জান্নাতুল ফেরদৌসী মেহমুদ :
বর্তমান সময়ের অস্থির পৃথিবীতে ব্যস্ততার জাঁতাকলে আমাদের ছোট্ট সুন্দর সম্পর্কের অনুভূতিগুলো মাটিচাপা পড়ে যায়। নিজের অজান্তেই দিনের পর দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। একপর্যায়ে এসে মরিচা পড়ে এই সুন্দর জীবন্ত সম্পর্কগুলোতে। চলুন আজ তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই হাজারো ব্যস্ততার ভিড়ে সম্পর্কগুলোকে কীভাবে মজবুত রাখতে হবে, যা আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। কারণ দিন শেষে দেখা যায়, আসলে সম্পর্কটাই কিন্তু সত্যি।
যেকোনো সম্পর্কের মজবুত ভিত্তির মূল চাবিকাঠি হলো একে অপরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় দেওয়া। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আজকালকার এই যুগে একে অপরকে সময় দেওয়ার মতো সময়ই আমাদের নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা বেশির ভাগ সময় যেকোনো সম্পর্ককে ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’ হিসেবে নিয়ে থাকি। কিন্তু সেই ভুলের মাশুল দিতে দিতে অনেক সময় দেখা যায়, অনেক বেশি দেরি হয়ে যায়। তখন ওই সম্পর্কটাকে ঠিক করার আর কোনো উপায় থাকে না। তাই একে অপরের প্রতি যত্নশীল হওয়া খুব বেশি জরুরি।
কারণ মনে রাখবেন, যুগের পরিবর্তন হয়েছে। আপনার পার্টনারের ছোট ছোট সুখ-দুঃখের কথা যদি আপনি সময় নিয়ে না শোনেন, আশপাশে কিন্তু মানুষের অভাব নেই তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য, চোখের জল মুছে দেওয়ার জন্য, কাছে টেনে নেওয়ার জন্য।
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক, এই কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা একে অপরের জন্য কীভাবে সময় বের করব এবং সেটাকে কীভাবে সঠিকভাবে কাজে লাগাব। সকাল থেকেই শুরু করা যাক, ধরুন দুজনই কর্মজীবী। বাসা থেকে বেরিয়ে কর্মব্যস্ত দিন শুরু করার আগে দুজনে একসাথে নাশতা করতে পারেন। যদি সময় না থাকে, তাহলে একে অপরের জন্য অতি যত্নের সাথে আলতো হাতে মগে করে চা বা কফি বানিয়ে দিতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার সঙ্গী যতবার এই পানীয়তে চুমু দিয়ে পান করবে, ততবারই আপনার কথা স্মরণ করবে।
কাজের ফাঁকে যদি সুযোগ হয়, ফোনটা তুলে কল করতে দ্বিধাবোধ করবেন না। বেশি কিছু নয়Ñকেমন আছ, কী করছ, লাঞ্চ করেছ কি না, এসবই যথেষ্ট। কারণ এগুলো হচ্ছে তার প্রতি আপনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। যদি ফোন করে কথা বলার সুযোগ না থাকে, তাহলে ‘আই লাভ ইউ’ কিংবা ‘আই মিস ইউ’ টেক্সট করতে কিন্তু বেশি সময় লাগে না। এ ধরনের ছোটখাটো কিছু ইনিশিয়েটিভ নিয়ে অতি সহজেই কিন্তু মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। আপনার সঙ্গীর প্রতি আপনার অনুভূতিগুলো যদি আপনি প্রকাশ করতেই ব্যর্থ হন, তাহলে কিন্তু সেই সম্পর্কটা থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না। কর্মব্যস্ততার কারণে সারা সপ্তাহ সময় না পেলেও উইকেন্ডে একসাথে সময় কাটান, একে অপরকে সময় দিন।
অনেক সময় দেখা যায়, জব বা স্টাডিকে কেন্দ্র করে আমাদেরকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হয়। তখন যেটা মেনটেইন করতে হয়, তার নাম হচ্ছে ‘লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ’। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে এখন ভিডিও কল সেই দূরত্বের ইতি টেনেছে। অনলাইনের সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে খুব সহজে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোতে জানান যে তাকে মনে পড়ছে। নিমেষেই তার সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
একে অপরের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে জানুন, একে অপরকে গুরুত্ব দিন, ভালোবাসুন। একে অপরের পরিপূরক হোন। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি যদি আপনার সঙ্গীর ভালোবাসার পুরোটা ঘাটতি পূরণ করতে পারেন, শুধু তখনই তার হৃদয়ে অন্য কারো জন্য জায়গা থাকবে না। পৃথিবীটা ভালোবাসার হোক, এই সুন্দর ধরায় মানুষ মানুষকে ভালোবেসে আজীবন বেঁচে থাকুক।
লেখক : কলামিস্ট ও ব্লগার। মেরিল্যান্ড