মোস্তফা কামাল
সাবধানতা বা সতর্কবার্তায় মাইন্ড করার একটি প্রবণতা সমাজে ব্যাপক। সতর্কবার্তায় সংশ্লিষ্ট তথা দায়িত্ববানরা তা হাড়ে হাড়ে টের পান। তুলনামূলক বেশি পান দমকল বাহিনীর কর্মকর্তা ও কর্মীরা। গতি, সেবা, ত্যাগের মন্ত্র নিয়ে কাজ করা এ বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় আগুন নেভানোর পাশাপাশি বিভিন্ন মহলকে যথাসাধ্য সতর্ক করে। পরামর্শ দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় পক্ষ তা আমলে নেয় না। বিরক্তও হয়।
অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে অনেক তফাত দমকল বাহিনীর। তারা কাজ করে যাচ্ছে নিজস্ব গতিতে। অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করে থাকে। অগ্নিকা- ও বিভিন্ন দুর্ঘটনাসহ যেকোনো ধরনের দুর্যোগে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা, দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা, রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা দেওয়ার মতো কাজগুলো করে ফায়ার সার্ভিস। বহুতল ভবন, শিল্পকারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের ছাড়পত্র প্রদান, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণে পরামর্শ ও মহড়া পরিচালনা এবং বেসামরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দায়িত্বও তাদের।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাম্প্রতিক অগ্নিকা-ের পর নতুন করে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ ঘটনাকে বলেছেন সতর্কবার্তা। কিন্তু সতর্কবার্তার কাজ তো ফায়ার সার্ভিস বহু আগেই করেছে। এর আগে, ২০১৬ সালে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল, রাজশাহী মেডিকেল বা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিকা-ের পূর্বাপরেও ফায়ার সার্ভিস হাসপাতালগুলোকে অগ্নিঝুঁকি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিল। সেই সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছিল ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালের তালিকাও। কিন্তু তেমন আমল মেলেনি। বিরক্তির ঘটনাও রয়েছে। অগ্নিনির্বাপণে হাসপাতালগুলোর কোনো কোনোটি কিছু সিলিন্ডার মজুদ আর মহড়া দেওয়া ছাড়া কোনো উদ্যোগই নেয়নি।
নির্দিষ্ট কোনো সময় না থাকলেও কর্তৃপক্ষ মঞ্জুর করলে ফায়ার সার্ভিস হাসপাতালগুলোতে অগ্নিনির্বাপক মহড়ার ব্যবস্থা করে। সতর্ক করে। চেষ্টা করে হাসপাতালের লোকজনকে প্রশিক্ষিত করার। কিন্তু এ সতর্কতা কতটা গ্রহণ করা হয়? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি হাসপাতাল ৬১০টি। আর বেসরকারি ৪ হাজার ৫৯৬টি। ফায়ার সার্ভিস ২০১৭ সালের প্রথম দিকে ঢাকাকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ঢাকার ৪৩৩টি হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়। তারা ২৪৮টি হাসপাতালকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৭৪টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধু, ঢাকা মেডিকেল, সলিমুল্লাহ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতীয় হƒদ্্রোগ, মানসিক স্বাস্থ্য, চক্ষুবিজ্ঞান, নিউরোসায়েন্স, অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউটের নাম।
তালিকায় সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয় জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালকে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও সতর্ক করা হয়েছিল। সতর্কবার্তার পরও তারা একাধিক চিঠি দিয়েছে হাসপাতালগুলোকে। মাস কয়েক আগেও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপক মহড়া হয়েছে। তখন হাসপাতালটির বিভিন্ন ঘাটতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু সতর্ক কি হয়েছে তারা? ঘাটতি কি পূরণ করেছে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন