রোহিঙ্গা রেজুল্যুশন বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ওয়াশিংটন-বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা

ঠিকানা রিপোর্ট : নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত রোহিঙ্গা-বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সভাটিতে ব্রুনেই দারুসসালাম, কানাডা, জিবুতি, মিসর, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি এবং অন্যান্য পর্যাযের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তা ছাড়া জাতিসংঘে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসির স্থায়ী পর্যবেক্ষণ মিশনের রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে সাউথ সাউথ কো-অপারেশন বিষয়ে মন্ত্রি পর্যায়ের একটি নতুন ফোরাম প্রতিষ্ঠার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে ‘সাউথ সাউথ কো-অপারেশনকে আরো দৃঢ়তর করার প্রত্যয়ে একটি নতুন মন্ত্রি পর্যায়ের ফোরাম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব’ বিষয়ে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আলোচনায় যোগ দেন তিনি। বৈঠকে আর্জেন্টিনা, চীন, কিউবা, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালাউই, মরক্কো, নেপাল, ফিলিপাইন, রুয়ান্ডা, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সলোমন দীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
অন্যদিকে ২৪ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। সাক্ষাৎকালে জাতিসংঘ মহাসচিব চলমান বৈশ্বিক সংঘাত, আর্থিক, জ্বালানি ও খাদ্য সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। মি. গুতেরেস জানান, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসে সারের কাঁচামালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে, যা বাংলাদেশ সাশ্রয়ী মূল্যে আমদানির কথা বিবেচনা করতে পারে। মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগানোর কথা বিবেচনা করবে। সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের ওপর গৃহীত রেজুল্যুশনের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সংকট এবং এর সম্ভাব্য উত্তরণের উপায় নিয়েও আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মহাসচিব। তারা এই সংকট সমাধানে আসিয়ানের কার্যকর নেতৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে মহাসচিব ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং মিয়ানমারে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিষয়ক একটি রেজুল্যুশন (২৬৬৯) গৃহীত হয়। এতে মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যাসহ রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের বিষয়টিও বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিগত বছরগুলোতে নিয়মিতভাবে রোহিঙ্গা-বিষয়ক রেজুল্যুশন পাস হয়। নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদের রোহিঙ্গা-বিষয়ক এই রেজুল্যুশনগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জোরালো আহ্বান জানানোই ছিল এই সভার মূল উদ্দেশ্য।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য প্রদানকালে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সফলতা না আসায় হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি এর ফলে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের নিরাপত্তাঝুঁকির আশঙ্কার কথা পুনরুল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মতো ছোট আয়তনের দেশে বিশাল জনসংখ্যাসহ অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার ওপর মিয়ানমার থেকে আগত ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি গৃহীত রেজুল্যুশনের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ানের নেতৃত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন।
সভায় বক্তারা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তারা আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যের সফল বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন। তা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা।
এ ছাড়া ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক সাব-কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেগরি মিক‌েসর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার বিষয়াবলি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নিজস্ব ভবন উদ্বোধন
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবনের উদ্বোধন হয়েছে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ভবন উদ্বোধনের পর কনস্যুলেটের বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় লস অ্যাঞ্জেলেসের বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। উন্নয়নের এই ধারায় তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরো বেশি সম্পৃক্ত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্যুলার কার্যক্রম ও কনস্যুলেট ভবনটি পরিদর্শন করেন। একই দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বর্তমান সরকার বিনিয়োগবান্ধব যে পরিবেশ নিশ্চিত করেছে, তার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।