মোস্তফা কামাল : শিশু শ্রেণিতে ’দ্বারা-দিয়া-কর্তৃক’-এর পাঠ-পঠন মাঝেমধ্যে বেশ কাজে লাগছে। তা বুঝেও, না বুঝেও। বিশেষ করে লেখালেখিতে। কার জন্য, কাকে দিয়ে, কাকে নিয়ে এসবের তফাৎ তালাশ করতে গেলে লেখা বেশ সাবলীল হয়ে যায় আপনা আপনি। সাবজেক্টও হয়ে যাচ্ছে ঝরঝরে। গোলমালটা বাঁধে উদ্দেশ্য-বিধেয়তে গিয়ে। তাই বলে লেখা থমকে যাবে? বন্ধ করে দেবো?
রোহিঙ্গাদের নিয়ে লিখতে-বলতে গেলে ভাবতে হয় কোন অংশ দিয়ে শুরু করতে হবে? কাকে নিয়ে, কাকে দিয়ে, কি জন্য, কার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে ঠাঁই হয়েছে তাদের? এসেছে কার মাধ্যমে? রাখাইনে নীপিড়নের শিকার হয়ে হঠাৎ কোনো এক রাতে তারা বাংলায় এসে আছড়ে পড়েছে- বিষয়টা শুধুই এমন?
কিচ্ছাটা এমন হলেও এর আগে-পিছের ঘটনাগুলো আস্তে-ধীরে কম-বেশি এখন অনেকের জানা হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আমদানিকারকদের মতলবও জানার বাইরে থাকছে না। তাদের দিয়ে, তাদের নিয়ে কতো হিসাব, কতো অংক কতো জনের! এই হিসাব এবং অংক না মেলাতে গণ্ডগোলও পাকছে। সেটা ঢাকতে গিয়ে সামনে আনতে হচ্ছে বাড়তি কতো কথা। ঘটনাও কি কম ঘটাতে হচ্ছে?
রোহিঙ্গাদের ঘিরে এনজিও ব্যবসাও বেশ জমেছে। ব্যবসাটি টিকিয়ে রাখতে দেশি-বিদেশি আয়োজনও কি কম? রাস্তার দু’ধারে সুসজ্জিত বাড়িতে এসি, গিজার লাগানো অফিসে এনজিওদের কীসব কর্মযজ্ঞ? সরকারি হিসাবে ১০-১১ লাখ বলা হলেও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রকৃত সংখ্যা জানার অবস্থা এখন আর আছে?
রোহিঙ্গারা সবাই ক্যাম্পে থাকে না। কক্সবাজার বা বাংলাদেশেও থাকে না। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। সৌদিসহ বিশ্বের আরো কিছু দেশেও চলে যাচ্ছে বাংলাদেশি পাসপোর্টে। মাঝেমধ্যে মিয়ানমারও ঘুরে আসছে। এই আসা-যাওয়া কেবল হাওয়া খাওয়ার জন্য নয়। রোহিঙ্গা কারবারে গত বছর কয়েকে স্থানীয় অনেকেও কোটিপতি। দেশি-বিদেশি অন্যান্য মহলের হিসাব আরো চড়া-কড়া। রোখা যাচ্ছে তাদের?
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার নামে সরকারি-বেসরকারি জমি দখল ও আশ্রয়-বাণিজ্য করে যে যার মতো লাভ হাতিয়েছেন। কারো ঘর পুড়েছে, কেউ ওই আগুনে আলু পোড়া খেয়েছেন। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা এ দেশের জনস্রোতে মিশে গেছে। তাদের শনাক্ত করার অবস্থা কঠিন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এখন কেবল খেসারত টানার পালা। রোহিঙ্গা অনেকে এখন নিজ দেশে ফেরৎ যেতে রাজি নয়। এখানে থাকতে বেশি স্বস্তি তাদের। আর ফেরৎ যেতে ইচ্ছুকরাও যেতে চাইলেই যেতে পারবে, সেই অবস্থা কী আছে?
মিয়ানমার ফিরতে আগ্রহী চার রোহিঙ্গা পরিবারের ২৩ সদস্যের দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআরের খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার খবরটির মাজেজা বোঝাও কি কঠিন? প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের রাজি করানোর দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের এখন কী অবস্থা যাচ্ছে ভাবা যায়? মিয়ানমার ফিরতে রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদেরই মানসিক কী দশা?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।