ঠিকানা অনলাইন : আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) যুক্তরাজ্যের মহামান্য রাজা তৃতীয় চার্লস ও কুইন কনসোর্ট ক্যামিলা ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্ক ও ব্রিক লেইন পরিদর্শনে আসছেন। রাজা তৃতীয় চার্লস ও তার স্ত্রী ক্যামিলার এই ঐতিহাসিক সফরের আয়োজন করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী পাওয়ার এন্ড ইন্সপিরেশন-বিবিপিআই-এর প্রতিষ্ঠাতা আয়েশা কোরেশী এমবিই জেপি ও কাউন্সিলার আবদাল উল্লাহ।
বিবিপিআই এই সফর সফলের লক্ষ্যে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং সেই সাথে ব্রিক লেইন বিজনেস এসোসিয়েশন ও ব্রিক লেইন জামে মসজিদ ট্রাস্টের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে।
রাজা ও কুইন কনসর্ট এই সফরকালে ১৯৭০-এর দশকে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী টাওয়ার হ্যামলেটস বারার বর্ষীয়ান বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলিত হবেন।
রাজকীয় অতিথিরা স্থানীয় চ্যারিটি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে জানতে চাইবেন কোভিড-১৯ এর কারণে তাদের কার্যক্রমে গুরুতর বিপর্যয়ের কথা।
মহামান্য রাজা ও কুইন কনসর্ট বিবিপিআই জামদানী নেটওয়ার্কের নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও পরিচিত হবেন, যারা স্থানীয়, জাতীয় এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে কমিউনিটি সমূহের উন্নয়নের জন্যে ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজন্যবর্গ ব্রিক লেইন মসজিদ পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে তাঁদের সফরের সমাপ্তি টানবেন। এখানে তাঁরা মসজিদ ভবনের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হবেন। উল্লেখ্য, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের অনুসারী তিনটি ধর্মমতে বিশ্বাসীদেও উপসনালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ভবনে।

রাজা চার্লস ও তার স্ত্রী ক্যামিলার এই ঐতিহাসিক সফর নিয়ে কাউন্সিলার আবদাল উল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী আইনজীবী আয়শা কুরেশি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির কাছে ব্রিক লেইন শুধুমাত্র একটি সড়কের চাইতেও অনেক বেশি কিছু। আমাদের আধ্যাত্মিক বসতি ব্রিক লেইনে আমাদের কমিউনিটির সঙ্গে মিলিত হতে মহামান্য রাজা ও কুইন কনসর্ট আসছেন জেনে আমরা বিনীত, উদ্বেলিত, যা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির কাহিনীগুলো তাঁদের সামনে তুলে ধরার অপেক্ষায় আমরা আছি’।
আলতাব আলী পার্ক আলতাব আলী ছিলেন ২৫ বছর বয়েসী এক বাংলাদেশী যুবক। ১৯৭৮ সালের ৪ মে তিনি কাজ শেষে ঘরে ফেরার সময় তৎকালীন সেইন্ট মেরীজ পার্ক সংলগ্ন এডলার স্ট্রিটে তিন কিশোর তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। তাঁর স্মৃতির স্মরণে ১৯৯৮ সালে সেইন্ট মেরীজ পার্কের নতুন নামকরণ করা হয় আলতাব আলী পার্ক। ব্রিক লেইনের কাছে অবস্থিত আলতাব আলী পার্ক এখন স্থানীয় কমিউনিটির কেন্দ্রবিন্দু। এখানে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শহীদ মিনার। এই মিনারে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করা হয় ভাষা আন্দোলনের শহীদ ও স্বাধীনতার পথে বাংলাদেশের মানুষের দুর্বার যাত্রার ইতিহাস। ব্রিক লেইন ব্রিক লেইনের অবস্থান ইস্ট এন্ডের প্রাণকেন্দ্রে। লন্ডনের সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যমন্ডিত এবং সুপরিচিত সড়কগুলোর অন্যতম হচ্ছে ব্রিক লেইন। ইতিহাস জানায়, এখানে বসতি ছিলো ফ্রান্সের হিউগেনট জনগোষ্ঠির, বসতি ছিলো ইহুদী ইমিগ্র্যান্টদের, এখন এটি বাংলাদেশী কমিউনিটির কেন্দ্রস্থল। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বসবাসরত মোট বাংলাদেশী মানুষের প্রতি ছ’ জনের একজন টাওয়ার হ্যামলেটসে বসবাস করেন। এই বারায় বাংলাদেশী মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩ জন, যা টাওয়ার হ্যামলেটসের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩৪ দশমিক ৬ ভাগ। সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের পাশাপাশি ব্রিক লেইন এখানকার খাবার ও খ্যাতনামা কারী রেস্টুরেন্টগুলোর জন্যে প্রসিদ্ধ। ব্রিক লেইনের দক্ষিণ ভাগে ছোটখাটো যে অংশ জুড়ে বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টগুলো অবস্থিত সে অংশটিই বাংলা টাউন নামে পরিচিত। বাংলা টাউনে প্রতি বছর অনেকগুলো উৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বৈশাখী মেলা, ব্রিক লেইন ফেস্টিভ্যাল ও কারী ফেস্টিভ্যাল।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ বাংলাদেশী পাওয়ার এন্ড ইন্সপিরেশন (বিবিপিআই) হচ্ছে ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির অগ্রপথিক, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও রোল মডেলদের প্রচার ও উদযাপন এবং ইতিবাচক রোল মডেলদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার একটি প্ল্যাটফরম। আবদাল উল্লাহ ও আয়েশা কোরেশী এমবিই বিবিপিআই-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বিবিপিআই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-ট্রাস্টি। আবদাল পরিবর্তনের লক্ষ্যে সুপরিচিত এক সক্রিয় কর্মী যিনি স্থানীয় ও জাতীয় ইস্যুসমূহ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। লন্ডনের বিভিন্ন সংগঠনে তিনি সিনিয়র এক্সিকিউটিভের দায়িত্ব পালনও করেছেন। আয়েশা পেশায় একজন আইনজীবি হিসেবে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন। লন্ডন অলিম্পিক আয়োজনের উদ্যোগ সফল করতে তাঁর অনন্যসাধারণ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৬ সালে তাঁকে এমবিই খেতাবে ভূষিত করা হয়। লন্ডনে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও আয়েশা দায়িত্ব পালন করছেন।
ঠিকানা/এসআর