রাঙামাটিতে ৩২ ঘন্টার হরতাল চলছে

ঠিকানা অনলাইন : পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা আহ্বানের প্রতিবাদে রাঙামাটিতে পাহাড়ের বাঙালিভিত্তিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের ডাকা ৩২ ঘণ্টার হরতাল চলছে।

আজ ৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে হরতাল শুরু হওয়া এ হরতাল চলবে বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত।

এর আগে সোমবার দুপুরে রাঙামাটি শহরের এক রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে হরতালের এই ঘোষণা দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদেরর চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান।

কাজী মুজিবুর রহমানের অভিযোগ, ভূমি কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ভূমি অধিকার কেড়ে নিতে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।

তিনি বলেন, “আমরা কমিশনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সমাধান হয়নি। তাই আমরা হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।”

এদিকে হরতালের সমর্থনে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল ও সমাবেশ করে। হরতালের কারণে শহরে সব ধরনের যান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ আছে। তবে সকাল থেকে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

হরতালের সমর্থনে চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পিকেটিং করতে দেখা গেছে। এ সময় তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। হরতাল সমর্থনে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ একাধিক জায়গায় বাধা দেয়।

রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার এসআই আশরাফ হোসেন বলেন, “সকাল থেকে এই পর্যন্ত শান্তিপূর্নভাবে হরতাল চলছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। কোথায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।”

যারাই জরুরি কাজে বের হয়েছেন তাদের হেঁটে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। হরতালের কারণে শহরের একমাত্র গণপরিবহণ অটোরিকশা বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শহরের সাথে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে জেলার সঙ্গে উপজেলার লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

বুধবার রাঙামাটি শহরের পার্বত্য জেলা পরিষদ ভবনে ভূমি কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে পার্বত্য ভূমি নিষ্পত্তি বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ২০০১ সালে পাশ হওয়া পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনী হয় ২০১৬ সালে। এরপর বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় থমকে ছিলো কমিশনের কাজ। আইন সংশোধনের পর কমিশন কাজ শুরু করে এবং বিরোধপূর্ন জমির মালিকদের কাছে দরখাস্ত আহ্বান করে। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিসহ নানা কারণে গত কয়েক বছর সক্রিয় দেখা যায়নি কমিশনকে। সম্প্রতি আবারও কাজ শুরুর প্রক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে কমিশনকে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার রাঙামাটিতে কমিশনের সভা আহ্বান করা হয়।

কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, “২০১৬ সালে ভূমি কমিশন সংশোধন করা হয়, সেখানে ৭ সদস্যরের মধ্যে ৫ জনই পাহাড়ি। এতে পার্বত্য অঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি বাঙালির কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এই আইনে আপিল করার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। যার ফলে এই অঞ্চলে বসবাসকারি বাঙালীরা ভূমি হারাবে।”

ভূমি কমিশনে সকল জাতিগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব রাখা, বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রম শুরুর আগে ভূমি জরিপ করা, সংবিধানের সঙ্গে সাংর্ঘষিক ভূমি কমিশনের ২০১৬ সালের সংশোধনী বাতিল, দেশের প্রচলিত ভূমি আইনে বিরোধ নিষ্পত্তি, কমিশনের কারণে ভূমিচ্যুতদের পার্বত্য চট্টগ্রামের খাস জমিতে পুনর্বাসন, ‘তথাকথিত’ রীতিনীতি প্রথার বদলে বিদ্যমান ভূমি আইনের প্রয়োগ ও ইতোপূর্বে বন্দোবস্তি বা কবুলিয়ত পাওয়া কাউকে ভূমির মালিকানা থেকে উচ্ছেদ না করার সাত দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।

ঠিকানা/এসআর