মোস্তফা কামাল
নটার ট্রেন কটায় ছাড়ে-রেল নিয়ে পুরোনো এ মশকরা এখন খাটে না। রেল নিয়ে কদিন নানান ঠাট্টা চলেছে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উজিরের চিরকুমারত্বের অবসানের কারণে। এরও আগে রেল আলোচিত হয় প্রয়াত মন্ত্রীর কালো বিড়াল কাহিনিতে। এবারের ঘটনা কিঞ্চিৎ ভিন্ন। ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে আন্তনগর ট্রেনগুলোকে ‘লোকাল’ করে ফেলছেন মন্ত্রী-এমপিসহ ক্ষমতাবানরা। পথে পথে স্টপেজ দেওয়াতে না পারলে এলাকার মানুষের কাছে তাদের মুখ থাকে না। ক্ষমতার তেজ প্রমাণ হয় না।
এ ক্ষমতাবাজির বিশেষ শিকার আন্তনগর ট্রেনগুলো। ক্ষমতাবানদের দাপটে শুধু চলতি বছরই ১২টি স্টপেজ যোগ হয়েছে। চাপাচাপি চলছে আরও ২৭টির জন্য। এক সিটি থেকে আরেক সিটিতে সরাসরি পৌঁছাতে এরশাদের আমলে চালু হয়েছিল আন্তনগর ট্রেন। সার্ভিসটি ছিল বেশ আকর্ষণীয়। শুরুতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বা সিলেটে চলাচলের সময় মাঝপথে কুমিল্লা বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ ট্রেন থামত। ১৯৯১ সালের পর শুরু হয় উটকো ক্ষমতাবাজি। হোমরাচোমরা নেতাদের তদবিরে তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ কয়েক জায়গায় স্টপেজ দিতে হয়। সেটি বাড়তে বাড়তে এখন উপজেলা শহর, এমনকি অখ্যাত জায়গায় এসেও ঠেকেছে। সেটা করতে পারা নেতার ক্ষমতার হেকমতের প্রমাণ।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ বাতিক নতুন মাত্রা পায়। গত ছয় বছরে আন্তনগর, মেইল ও ডেমু ট্রেনের এমন স্টপেজ যোগ হয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে চলতি বছরেই দেওয়া হয়েছে ১২টি। যাত্রাপথে এমন ঘন ঘন স্টপেজে নটার ট্রেন নটায় ছাড়লেও সুফল নেই। যাত্রীরা ত্যক্ত-বিরক্ত হলেও কারো কিছু যায়-আসে না। ক্ষমতার এ বাহাদুরিতে মন্ত্রী মহোদয়ই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? তার নির্বাচনী এলাকায় কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের গুণবতীতেও এখন আন্তনগর ট্রেন গোধূলি এবং মহানগর প্রভাতী থামতে হচ্ছে।
ক্ষমতার এ হেকমতে গত ৬ বছরে এ কিসিমের ২৯টি স্টপেজ কায়েম হয়েছে। আন্তনগর ট্রেন তূর্ণা, প্রভাতী, গোধূলি, জয়ন্তিকা, উপকূল, পাহাড়িকা, উদয়ন, পারাবতসহ বিভিন্ন ট্রেনের এমন স্টপেজে জ্বালানি খরচ ও লোকসান বাড়লেও নেতাদের ক্ষমতার বাহাদুরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এলাকার মানুষ নিশ্চিত হতে পেরেছে নেতার ক্ষমতার ধার-ভার সম্পর্কে। এ ধারা চলতে থাকলে দেশে আন্তনগর ট্রেনের ধারণাই পাল্টাতে হবে। ট্রেন বলতে বুঝতে হবে লোকাল ট্রেনকেই।
তুলনামূলক নিরাপদ, ভাড়া কম এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় সারা বিশ্বেই মানুষের কাছে রেল ভ্রমণের কদর বেশি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু একদিকে মেট্রোরেল, ডেমু ট্রেনের লোভ, আরেকদিকে ট্রেনের লোকাল ধারা চাঙার মাধ্যমে কোন বার্তা মিলছে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন