মোস্তফা কামাল
৮ মে জামিন পাবেন দলের চেয়ারপারসন, এ আশায় ছিল বিএনপি। তাদের আশা-ভরসার শেষ নেই। জামিনের পর সুচিকিৎসা, আপসহীন নেতৃত্বের পর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার আশাও কম নয়। এত আশায় তারা এখন সুবোধ পলিটিকসে ব্যস্ত। যদিও তাদের সেই আশার গুড়ে বালি। জামিন পাননি খালেদা। তবু সবাই গুডবয়। নো মারামারি-কাটাকাটি। মার খেলেও গাল পেতে দেয়। এটা নাকি চেয়ারপারসনের নির্দেশ। আগে তারা মাঝেমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে যেত। এখন চলে যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের আপ্যায়ন করেন। হাতের কাছে পেয়েও অ্যারেস্ট করা হয় না। রাস্তাঘাটে মার খাওয়ার চেয়ে ভালো। গুমের চেয়ে বরকতের।
কী ইউটার্ন এক অদ্ভুত পরিবর্তন। বিএনপির এ নমুনায় সরকার মজাই পাচ্ছে। অথবা বিএনপি সরকারকে এ মজাটা দিচ্ছে। সরকার অনুমতি না দিলে বিএনপি আর কখনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে না। শুধু নিয়মিত প্রেস কনফারেন্স করবে। দোয়া মাহফিল, মোনাজাত, জিলাপি বিতরণ করবে। কারণ কাঙালিভোজের অনুমতি তাদের নসিবে নেই। তাই সুবোধ বালকের দল হবে। ক্লাসের সবচাইতে নিরীহ ছাত্রের মতো হ্যাঁ-না বলবে। গণতন্ত্রের নতুন যন্তরমন্তর খেলায় এর বাইরে গেলেই নিশ্চিত আটক। রিমান্ড। ঠাসা মার। মারের তোড়ে মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের।
রাজনীতির ভানুমতির খেলায় তাদের ভানু হওয়ার শক্তি নেই। মতি হওয়ার সুযোগ নেই। তাই কোনোমতে গুডবয়ের ভান করাই উত্তম। যদিও গুড হওয়া খুব টাফ। ব্যাড হওয়া ইজি। গুডবয় হলে ঠিকমতো ক্লাসে যেতে হয়, হোমওয়ার্ক করতে হয়, সবার কথা শুনতে হয়। আর ব্যাড হলে যা ইচ্ছা তা-ই করা যায়। ক্লাসে যেতে হয় না, হোমওয়ার্ক করতে হয় না, সারা দিন গেমস খেলা যায়। ঘুমাতে হয় না। অনেক মজা। ঝিম মেরে এই মজাটাই তারা চায়। টুকটাক বেয়াদবি বা ঢুস মারলে বড়জোর কানমলার মতো হালকা-ঝাপসা মার খেতে হবে। বেদম পিটুনির রিস্ক নেই। গুলশান অফিস ছাড়াবাড়ির মতো। তাই আপাতত পল্টন অফিসই ক্লাসরুম। মাঝেমধ্যে সেখানে হাজিরা দিলেই হয়। আর চান্স পেলে লন্ডনে যোগাযোগ ভাগ্যে জুটলে তো কথাই নেই।
সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে বিএনপি যে ডিএমপি অফিস ঘেরাও করবে, সে কর্মসূচি পালনের অনুমতিও সরকার দেয় না। এর বদলে পল্টন অফিসে মিলাদ-মাহফিল হবে। এতে নেতা-কর্মীদের অনেকে আসেন। আদাব-সালাম বিনিময় হয়। প্রেস কনফারেন্সেও আসেন অনেকে। ক্যামেরার সামনে চেহারা দেখানো যায়। মির্জা ফখরুল বা রিজভী তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলনের হুংকার দেবেন। ঈদের পর আন্দোলন জমানোর ঘোষণা তো থাকবেই। এ সময় আশপাশে থেকে বাকিরা মাথা নাড়বেন। এটাই বিশাল হাজিরা। গুডবয়ের নমুনা।
এবার অবশ্য ঈদের পর আন্দোলনের ঘোষণায় ভেজাল হয়ে গেছে টাইমফ্রেমের বৈরিতায়। কারণ এবার রোজা শুরু মে মাসে। সুতরাং, ঈদের পরে আন্দোলন করতে হলে জুন মাসের পরই আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু ঈদের পরে আন্দোলনের কথা বললেই তো পাবলিক হাসে। তাই জুন মাসের পরে আন্দোলন শুরুর এলান দেওয়া হয়েছে। ঈদের পরের আওয়াজ নিয়ে মানুষ হাসে। মশকরা করে। তার চেয়ে জুন-জুলাই ডেডলাইন সম্মানের।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক; বাংলাভিশন