রিওগ্র্যান্ড নদীতে ভেসে গেলো হৃদয়-নাঈমের আমেরিকার স্বপ্ন

ঠিকানা রিপোর্ট : শাহাদাত হোসেন নাঈম তার ফেইস বুকে লিখেছিলেন- ’আমি ক্লান্ত, আমি বিধ্বস্ত, তবুও হার মানার নয়! স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে যেতে হবে বহু দূর, বিশ্বাস একদিন এই কষ্ট, এই পরিশ্রম স্বার্থক হবেই। ইনশাআল্লাহ।’ তার এ আত্মবিশ্বাস আমেরিকায় আসার পথে রিওগ্র্যান্ড নদীতে ভেসে গেল। চুরমার হয়ে গেলো তার ও তার পরিবারের সব স্বপ্ন। সাথে আরো এক বাংলাদেশি যুবক নাঈমুল ইসলাম হৃদয়েরও লাশ মিললো একই নদীতে, দুদিন আগে আর পরে। এ কেমন মর্মান্তিক মৃত্যু? স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় আসার জন্য দালাল ধরেছিলো তারা। অনেকেই এ পথে আসতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। মাথা গোঁজার শেষ জমিটুকু বিক্রি করে যাত্রা করেছিলেন অনিশ্চিতের পথে। নাঈমের বাবা নেই, মা আছেন। ছেলের এই মর্মস্পর্শী মৃত্যুর খবর শুনে তিনি এখন হাসপাতালের বেডে।
জানা গেছে, দুজনই বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান। নাঈমদের অবস্থা একটু সচ্ছল। হৃদয় আফ্রিকায় বেড়াতে এসেছিলো। আমেরিকা প্রবাসী এক আত্মীয়ের কথা শুনে সেও দালাল ধরে আমেরিকায় আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! বিভিন্ন দেশের জেল-জুলুম, বন-পাহাড়, সাপ-বিচ্ছুর সাথে লড়াই করে সারাক্ষণ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে স্বপ্নের দেশ আমেরিকার সীমান্ত পর্যন্ত এসেছিলেন তারা। মেক্সিকো-টেক্সাস সীমান্তের রিওগ্র্যান্ড নদীতে বাংলাদেশি এই দু যুবকের লাশ পাওয়া যায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। দু’জনের বাড়িই নোয়াখালিতে। শাহাদাত হোসেন নাঈমের বাড়ি সোনাইমুড়ির দেউটি গ্রামে, আর নাঈমুল ইসলাম হৃদয়ের বেগমগঞ্জে। হৃদয়ের পরিবার খুবই গরিব। একমাত্র সম্পত্তি বিক্রি করে এ পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। দুই বোনের একজনের বিয়ে হয়েছে।
ড্রামের সাংগঠনিক পরিচালক কাজী ফৌজিয়া জানান, টেক্সাসের ওয়েস্ট কাউন্টির চিফ মেডিক্যাল এক্সামিনার ড. কার্নই ইস্টার্ন গত ১৫ মে অমাকে ই-মেইল করে জানিয়েছেন, গত বছর আরমান নামে এক বাংলাদেশিকে সনাক্ত করতে আপনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন। আজকেও আমি আপনাকে লিখছি, এ দুই বাংলাদেশিকে শনাক্ত করার জন্য। কারণ আমি ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিলাম, তারা আমাকে কোন সহযোগিতা করেননি। সুতরাং আপনি আমাকে সাহায্য করুন। এ দুই যুবকের মৃত্যু কয়েকদিন আগে হয়েছিলো। তাদের লাশ পচে গিয়েছে। তারা বর্তমানে টেক্সাসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একটি মর্গে রয়েছে।
কাজী ফৌজিয়া বলেন, আমি সাহেদ আলমসহ আরো কয়েকজনের সহযোগিতায় তাদের চিহ্নিত করি এবং দুই পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করি এবং লাশ পাঠানোর জন্য নোয়াখালি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টুর সাথে যোগাযোগ করি।
জাহিদ মিন্টু জানান, আমরা দু’জনের চাচা এবং মামার সাথে কথা বলেছি। দু’পরিবারেই এখন শোকের মাতম। তারা লাশ চাচ্ছে। এদিকে আমরা লাশ পাঠানোর জন্য সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, লাশ হাতে পাওয়া মাত্রই আমরা তা দেশে পাঠিয়ে দেবো। তবে আশা করছি আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লাশ পাঠাতে পারবো। তিনি আরো বলেন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি লাশ রিলিজ করলে এবং বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ক্লিলিয়ারেন্স নিয়েই আমরা লাশ বাংলাদেশে পাঠাবো।