রাজছত্র ও ছেঁড়া ছাতা একই বৈকুণ্ঠের দিকে!

শরীফা খন্দকার

চার ঋতুর দেশে ক্যালেন্ডারের পাতায় বর্ষা নামে পৃথক কোনো কাল নেই বলেই বুঝি বরিষণ মুখরিত শ্রাবণ দিন নিয়ে কোনো গানও নেই । তারপরেও দিবস নিশিথের যখন তখন সঙ্গীতের মতো এক নামহীন বর্ষণ নামে । শীত বসন্ত গ্রীষ্ম বা শরতে এই নিউইয়র্কে বৃষ্টি ঝরে পত্রহীন বৃক্ষশাখায় ফুল ফোটাতে, ফল ধরাতে , শরতের বর্ণিল পাতাকে সমুদ্রের পানে উড়িয়ে নিতে, কখনো বা স্তুপিকৃত তুষারকে গলিয়ে নদী হয়ে যেতে । এই রকম এক দিনে বহু যুগের ওপার থেকে পেরিয়ে আসা এক আষাঢ়ের সুর কাজে ও অকাজে ঘরছাড়া করেছিল আমাকে। কিন্তু কে জানতো কিছুক্ষণ পরেই সেই হৃদয়টাকে দুম করে কাব্য শূন্য করে দেবে এক ঘটনা!
সেলে দেয়া ভিটামিন কিছু ট্যাবলেট বেছে নিচ্ছিলাম মনোযোগ সহকারে বাড়ির প্রায় কাছের এক ফার্মেসি থেকে। সেটি শেষ করে খুঁজতে গিয়ে দেখি ‘এমনি ঘন ঘোর বরিষায়’ প্রিয়তমের মতো অবলম্বন আমার ছাতাটি একেবারে নিরুদ্দেশ। এদিক সেদিক দেখা হলো , একোণ সেকোণ খোঁজা হলো -সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা ছোট মতো মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করা হলো -কিন্তু নেইতো নেই। যদিও সেটি কোনো রাজকীয় ছত্র ছিলোনা আবার তাকে ছেঁড়া ছাতাও বলা চলেনা। চার টাকা নিরানব্বই পয়সার নেহায়েতই এক মামুলি পুরোনো ছাতা। টাকা বললাম এই কারণে যে আমরা আমেরিকার অধিকাংশ বাঙালি ডলারকে স্বভাবত টাকাই বলে থাকি।
বালিকা এবং কিশোরী বয়সে স্কুলে ছাতা ও কলম টাকা পয়সা নানা কিছু হারিয়ে আমি পরিবার এবং পরিচিতদের মধ্যে রেকর্ড করেছিলাম। আজকালকার ছেলেমেয়েদের মতো আমাদের স্কুল জীবনে অসংখ্য জিনিসের মতো ছোটদের ছাতা ও কলম তাও আবার পাইলট কলম সুলভ ছিল না এবং টাকা পয়সার কথাতো না বলাই ভালো। স্কুলে সেই সব জিনিস খোয়া যাবার পর অত্যন্ত খারাপ মনে বাড়ি ফিরতাম। আত্মীয়স্বজন কঠিন ভাষায় বলতেন ‘ নানা-নানির আহ্লাদে এ মেয়ে স্পয়েল্ড হয়ে গেছে , কোনদিন ও নিজেই হারাবে !’ জীবনের কুসুম বনে আসলেও হারিয়ে গেছি হয়তো বারবার। কিন্তু এখানে উল্লেখ করতেই হবে এক বছর আগের কেনা উল্লেখিত ছাতাটি আজকে হারিয়ে যাবার আগে ইতোপূর্বে যে হারায়নি বা ভেঙে যায়নি। সেটা যদিও নিজের কাছেই বড়ই আশ্চর্যের বিষয়।
যাই হোক দুনিয়ার মানুষের কল্পলোকের দেশে চোর বাটপার নেই বলে বেশ নিশ্চিন্তেই দেশ থেকে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় এসেছিলাম। কিন্তু বাংলা প্রবাদেই বলে ‘যারে কোনদিন দেখিনি সে বড় সুন্দরী।’ যতদিন দেশ ছেড়ে প্রবাসে বসবাস করতে আসিনি ততদিন ধারণা ছিল বাংলাদেশ ছাড়া দুনিয়ার তামাম দেশ স্বর্গভূমি। আমেরিকায় কোনো চোর চোট্টা আমাকে আর ধাওয়া করবে না বিশ্বাস ছিল। কিন্তু সব মিথ ভেঙে দিয়ে আমাদের নিউইয়র্ক বাসের প্রথম রাতেই একজন বন্ধু বলেছিলেন পকেটে এবং ব্যাগে সবসময় দশ টাকার নোট রাখবেন এবং কেউ চাইলেই তার হাতে সেটা বিনা বাক্যে তুলে দিতে বাধ্য থাকবেন। কোনো প্রতিবাদ কিংবা সামান্য দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাসুল হিসেবে দেশ থেকে আনা পৈতৃক প্রাণটাও হারাতে হতে পারে। সেটা অবশ্য নব্বইয়ের শুরুতে রিসেসনকালীন কথা। নিউইয়র্কের জনাকীর্ণ স্থানগুলোর কোথাও এখনো সাবধান বাণী লেখা থাকে ‘তোমার নিজস্ব মূল্যবান সামগ্রী লোকচক্ষুর আড়ালে রাখ।’ কিন্তু চোরের চোখ এড়ানো যে খুব সহজ কথা নয় আমার মতো মানুষের। রাতে টাতে নয় এদেশেও দিনদুপুরেই নিশি কুটুম্বরা আমায় রেয়াত করেনি শুরু থেকে। বাড়ির কর্তা রসিকতা করে বলে থাকে ‘চেহারা দেখেই চোট্টাদের মালুম হয়!’
এই ব্যাপারটি অতি ক্ষুদ্র। কিন্তু দুঃখের কথা এই যে এমন ভরা বর্ষায় সেই এক বছরের সঙ্গী ছাতা ছাড়া বাড়ি যাব কি করে ? কেনাকাটা শেষ করে দরজার পাশে বাইরের মুষলধারে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর গত্যন্তর ছিল না। এই গেটটি দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার একটিমাত্র পথ। তাতেই কিছু পরে হঠাৎ চোখে পড়লো সেই মেরুন ছাতা – ছাতা নয় যেন ছত্র রূপে প্রাণের বধূয়া আনবাড়ি যাচ্ছে ‘আমার আঙ্গিনা দিয়া’ ! আমার নাকের ডগার ওপর দিয়ে, চোখের কোল ঘেঁষে রুক্ষ চেহারার এক তরুণ সেইপথ দিয়েই বেরিয়ে সেখানা মেলে ধরলো মাথার ওপর । মনে পড়লো কিছু আগেই এই ছোকরাটিকে ঘুর ঘুর করতে দেখেছিলাম আমার কেনাকাটার আইলটাতেই। তখন আপাত ভদ্র চেহারা দেখে কে জানত বেটা এক সুবেশী সিঁদকাটাটিকি। ছিঁচকে চোর একটু আড়ে আড়ে চেয়ে যেন মুচকি হেসে বীরদর্পে ক্রস করল সামনের রাস্তার এ মাথা থেকে ওমাথা। আর প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে ছেলেবেলার ছাতা হারানোর মতো শোক সেদিনও যেন একরকম উথলে উঠেছিল। এ জগতে রাজছত্র ও ছেঁড়া ছাতা যে একই বৈকুণ্ঠের দিকে চলে যায় কখনও কখনও! উভয়ের মাঝে যে কোন ভেদ নেই সেই ব্যাপারটা বুঝলাম মর্মে মর্মে সে মুহূর্তের তুমুল বর্ষণে। ঘরে ফেরা আছে, সুপার মার্কেটের কিছু জরুরী কেনাকাটার মতো নানারকম কাজ বাকি আছে। বৃষ্টিধারার অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কাব্য-টাব্য নয় খিঁচড়ানো মনে স্বভাবতই দুনিয়ার নানারকম চুরি জোচ্চুরির কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
এদেশে আমার প্রথম চুরি যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাকে ফ্রেঞ্চ কানেকশন বলা যেতে পারে। ফরাসি বুটিকের প্রায় ক্রেতাহীন এক দোকানে কর্মরত একটি মাত্র কম বয়সী ফরাসিনী গোছানোর ছলে কেন যে বার বার ধাক্কা মেরে যাচ্ছিল আমাকে বুঝতে পারিনি । ওর সুন্দর মুখ দেখে তো কস্মিনকালে কারও সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু পাশের আর এক দোকানে কেনাকাটার পয়সাকড়ি মেটাতে গিয়ে চমকে দেখি ব্যাগের ভেতরের টাকার পার্সটি উধাও । ফিরে গিয়ে বললাম- তুমি আমার পার্স চুরি করেছ। কারণ বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা এই দোকানেই এসেছিলাম আর এখানে তুমি ছাড়া কোন কাস্টমার পর্যন্ত ছিল না।
দেশে বিদেশে সর্বত্রই চোরের গলা বোধ হয় অনেক সুউচ্চ হয়। চোর মেয়েটি উল্টো ধমকে বলল- প্রমাণ আছে কিছু? ডাক না পুলিশ! জানতাম পুলিশ ডাকলে আসলেই কিছু হবে না হবে ফালতু হয়রানি। আপন মুখখানই তাই চোরের মতো করে বেরিয়ে এসেছিলাম।
সেই ফরাসিনীর পর আমেরিকান ‘তেনাদের’ খপ্পরে পড়েও আমি টাকা পয়সা রাখার পার্সটি খুইয়েছিলাম। এই তেনারা হলেন যাদের সম্মান করে সিনিয়র সিটিজেন বলা হয়। একদিন এক ভিড় ভাড়াক্কার মলে বার বার চাপাচাপি করে আমাকে পাশ কাটাচ্ছিলেন সিনিয়র কয়েকজন। কেনাকাটা শেষে পে করতে গিয়ে একইভাবে দেখি টাকার ব্যাগটি নেই। নিঃসন্দেহে ‘তেনারাই’ কেউ তুলে নিয়েছিলেন নিশ্চয়ই। এরপর থেকে পার্সে খুচরো পয়সা ছাড়া কিছু রাখি না। এখন টাকা থাকে হাতব্যাগের নানা খোপে-খাপে। শিক্ষা হলো পিঠে রাখা নয় ব্যাগটাকে আগলে রাখতে হবে হৃদয়ের কাছাকাছি! সম্ভবত বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশে ফেব্রুয়য়ারি মাসে ডেনিস রাষ্ট্রদূতের এক ব্যাগ চুরির কথা-যার জন্য নাকি দেশের মানুষের মাথা কাটা গিয়েছিল। লোকে গিজ গিজ করা বাংলা একাডেমির বইমেলা মঞ্চ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ভদ্রমহিলা তার মূল্যবান জিনিসপত্র সমেত হাতব্যাগটি কারোর জিম্মায় নয় নিজ চেয়ারে সযতেœ রেখে মঞ্চে আরোহণ করতে চলে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে তক্কে তক্কে থাকা একটি চোরগোষ্ঠী ব্যাগটি নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। যতদিন সেটি ফেরত না পাওয়া গেল সাংবাদিক ভাইয়েরা তো এমনভাবে ধিক্কার জানাচ্ছিলেন প্রায় সমগ্র জাতিকেই । অথচ ডেনমার্কে কিংবা ইউরোপের অন্য কোন দেশে এভাবে মূল্যবান ব্যাগ চেয়ারে ফেলে রেখে গেলে চুরি হবে হবেনা- সেটা কেউ শপথ করে বলতে পারবেন কি? ডেনমার্কে যাই নি কিন্তু ইংল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম খোদ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনতিদূরেই টেমস নদীর পুলের ওপর ক’জন বদ চেহারার লোক কিভাবে গাইয়া গোছের টুরিস্টদের সঙ্গে জুয়া খেলে তাদের সর্বস্বান্ত করছে। সেটা অবশ্য নব্বই দশকের ঘটনা। দেশের আর এক পুরনো সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে নিউইয়র্ক ঘুরে গেছেন রোমে। একরাতে ইতালিয়ান পুলিশের ভেক ধরে একদল দুর্বৃত্ত সার্চ করার নামে হাপিশ করল তাদের সমুদয় অর্থ।
ইন্টারনেটের জমানাতো বহুদিন যাবৎ বিশ্বময় চোর বাটপারের জন্য মহোৎসব ডেকে এনেছে । বেশ ক’বছর আগে ইংল্যান্ড থেকেই একটা ইমেইল এসেছিল আমাদের কাছে বাংলাদেশে বসবাসকারী এক বন্ধুর কাছ থেকে। যিনি নাম করা একজন সাংবাদিক নেতা। ইমেইলে জানা গেল তিনি লন্ডনে ট্যুরে এসে ব্যাগসহ টাকাকড়ি খুইয়ে ভীষণ বিপদে। সম্ভব হলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে কিছু টাকা পাঠিয়ে তাকে যেন উদ্ধার করি। কি ভেবে দেশে ফোন করা হলো তাঁর স্ত্রী র কাছে। তিনি সবিস্ময়ে জানালেন তার স্বামীতো ঢাকাতেই এবং এমনকি তার পাসপোর্টটি অবধি রাখা আছে পাশের আলমারিতে। তার স্মামীর ইমেইল হ্যাক করে সব বন্ধুদের কাছেই এমন মেইল পাঠানো হয়েছে।
কাছাকাছি সময়ে একজন টিভি ব্যক্তিত্ব হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফোন করে বললেন, তিনি মার্কিন এক নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ পেয়েছেন। তবে প্রথম অবস্থায় চার হাজার ডলার তাকে পে করতে হবে। আমরা দুজনেই এটাকে জালিয়াতির চেষ্টা বললে তিনি অত্যন্ত মনোক্ষুণœ হয়েছিলেন। তবে কি ভেবে টাকাটা আর জমা দেননি। যদিও সসঙ্কোচে পরবর্তীতে খবর দিয়েছিলেন একজন মার্কিন- চাইনিজ নাকি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেজে এভাবেই বাংলাদেশে গিয়ে প্রতারণা করে বহু টাকা হাতিয়ে এনেছিল।
সারা দুনিয়ায় এমনি করে বিচরণ করছে ছোট বড় নানান ধরনের চোর। কিন্তু ধর্মস্থানেও কি জোচ্চরের হাত থেকে রক্ষা আছে? আর এক বন্ধু সাংবাদিক, গিয়েছিলেন পবিত্র হজ্বে । সেখানে একদিন দেখা হলো তিন সন্তানসহ একজন বিব্রত পাকিস্তানীর সঙ্গে।
ভদ্রলোক নাকি টাকা কড়ি খুঁইয়ে মহাবিপদে। দেশে খবর দিয়েছেন এবং কালকেই টাকা আসবে। পরশু ঠিক এই জায়গাতেই তিনি টাকাটা ফেরত দেবেন। সাংবাদিক সাহেব অবশ্য সেটা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু রাতেই তাঁর সঙ্গী ধর্মপ্রাণ মানুষ সচিবের মুখে শুনলেন, এরকম একজনকে টাকা দিয়ে শিকার হয়েছেন প্রতারণার। সে লোক টাকা ফেরত দেবার করাল করেও আর ফিরে আসেনি।
অবশ্য চৌর্য বৃত্তিতে কিছু পাকির বদনাম আছে নানা দেশে। এক ভদ্রলোক তার জাপানে রেল ভ্রমণের গল্প বলতে গিয়ে শোনালেন এমন এক কথা। তিনি জাপান ভ্রমণের সময় ট্রেনের কামরায় ফেলে রেখে গিয়েছিলেন তার অত্যন্ত মূল্যবান ক্যামেরাখানা। এটা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা জানালেন ‘তোমার কামরায় যদি কোন পাকিস্তানী না থেকে থাকে তবে সেটা নিশ্চয়ই ফেরত পাওয়া যাবে ।’
এই নিউইয়র্ক নগরে নানারকম অকাজ-কুকাজ করে পাকিরা । কোরানিক শিক্ষা দেয়ার নাম করে পর্যন্ত টেলিফোনে ধান্দাবাজি করতে দ্বিধা নেই। কিন্তু এদিক দিয়ে খেটে খাওয়া সাধারণ প্রবাসী বাঙালির অনেক সুনাম শোনা যায়। বহু ট্যাক্সিচালক সিটে ফেলে যাওয়া যাত্রীদের অনেক মূলবান সম্পদ নির্দ্বিধায় ফেরত দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন নগর কর্তৃপক্ষের। অবশ্য শিক্ষিত এবং বিত্তবান কিছু বাঙালির প্রসঙ্গ আজ আর তুলতে চাইছি না।
বিগত কয়েক বছর বাসায় বাসায় ফোন আসার বন্যা বয়ে গিয়েছিল আইআরএস মানে আয়কর বিভাগ থেকে। আমাদের বাসাতেও একজন অতি কুৎসিত ভঙ্গিতে মেসেজে রেখেছে নাম ধরে! আমি নাকি আমার ট্যাক্স রিটার্নে পাওনা ট্যাক্স ঠিকমতো পে করিনি। ধমক দিয়ে টাকার একটা অঙ্ক দিয়ে সে জানিয়েছে তার দেয়া এই অ্যাকাউন্ট নম্বরে যথা শীঘ্রই সেটা পাঠাতে। নইলে এদেশ থেকে বের করে দেয়া হবে।
আমাদের তো তখন ট্যাক্স রিটার্ন করা হয়নি। আসলে এ ব্যাপারে আমরা দুজনে একটু লেট লতিফ গোছের। রিটার্ন দাখিলের তখন বাকি ছিল তিনদিন এবং পরের দিনই সেটা করার কথা। পুলিশের কাছে ফোন করে জিজ্ঞেস করে জানলাম, বাড়ি বাড়ি এই রকম বেধড়ক ফোন করা হচ্ছে এবং টিভিতে শোনা গেল অনেকে ভয়ে ডরে হাজার হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে এই প্রতারক চক্রের হাতে।
তক্কে তক্কেই ছিলাম। দুদিন পরে আবার সেই ফোন এবং একই কণ্ঠস্বরের লোক ধমক দিয়ে কথা শুরু করলো। সাথে সাথে মাথায় যেন আগুন জ্বলল। তার কথা শেষ হওয়ার আগেই জীবনে মুখ দিয়ে যা উচ্চারণ করিনি তাই বলে চিৎকার করলাম – ‘ইউ সান অব আ বিচৃৃ শাট আপ। … ।’কোৎ করে কিম্ভুত এক শব্দ করে লোকটি মুহূর্তের মধ্যে ছেড়ে দিল ওপারের ফোন।
বাস্টার্ড শব্দটা অবশ্য ব্যবহার করিনি কারণ এদেশে ওদের আবার আদর করে বলা হয় ‘লাভ চাইল্ড।’
-নিউইয়র্ক।