ঠিকানা রিপোর্ট : সব বাধা-বিপত্তি ও নানা শঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ ‘রব-রুহুল’ প্যানেলের
হয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সবকটি পদে ‘অবিস্মরণীয়’ জয় পেয়েছে রব-রুহুল প্যানেল। নির্বাচনে সভাপতি হয়েছেন আব্দুর রব মিয়া। সাধারণ সম্পাদক পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন রুহুল আমিন সিদ্দিকী। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন বিদায়ী কমিটির ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সেক্রেটারি মো. নওশেদ হোসেন।
নিউইয়র্ক সিটির ৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষে রাত ১২টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি প্রাথমিক ফল ঘোষণা করেন। এসময় নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্য, সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড, কার্যকরী পরিষদের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, দুই প্যানেলের প্রার্থী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলা মোকাদ্দমার ফলে প্রায় চার বছর স্থগিত থাকা এ নির্বাচনে প্রবাসীদের তেমন স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল না। প্রায় ২৮ হাজার ভোটারের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ৯০২ জন সদস্য তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব নবনির্বাচিত কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে বিদায়ী ও বর্তমান কমিটি এবং ট্রাস্টি বোর্ড। নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর গঠন করা হবে ট্রাস্ট্রি বোর্ড।
ভোটের দিন সকালে ব্রুকলিন কেন্দ্রে আগে থেকে কিছু ভোট পড়ে। পরে তা বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু করা, জ্যামাইকাতে মেশিন সমস্যার কারণে সকালে বিলম্বে ভোট শুরুর কারণে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময় বাড়ানো, কিছু ভোট ডাবল হয়েছে, এমন ছোটখাটো কিছু অভিযোগ ছাড়া ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয় সুষ্ঠুভাবে।

ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বিকাল ও রাতের দিকে কিছুটা বাড়তে থাকে। তবে দুই প্যানেলের প্রার্থীরা সকাল থেকেই ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন কেন্দ্রে ছিলেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা, গাড়ি দিয়ে আনানোসহ বিভিন্নভাবে ভোটারদের উৎসাহিত করা হয়। পাঁচটি ভোট কেন্দ্রে পাঁচজন কমিশনার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি সব কেন্দ্র পরির্দশন করেন। রাতে সব ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন তিনি। এরপর রাতে গুলশান টেরেস কেন্দ্রে সব কেন্দ্রের ফলাফল আসার পর চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
কুইন্সে প্রধান ভোটকেন্দ্র ছিল উডসাইডের গুলশান টেরেস। বাকি চারটি ভোটকেন্দ্র ছিল- জ্যামাইকার ইকরা সেন্টার, ব্রুকলিনের পিএস-১৭৯ স্কুল, ওজোন পার্কের দেশি সিনিয়র সেন্টার এবং ব্রঙ্কসের গোল্ডেন প্যালেস। এই নির্বাচনে প্রথমবারের মত ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়।
এদিকে মামলার ধকল আপাতত কাটিয়ে উঠে নতুন কমিটি নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আবার সচল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সোসাইটি। অনেকেই মনে করছেন, আগামীতে বদলে যাবে সোসাইটির অবস্থা। এক প্রকার অচল সোসাইটি আবার সচল হয়ে উঠবে। কমিউনিটির ‘রব-রুহুল’ প্যানেলের জন্য আবার বৃহৎ পরিসরে কাজ শুরু করবে নতুন কমিটি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বর্তমান কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য একটি দিন ঠিক করবেন এবং নবনির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি নির্বাচিতদের শপথ পাঠ করাবেন।

২০২৩-২০২৪ মেয়াদের নির্বাচনের জন্য এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্যানেল দুটি ছিল- রব-রুহুল ও নয়ন-আলী পরিষদ। দুটি প্যানেল ও সভাপতি পদে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদে ৩৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে রব-রুহুল প্যানেল থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুর রব মিয়া সভাপতি এবং সোসাইটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী পুনরায় একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এছাড়া নয়ন-আলী প্যানেল থেকে কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন সভাপতি পদে ও সোসাইটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন।
এদিকে রব-রুহুল প্যানেল থেকে ১৯টি পদে ১৯জন প্রার্থী থাকলেও নয়ন-আলী প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন ১৭জন।
এর আগে নির্বাচন কমিশন এই প্যানেলের দুজন কার্যকরী সদস্যের প্রার্থিতা বাতিল করে।
২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে মনোনয়নপত্র পূরণ নিয়ে নয়ন-আলী প্যানেলের দুজন সদস্য প্রার্থীর মনোনয়ন নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাতিলের পর সৃষ্টি হয় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি। মামলা এবং করোনার কারণে এতদিন এই নির্বাচন স্থগিত ছিল।

রব-রুহুল প্যানেলের বিজয়ীরা হলেন- সভাপতি আবদুর রব মিয়া। তিনি ৩১৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী আশরাফ হোসেন পেয়েছেন ২৫৪০ ভোট এবং জয়নাল আবেদীন পেয়েছেন ৬৭ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে রুহুল আমিন সিদ্দিকী (পুনঃনির্বাচিত) পেয়েছেন ৩১৮৯ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ আলী পেয়েছেন ২৪৪০ ভোট।
সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মহিউদ্দিন দেওয়ান পেয়েছেন ৩২১৪ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুর রহিম হাওলাদার পেয়েছেন ২৪২০ ভোট।
সহ-সভাপতি পদে-ফারুক ইউ চৌধুরী পেয়েছেন ৩০৫২ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিম সগির পেয়েছেন ২৪৪৯ ভোট।
সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী পেয়েছেন ২৮৭৫ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিয়া মোহাম্মদ দুলাল পেয়েছেন ২৬৫০ ভোট।
কোষাধ্যক্ষ পদে নওশেদ হোসেন পেয়েছেন ২৯৮২ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ খান ডিউক পেয়েছেন ২৫৩৩ ভোট।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবুল কালাম ভূঁইয়া পেয়েছেন ২৯৩৭ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আহসান হাবীব পেয়েছেন ২৫৯৪ ভোট।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ডা. শাহনাজ লিপি পেয়েছেন ২৯৯০ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মণিকা রায় পেয়েছেন ২৫৬০ ভোট।
জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে রিজু মোহাম্মদ (পুনঃনির্বাচিত) পেয়েছেন ৩২৯১ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হায়দার আলী পেয়েছেন ২২৩৯ ভোট।
সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে খান মোহাম্মদ টিপু পেয়েছেন ২৯৪৩ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাশেম চৌধুরী পেয়েছেন ২৫৩২ ভোট।
সাহিত্য সম্পাদক পদে ফয়সাল আহমদ পেয়েছেন ৩০২০ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসান জিলানী পেয়েছেন ২৪৯৩ ভোট।
ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক পদে মইনুল উদ্দিন মাহবুব পেয়েছেন ২৯৭৫ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রশিদ রানা পেয়েছেন ২৫৫১ ভোট।
স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক পদে প্রদীপ ভট্টাচার্য পেয়েছেন ২৭৫৯ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সামাদ মিয়া (জাকির) পেয়েছেন ২৬৭২ ভোট।
কার্যকরী সদস্য পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন ফারহানা চৌধুরী (৩২১০ ভোট) ও সাদী মিন্টু (২৯১৩ ভোট), আখতার বাবুল (৩১৬৭ ভোট), আবুল বাশার ভূঁইয়া (২৯৯৩ ভোট), সুশান্ত দত্ত (২৯৪৯ ভোট) ও শাহ মিজানুর রহমান (২৯০৯ ভোট)।
কার্যকরী ‘রব-রুহুল’ প্যানেলের সদস্য পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- সাইদুর খান ডিউক (২২৫১ ভোট), মাহমুদ আলম (২৩৪০ ভোট), মোহাম্মদ এ সিদ্দিক (২৬০৬ ভোট) এবং আহসান উল্লাহ মামুন (২৫০৩ ভোট)।
এদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্থগিতাদেশের আশঙ্কা ছিল। যে কোন সময়ে আটকে যেতে পারে নির্বাচন, এমন শঙ্কা থাকলেও নির্বাচন করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিল নির্বাচন কমিশন। কেউ কেউ মনে করেছিলেন, এবার সোসাইটির পক্ষ থেকে ওসমান চৌধুরীর মামলার বিরুদ্ধে সোসাইটির আপিল করায় এবং তিনিও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ায় ও নির্বাচন স্থগিত করার আদেশ চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নাও হতে পারে। তবে কমিশন ও সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড ও কার্যকরী কমিটি সর্বাত্মক চেষ্টা করে নির্বাচন করার। সেই হিসাবে তারা সফলও হয়।
কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি বলেন, সবধরণের বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে নির্বাচন করেছি। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করেছে। সবাই মিলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পেরেছি। আশা করছি এখন সোসাইটিতে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভাকেট জামাল আহমেদ জনি, কমিশনার মোহাম্মদ এ হাকিম মিয়া, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, কাওসারুজ্জামান কয়েস, মো. রুহুল আমিন সরকার ও খোকন মোশাররফ।
মামলা- কাউন্টার মামলা : নির্বাচনের আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে সোসাইটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান চৌধুরী নির্বাচন ঠেকাতে সব ধরণের উদ্যোগ নেন। তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর কুইন্সের সাটফিনে আদালতে নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চান। তবে আদালত স্থগিতাদেশ দেননি।
ওসমান চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম, গঠনতন্ত্র না মেনে নির্বাচন করার অভিযোগ এনে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন যাতে ১৮ সেপ্টেম্বর না হয়, সেজন্য সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। নিষেধাজ্ঞাও চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি দ্রুত কথা বলার কারণে আদালত সব কথা লিপিবদ্ধ করতে পারেনি। আমি খুব দ্রুত কথা বলেছি। আর কোনো দোভাষীও ছিল না। থাকলে হয়তো সুবিধা হতো। বিচারক আমার শোকজ টু অর্ডারে স্বাক্ষর করেননি। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন হয়েছে যে ভোটার তালিকা দিয়ে সেখানে ভোট হলে ভোটারের স্বাক্ষর ভোটার তালিকার সাথে থাকতে হবে এমনটাই আমরা বলেছিলাম। কিন্তু সেটি করা হয়নি। আমি আদালতে সব বিষয় উপস্থাপন করবো। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো।
সোসাইটির বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার বলেন, কমিশন ও আমরা নির্বাচনের জন্য সব রকমের প্রস্ততি রেখেছিলাম। ওসমান চৌধুরী মামলা করে নির্বাচন ঠেকানোর জন্য নিষেধাজ্ঞা চাইবেন জেনেই সেই হিসাবে আমরা নির্বাচনের চারদিন আগে থেকে আদালতে আমাদের আইনজীবী ছিলেন। আমরা আদালতে বলেছি যে, এই সংগঠনের মাধ্যমে আমরা কমিউনিটির সেবা করে থাকি। এর আগে দুইবার এই নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েও তা সফল করতে পারেনি মামলার কারণে। ইতোমধ্যে এই নির্বাচন করতে না পারার কারণে সোসাইটির দুই লাখ ডলারের বেশি লোকসান হয়েছে। এই অর্থ আমাদের কমিউনিটির সদস্যদের অর্থ। তাই বলা যায় এই সব অর্থ এভাবে লোকসান হতে আর দেয়া যাবে না।
রুব-রুহুল প্যানেলের কৃতজ্ঞতা : বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে রব-রুহুল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচিত আব্দুর রব মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী বলেন, আমরা ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তখন থেকেই প্রচার চালিয়ে চালিয়ে যাই। ওই সময়ে নির্বাচনের জন্য খুব উৎফুল্ল ছিলাম। কিন্তু মামলা হওয়ায় নির্বাচন আর হলো না। এখন নির্বাচন হলো। নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করায় ভোটের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তারা বলেন, মামলার কারণে ভোটারের মধ্যে দোটানা ছিল। তারপরও বলবো ভোট হওয়াতে সবাই খুশী। আমরা দায়িত্ব নিতে ট্রাস্ট্রি বোর্ড ও বর্তমান কমিটির সাথে কথা বলবো। তারা এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন। আশা করছি এটিও সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে সফলভাবে করতে পারবো। সবার বুদ্ধি ও পরামর্শ আমরা নিতে চাই। আমরা দায়িত্ব নেয়ার আগে সব অর্থনৈতিক হিসাব সিপিএ এবং ল’ইয়ারের মাধমে সব জেনে শুনে এরপর বুঝে নিতে চাই। কারণ একবার মামলা হয়েছে, এই মামলা চলতেই থাকবে। ফলে অর্থনৈতিক বিষয়সহ সব বিষয়গুলো বুঝে না নিলে পরে জটিলতা হতে পারে।
আব্দুর রব মিয়া বলেন, আমাদের সোসাইটির গঠনতন্ত্রের কিছু কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষ মামলা করছে। এগুলো বন্ধ করার জন্য দেশের যেসব আইনজীবী এখানে আছেন ও যারা এখানে প্র্যাকটিস করছেন, তাদের পরামর্শ নিয়েই সেটি কমিটি করে সংশোধন করতে চাই। সোসাইটিকে মূলধারার সাথে আরো সম্পৃক্ত করবো।
বাংলাদেশ প্যারেড নামে একটি প্যারেডের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান আবদুর রব মিয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা একটি কমিউনিটি সেন্টার করব। এখানে ৪০ বছরের কম বয়সী মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। যাদের মধ্যে থাকবেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এসব মানুষকে সম্পৃক্ত করে তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগানো হবে। এতে করে বাংলাদেশি কমিউনিটি সমৃদ্ধ হবে। সব মিলিয়ে আমরা নিউইয়র্কে একটি মিনি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
সংবাদ সম্মেলন : বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান এম. আজিজ গত ১৫ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, গত দুদিনে পাঁচটি মামলা হয়েছিল নির্বাচন স্থগিতাদেশ চেয়ে। আমরা সার্বক্ষণিক আদালত চত্বরে অ্যাটর্নিসহ উপস্থিত থাকায় সবকটি মামলা রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আদালতের নির্দেশেই বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ ভোটারের কেউই নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। এমন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড অব ট্রাস্টির পক্ষ থেকে দৃঢ় অবস্থানের ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান এম. আজিজ। সে অনুযায়ী শেষ মুহূর্তের মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় ঠেকানোর অভিপ্রায়ে একজন অভিজ্ঞ অ্যাটর্নি নিয়োগ করেন এবং সেই অ্যাটর্নিসহ ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর আদালত চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলেন।
সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আরো জানান, নিরু এস নীরা এবং ওসমান চৌধুরী নামে দুই প্রবাসী মোট পাঁচটি মামলা করেছিলেন এই দুদিনে। তাৎক্ষণিক শুনানিতে আমরা আদালতকে কনভিন্স করতে সক্ষম হয়েছি যে, ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থে ২৮ হাজার ভোটারের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলতে পারে না।
বিজয়ীদের স্বাগত, অন্য প্রার্থীদের প্রতি সমবেদনা- প্রধান নির্বাচন কমিশনার : বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন, তাদের স্বাগত এবং যারা বিজয়ী হতে পারেননি তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। খুব সুন্দরভাবে আমরা নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন এবং ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। আমরা এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কারও কাছ থেকে কোনো রকম অভিযোগ পাইনি।
যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের কাছে আগামী ৭ জানুয়ারির আগে দায়িত্ব হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে ৭ জানুয়ারির আগে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এখনো অনেক সময় আছে দায়িত্ব হস্তান্তর করার। বিদায়ী কমিটি ও নতুন কমিটি মিলে আলোচনা করেই এই তারিখ ঠিক করবেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের দিন অভিষেক হবে। সেখানে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। এখানে আমাদের আর করণীয় কিছু নেই। কেবল আমরা সার্টিফিকেট দিলে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
জামাল আহমেদ জনি আরো বলেন, দু-একটি কেন্দ্রে নির্বাচন বিলম্বে শুরু হয়েছে। এ ছাড়া তেমন কোনো অভিযোগ নেই। ব্রুকলিন কেন্দ্রে যে আগাম ভোটের কথা বলা হচ্ছে, এই ভোট নয়ন-আলী প্যানেলের পক্ষেই ছিল। ভাগ্য ভালো যে তাদের পক্ষে ছিল। না হলে অনেক বড় সমস্যা হতো। আসলে কাজী নয়ন সাহেব চেয়েছিলেন ভোট দিয়ে ফলাফল দেখতে যে ঠিকমতো কাজ হয় কি না? কিন্তু মেশিনের নিয়ম হচ্ছে, এটি এক দিনে একবারই রেজাল্ট দিতে পারে, দুবার পারে না। এ কারণে ভোট শুরুর আগে ফলাফল প্রিন্ট করে দেখানো সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, জ্যামাইকা ও ব্রঙ্কস সেন্টারে নয়ন-আলী দুজনই জয়ী হয়েছেন। ব্রুকলিনে তারা ভোট তুলতে পারেননি বেশি। তাদের পক্ষে ভোটার কম উপস্থিতি ছিল।
তিনি বলেন, নির্বাচন আমরা করতে পেরেছি। এটা ভালো দিক। তবে এটা বলব যে নির্বাচন হয়ে গেছে। এত দিন কেন নির্বাচন করতে পারিনি, এ কথা এখন বলতে পারছি না। তবে কমিশনের দায়িত্বে থাকায় অনেক কথা বলতে পারিনি। ভবিষ্যতে বলব। সবাই সোসাইটির কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন- সেটা প্রত্যাশা করছি।