নামিয়ে আনতে পারব।’
পরদিন শুক্রবার (৬ জুলাই) সাপ্তাহিক ভাষণে ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, সংবিধানের ‘মূল’ ব্যাখ্যাকে অবলম্বন করেন-এমন একজন বিচারপতি খুঁজছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিচারপতিরা নতুন করে আইন প্রণয়ন করবেন না, সংবিধান পুনঃ রচনা করবেন না কিংবা আইনের মাধ্যমে জনগণ যে ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেছে তার জন্য নিজের মতামতকে বিসর্জন দেবেন না’।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অ্যান্টোনিন স্কালিয়া প্রয়াত হন। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হাইকোর্টের ৯ সদস্যের বেঞ্চের ৫ জনই রক্ষণশীল ছিলেন। তবে স্কালিয়ার মৃত্যুর পর রক্ষণশীল ও উদারবাদী বিচারপতির সংখ্যা ৪-৪ এ দাঁড়ায়। সে সময় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ঘোষণা দেয়, শিগগিরই কাউকে অ্যান্টোনিনের স্থলাভিষিক্ত করা হবে। তবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত অ্যান্টোনিনের জায়গাটি ফাঁকা রাখতে বলে রিপাবলিকানরা। সেই অনুরোধকে বিবেচনায় নিয়ে দশ মাসের জন্য নিয়োগ স্থগিত করা হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর স্কালিয়ার স্থলাভিষিক্ত করতে নিল গোরসাচকে নতুন বিচারক হিসেবে বেছে নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাভানগকে নিয়োগ দেওয়া হলে ৯ সদস্যের সুপ্রিম কোর্টে কনজারভেটিভদের আধিপত্য বহাল থাকবে।