রিজার্ভের সঠিক অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি : বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিট ও মোট হিসাব করে বাংলাদেশ। নিট হিসাব থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ (ইডিএফ) বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থ বাদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের গ্রস বা মোট হিসাবটাই প্রকাশ করে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফের মধ্যে বিতর্ক চলছে। এ বিতর্ক শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সুরক্ষা মূল্যায়নের একটি খসড়া প্রতিবেদনে বিদেশি সম্পদের ভুল শ্রেণিকরণ চিহ্নিত করে আইএমএফ। এই ভুল শ্রেণিকরণের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের আকার বড় হয়েছে বলে দাবি করে আসছে আইএমএফ। পরে গত বছরের ৩ থেকে ১৪ অক্টোবর আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরের সময় হিসাব-পদ্ধতি পরিবর্তন করে রিজার্ভের হিসাব করার পরামর্শ দেয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে যা সংশোধন করার কথা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো নিজেদের পদ্ধতি অনুসরণ করছে। সেই হিসাবে ইডিএফকে সরবরাহ করা সাত বিলিয়ন ও শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার রিজার্ভে দেখাচ্ছে। এ ছাড়া গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি, লং টার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানত রিজার্ভে দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে রিজার্ভে যে অর্থ দেখানো হচ্ছে, সেখান থেকে ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে বলে মনে করে আইএমএফ। অর্থাৎ আইএমএফের পদ্ধতি অনুসরণ করে রিজার্ভ হিসাব করলে বর্তমান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশ করা মোট ৩৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ থেকে ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। এতে রিজার্ভ নেমে দাঁড়াবে ২৭ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। সভার এক ফাঁকে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। আলোচনায় বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার আশ্বাস পাওয়া যায়। তবে এ ঋণ তিন কিস্তিতে দেওয়া হতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় আইএমএফের প্রতিনিধি দল গত ২৬ অক্টোবর ১৫ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছে।
পক্ষব্যাপী সফরের দ্বিতীয় দিন ২৭ অক্টোবর নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ। সংস্থাটির সঙ্গে কয়েকটি সেশনে বৈঠক হয়। এবার ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে এসে আইএমএফের কর্মকর্তারা বেশ জোরালোভাবেই রিজার্ভের বিষয়টি তুলে ধরে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের শর্ত হিসেবেই যুক্ত করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, সকাল থেকে দিনভর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ছয়টি সেশনে বৈঠক করে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। এর মধ্যে তিনটি সেশনেই আলোচনা হয় রিজার্ভের হিসাব-পদ্ধতি নিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের হিসাব-পদ্ধতিতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে এখন থেকে আইএমএফের কাছে তথ্য পাঠানোর সময় প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য পাঠানো হবে। এর পর থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঠিক অঙ্ক কত, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।