রানো নেওয়াজের গানে মুগ্ধ সবাই

ঠিকানা রিপোর্ট: প্রবাসে এখন অনেক শিল্পী। কিন্তু ভালো শিল্পীর অভাব সব সময়ই ছিলো। তারপরেও যে সব ভালো শিল্পী রয়েছেন তাদের নিয়ে একক সঙ্গীত সন্ধ্যার কেউ আয়োজন করে না। তারা সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে।

সেই সব অনুষ্ঠানে সাধারণত প্রবাসের শিল্পীরা একটি বা দুটো সঙ্গীত পরিবেশন করার সুযোগ। একটি বা দুটো সঙ্গীতের মাধ্যমে একজন শিল্পীকে সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করা যায় না। প্রবাসে যেসব শিল্পী রয়েছেন তাদের মধ্যে রানো নেওয়াজ একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী। এই শিল্পীকে নিয়েই শো টাইম মিউজিক এন্ড প্লে একক সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করেছিলো।

সুন্দর এই অনুষ্ঠানটি গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে অনুষ্ঠিত হয়। অবাক করা বিষয় ছিলো প্রবাসে এই ধরনের অনুষ্ঠানে দর্শক খরা দেখা যায় কিন্তু শিল্পী রানো নেওয়াজের অনুষ্ঠানে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। পুরো অডিটোরিয়াম ছিলো দর্শকে টইটম্বুর। হল ভর্তি দর্শক দেখে শিল্পী রানো নেওয়াজই বললেন, এত মানুষ দেখে আমি নিজেই অভিভূত, সেই সাথে কিছুটা ভয়ও পাচ্ছি। তার এই ভয়ের ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায় প্রথম দুটো গানে। দুটো গান পরিবেশন করার পর শিল্পী তার আসল রূপে ফিরে আসেন।

তিনি পুরো অনুষ্ঠানে প্রায় ১৬টি গান পরিবেশন করেন। তৃতীয় গানটি থেকে শিল্পী তার মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তার চমৎকার পরিবেশনে সবাই ছিলেন মুগ্ধ। যারাই গান শুনতে এসেছেন তারা সবাই ঠাঁই বসেছিলেন শেষ পর্যন্ত। তবে একটি কথা বলে রাখা ভাল, ফোক গানগুলো শিল্পী চমৎকারভাবে পরিবেশন করেছেন। মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন, সবার হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। মঞ্চও তৈরি করা হয় ভিন্ন আঙ্গিকে। যা সবার ভালো লেগেছে। কারণ প্রবাসে এই ধরনের অনুষ্ঠানে এমন সুন্দর মঞ্চ এর আগে তৈরি হয়নি। শিল্পীকে সঙ্গীতে বিভিন্ন যন্ত্রাণাংশে সহযোগিতা করেছে মাটি ব্যান্ড।

দুই পর্বে বিভক্ত এই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে ছিলো অতিথি কাউন্সিলম্যান কাস্টার বক্তব্য এবং শিল্পীকে প্রক্লেমেশন প্রদান। যদিও অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন এনওয়াই ইন্স্যুরেন্সের প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ এবং শো টাইম মিউজিকের প্রেসিডেন্ট আলমগীর খান আলম।

শাহ নেওয়াজ বলেন, এই অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য আলমগীর খান আলমকে ধন্যবাদ। এ ছাড়াও এই অনুষ্ঠানকে সফল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। তিনি বলেন, ছোট মানুষের বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন থাকতো বড় হয়ে সে কী হবে। আমি কোন দিন চিন্তা করিনি শিল্পী হবার কথা, কিন্তু আজকে যে অবস্থা দেখছি তাতে আমার মনে হয় শিল্পী হওয়াই ভালো ছিলো।

আলমগীর খান আলম বলেন, প্রবাসে আমি দীর্ঘ দিন ধরেই ঢালিউডসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। এবার ঢালিউড এওয়ার্ড অনুষ্ঠান আগামী মাসে আটলান্টিক সিটিতে হবে। ঢালিউডে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ। তিনি আরো বলেন, প্রবাসে সাধারণত আমি এই ধরনের অনুষ্ঠান খুব একটা করি না। তবে প্রতি মাসে এখন থেকে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে আমি একক সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করবো।

এই অনুষ্ঠানের শুরুতে সাঈদ রহমান মান্নানের জন্য ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত।

অনুষ্ঠানে শিল্পী ছাড়াও কম্যুনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এটর্নী মঈন চৌধুরী, মূলধারার রাজনীতিবিদ আব্দুস শহীদ, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, ক্রীড়া সম্পাদক নওশাদ হোসেন, কার্যকরি সদস্য আজাদ বাকির, সরওয়ার খান বাবু, সাবেক কর্মকর্তা তোফায়েল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম রুমি, একেএম রফিকুল ইসলাম ডালিম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক গোলাম এম হায়দার মুকুট, জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি শেখ হায়দার আলী, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সাবেক সভাপতি বেলাল চৌধুরী, বৃহত্তর নোয়াখালি সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি আমিন খান জাকির, মোস্তাক আহমেদ, শিল্পী শাহ মাহবুব, সেলিম ইব্রাহিম, রুবিনা শিল্পী, মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, শাহরিন সুলতানা, কান্তা আবীর, তানভীর শাহীন, নূরুজ্জমান লাল্টু, ইশতিয়াক রুমি, হাসান জিলানী, নূরুল হক প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন আশরাফুল হাসান বুলবুল।

উল্লেখ্য, ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীতে হাতে খড়ি নিজ বাড়িতেই। চট্টগ্রাম রেডিও ও শিল্পীকলা একাডেমিতে সঙ্গীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেন। তার সঙ্গীত গুরু ছিলেন উচ্চাঙ্গে মিহীর লালা, নজরুল সঙ্গীতে সৈয়দ আনোয়ার মুফতি ও লোক সঙ্গীতে ওস্তাদ আব্দুর রহিম এবং বর্তমানে তালিম নিচ্ছেন পন্ডিত অনুপ বড়ুয়া। অচিরেই কিছু মৌলিক গান নিয়ে তার একটি অ্যালবাম বাজারে আসছে।