জাঁ-নেসার ওসমান
‘এইটা কী বলেন! ডেমোক্রেজি! শব্দটা হবে ডেমোক্রেসি।’ ‘তোদের যা অবস্থা তাতে ডেমোক্রেসি বাপ বাপ বলে ডেমোক্রেজিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এ যেন শুঁয়োপোকার প্রজাপতিতে রূপান্তর।’
‘আরে ভাই শুঁয়োপোকা প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়ে ভালো হয়…আরও সুন্দর হয়… ফুলে ফুলে মধু আহরণ করে।’
‘যতঃ দেশে, যতদ্যপীঃ যদাচারঃ যে দেশে যেমন! এখানে সবই উল্টা, অতএব ডেমোক্রেসি ডেমোক্রেজিতে রূপান্তরিত। এখন জনগণতন্ত্র পাল্টায়া গেছে! এখন মধু খায় হেঁ হেঁ তোর চোরাতন্ত্র … হেঁ…হেঁ…’
‘জনগণতন্ত্র না পাগলাতন্ত্র?’
‘তুই যেভাবে দেখিস! সম্প্রতি দেখা গেল, ইয়াবা ব্যবসা যারা রোধ করবে, তারাই ওই ব্যবসায় জড়িত! প্রশ্ন করলে বলে, ইয়াবা দেশে প্রবেশ করে কেমনে? হেইডা বন্ধ করেন, তায়লে রক্ষক আর ভক্ষক সাজব না! অরক্ষা বাহিনী আর খাট ব্যবসায় জড়াব না। হায়রে যুক্তি!’
‘ঠিকই তো কয়, বর্ডার সিল করেন!’
‘আরে ভাই এ তো একটা বিষয়, এই যে তোমার ধন্বন্তরি (ডাক্তার) বাচ্চা ডেলিভারিতে বাচ্চার দম বের করে দিলো। স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চার বাবা জিডি করল যে, এটা কি ধন্বন্তরির গাফিলতি নাকি স্বাভাবিক নিয়মে, যার মাল সে নিয়েছে, তার একটা তদন্ত হোক! খুবই স্বভাবিক ব্যাপার!’
‘এহানে তো দোষের কিছু দেহি না !’
‘তুমি তো কোনো দোষ দেখলে না; কিন্তু দুনিয়ার, আমাদের বাংলাদেশের পৃথিবীর সব ধন্বন্তরি হরতাল ঘোষণা করল। কেউ কোনো বেদনার্তকে ছোঁবে না! ব্যস, ডেমোক্রেসির ঠেলায় বাচ্চার আব্বা, বাপ বাপ বলে জেনারেল ডায়েরি ফেরত নিয়ে কান ধরে দশবার ওঠবস করে, তিন হাত নাকে খত দিয়ে ডেমোক্রেসিকে রক্ষা করল। বেশিসংখ্যক ধন্বন্তরির ইচ্ছা পূরণ করল!’
‘এইডা তো পুরা পাগলামি। পুরাই ক্রেজি কারবার। দোষ করলে বিচার হইব না!’
‘জি না, বঙ্গ-ভঙ্গে ডেমোক্রেসির ঠেলায় তাবৎ ডেমোক্রেসি এখন ডেমোক্রেজিতে রূপান্তরিত!’
‘কিন্তু আপনে গণতন্ত্র মানলে, বেশিরভাগ লোকের কথা শুনবেন না! গ্রিসের ডেমোস…’
‘বেশির ভাগ লোক ভুল বললেও তাই-ই মানতে হবে!’
‘এইটাই তো ডেমোক্রেসি, জনগণতন্ত্র, বেশিরভাগ জনগণ যাকে পছন্দ করবে, তাকেই আপনার মানতে হবে…’
‘ভুল জিনিসে মতামত দিলেও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য তাই মানব?’
‘জি, গণতন্ত্র চাইলে, গণতন্ত্র মানলে, বেশিসংখ্যক লোক যা চাইবে, তাই আপনাকে মানতে হবে, হেঁঃ হেঁঃ হেঁঃ …’
‘ওই ব্যাটা হেঁঃ হেঁঃ করিস না, আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দোজাহানের শ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি যখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম প্রচার করেন, তখন সমাজে বেশিরভাগ লোক মূর্তিপূজা করত, ঠিক কি-না?’
‘অবশ্যই! কদর্য মানুষগুলো মূর্তিপূজা করত, শেরেক করত।’
‘তা হলে? গণতন্ত্র, মানে বেশিরভাগ লোক মূর্তিপূজা করত। কিন্তু আমাদের মহানবী, দিনের নবী তো ওই ভুল মতবাদে আস্থা রাখেননি। তিনি সারাবিশ্বে ইসলামের ঔদার্য-মাহাত্ম্য প্রচার করলেন, সবাইকে আল্লাহর পথে আনলেন।’
‘ঠিকই তো! মহানবীর বাণী সারাবিশ্বে প্রতিধ্বনিত হলো। আরবে মূর্তিপূজা ধ্বংস হলো।’
‘তাই বলছিলাম, বেশিরভাগ লোক যা মানবে তা যে মানবের কল্যাণ বয়ে আনবেÑ তার কোনো ভিত্তি নাই। বেশিরভাগ লোক এক মতবাদে বিশ্বাস করলে সমাজে উচ্ছৃঙ্খল জনতার গণতন্ত্র শুরু হয় (সূত্র : অ্যারিস্টটল-পলিটিক্স)!’
‘কল্যাণ-অকল্যাণ, সুশীল-কুশীল সবই মানুষের সৃষ্টি, জনতার লীলাখেলা।’
‘তা কেন? তুই না বলিস মানুষই একমাত্র প্রাণী, যাকে জন্মের পর মানুষ হতে হয়?’
‘ঠিকই তো কোই, কুত্তা জন্মের পরই কুত্তা, গরু জন্মাইলেই গরু, ছাগল পৃথিবীতে আইলেই ছাগল; কিন্তু মানুষের জন্মের পর ভালোমতে লেহাপড়া কইরা মানুষ হইতে হয়। জন্মাইলেই মানুষের বাচ্চা মানুষ হয় না।
কথাশিল্পী শওকত ওসমান বলেছেন ; ‘পুত্র ও মূত্র, একই স্থান থেকে নির্গত। যারা মানুষ হয় তারাই পুত্র, বাকি সব মূত্র-মূত্র-মূত্র..’
‘তাই তো বলছিলামÑ মানুষ যদি মানুষ না হয়, তাহলে সংখ্যায় যত বেশিই হোক, যতই বহু মূত্র হোক, তাদের সিদ্ধান্তে মানুষের মঙ্গল নাও হতে পারে!’
‘মানলাম, বেশিরভাগ, মানে বেশিসংখ্যক ব্যক্তি বা মনুষ্য নামক প্রাণী, মানুষ না হয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ওই সিদ্ধান্ত ওই মনুষ্যদেরই অমঙ্গলে বয়ে আনতে পারে। কারণ, বেশিরভাগ লোক যখন একদলে ভিড় করে, তখন অন্য ছোট দলগুলো এই দলের মার খেয়ে বাপের নাম ভুলে যায়। আর ধীরে ধীরে এই বেশিরভাগ লোক, তাদের ইচ্ছামতো আইন বদলে নেয়Ñ যা ওদের জন্য সুবিধা বয়ে আনে। কিন্তু অন্য দলের সমূহ বিপদ (সূত্র : অ্যারিস্টটল-পলিটিক্স)!’
‘ঠিকই তো প্রথম দিকে জার্মানিতে হিটলারের দল ছোট ছিল, যখন হিটলার বেশিরভাগ লোকেরে দলে ভিড়াইল আর তখন স্বৈরাচারী কায়দায় পৃথিবী ধ্বংস করতে শুরু করল। শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি লোক মরছে, এই স্বৈরাচারী হিটলারের কারণে!’
‘ঠিক ঠিক, বেশিসংখ্যক মানুষ যদি মানুষ না হয়ে, মানে শিক্ষিত না হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ওই সিদ্ধান্ত ওই মনুষ্যদেরই অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে।’
‘মানে কি, ওরা মনুষ্যরা নিজেরাই, নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেদের অমঙ্গল ডেকে আনছে!’
‘একি, তোরে কইতে হবে। ও মনু নতুন কইরে কইতে হবে?’
‘নিজেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি নিজের অমঙ্গল বয়ে আনতে? তাহলে এতদিনের ডেমোক্রেসিÑ আই মিন গণতন্ত্র?’
‘দেখ হিটলার যখন বেশিরভাগ লোকের সমর্থন পাইল, তখন হের যা ইচ্ছা তাই করা শুরু করল। হিটলারের দল নাৎসি পার্টি ১৯২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি স্থাপিত হইল। যদিও পার্টি শুরু করল অ্যানটন ড্রেক্সলার (অহঃড়হ উৎবীষবৎ); কিন্তু তারপর ১৯২১ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত অ্যাডলফ হিটলার (অফড়ষভ ঐরঃষবৎ) একচ্ছত্র অধিপতিরূপে নাৎসি পার্টি পরিচালনা করল! বইন্না গেল স্বৈরাচার ‘দি গ্রেট ডিক্টেটর!’
‘তা হলে ডেমোক্রেসি! এ তো দেখি ভাবাইয়া তুলল…’
‘আরে প্রথমেই তো বললাম, তোর ডেমোক্রেসি এখন ডেমোক্রেজিতে পরিণত। আগে তোরা ঘুষ খেতিস হাজার হাজার লক্ষ টাকায় আর এখন ঘুষ খাস কেজিতে। আচ্ছা বল, কেজি কোন ঘুষের একক হলো!’
‘না না, সবাই তো আর কেজিতে ঘুষ খায় না।’
‘মানলাম, সবাই কেজিতে ঘুষ খাচ্ছে না; কিন্তু সেকেন্ডহোম! বল এ আবার ঘুষের কোন একক!’
‘ঘুষ-ঘুষ-ঘুষ এই যে বলছেন, জাতি আজ ঘুষঘুষে জ্বরে আক্রান্ত। মানলামÑ ঘুষ-দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে; কিন্তু দেশের সাধারণ লোক তো আর ঘুষ খাচ্ছে না, দুর্নীতি করছে না…।’
‘বাবা, তোমার এই সাধারণ লোক এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যে ওদের তৈরি রক্ষাকর্তা ওদেরই শোষণ করছে, এই বোধটাও তোর ওই জনসাধারণের নেই। কারণ তোর ভাষায় ওরা এখনও মানুষ হয়নি, শিক্ষিত হয়নি। তাই বলছি, মানুষ-মানুষ না হয়ে, খালি মনুষ্য পদবাচ্য অধিকসংখ্যক প্রাণী বা জনসাধারণের সিদ্ধান্ত, কখনোই মানুষের মঙ্গল বয়ে আনবে না! আনতে পারে না! আর এই কথাটা আমার না, কথাটা হলো গ্রিক প-িত অ্যারিস্টটলের, তিনি আলেকজান্ডারের গুরু ছিলেন, মানে তোর ডেমোক্রেসির ওস্তাদ ছিলেন (সূত্র : ইন্টারনেট, ইউটিউব)।’
‘তা হলে জনগণ তাদের নিজেদেরই ক্ষমতা, নিজেরাই অন্যদের হাতে তুলে দিয়ে তুলাধোনা হচ্ছে!’
‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। কিন্তু ধুনুরি ওদের তুলাধোনা করছে কি না বলতে পারি না? তবে এটা বলতে পারি যে, জনগণ ক্ষমতার উৎস, অথচ তারা মানুষ হতে পারল না বলে, আজ দুই টাকার বেতনের চাকরের লাথি খাচ্ছে (সূত্র : ইন্টারনেট, ইউটিউব)।’
‘নিজেদের অজ্ঞতার জন্য, নিজেদের সিদ্ধান্তে এই মনুষ্য পদবাচ্য প্রাণিকুল, জনসাধারণ, আজ নিয়মিত লাথি খাচ্ছে! এর কি কোনো বিচার নাই?’
‘কে কার বিচার করবে। মনে কর, গৃহকর্তা-গৃহকর্ম সহায়িকার সঙ্গে প্রেম করে- তখন গৃহবধূর অভিযোগের বিচার কে করবে? গৃহকর্তা তো নিজেই অপরাধী!’
‘তাই বলে, অবলা জনসাধারণ গণতন্ত্রে কোনো বিচার পাইব না?’
‘ওই যে, প্রথমেই বলেছিলি, মানুষ না হলে, সাধারণ, জনগণ সংখ্যায় অধিক হলেও কোনো লাভ নেই- সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’
‘তাহলে যতদিন না মনুষ্য পদবাচ্য প্রাণী মানুষ হবে, ততদিন ডেমোক্রেসি ডেমোক্রেজিরূপেই চলবে!’
‘এখনই সাবধান না হলে তোর ডেমোক্রেজি তোকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে! এটা আমার না, এটা অ্যারিস্টটলের কথা। তাই বইলছি, তাড়াতাড়ি ডেমোক্রেজি রেইখে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মানুষকে মানুষ কর।’
১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন, ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ (সূত্র : ‘স্মৃতি ও সংগ্রামমুখর দিনগুলো;’ রচনা : শ্রদ্ধেয় তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্যমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার)।
আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোষিতের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড় করিয়েছেন ৭.৮৬, বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়ন ধারাটি বিশ্বজুড়ে ‘রোল মডেল’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তাই নির্ভয়ে বলতে চাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের পরম্পরা আজ সারাবিশ্বেই এক উন্নয়নের বিস্ময়রূপে পরিচিতি লাভ করেছে। নিজের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে। তাই বলি, তোরা সোজাসাপটা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পথ ধর, মানুষকে মানুষ কর, মানুষকে মানুষ কর, মানুষকে মানুষ কর। জয়-বাংলা…।