‘প্রায় মাসখানেক আগে আমি বাংলাদেশের কয়েকটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি ভয়ানক। তাদের বিশ্বাসের কারণে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া অব্যাহত থাকায় আমাদের অবশ্যই আরও বেশি সাহায্য করতে হবে।’
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সম্প্রতি পরিদর্শন করে যাওয়া এক শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক ওয়াশিংটনে ফিরে তাদের অবস্থা ভয়ানক বলে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক অ্যামবাসেডর অ্যাট লার্জ স্যাম ব্রাউনব্যাক এক সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই বর্ণনা করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্রাউনব্যাক একথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে কংগ্রেস অনুমোদিত বার্ষিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। সাংবাদিক সম্মেলনে আলাপচারিতায় ব্রাউনব্যাক জানান তিনি মিয়ানমার সফরের অনুমতি পাননি। এমনকি মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি বলার মতো মানুষদেরও তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা।
ব্রাউনব্যাক বলেন, আমি মিয়ানমারে প্রবেশ, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছিলাম। মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর সমস্যা থাকলেও ওই অঞ্চলে সমস্যা বেশি বলেই সেখানে যেতে চেয়েছিলাম। তবে আমাকে সেসব অনুমতি দেয়া হয়নি। তারা আমাকে মিয়ানমারে যেতে দেওয়ার অনুমতি দিলেও যেসব স্থানে যেতে চাই, যেসব মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাই তার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না আপনারা দেশটিতে এই ঘটনার কোনও উন্নতি দেখছেন। যদি একটু কিছু হয় তাহলে সরকার তার দ্বিগুণ করে দেখায়। ব্রাউনব্যাক বলেন, রোহিঙ্গাদের চলমান অবস্থা মারাত্মক। বর্ষা মৌসুম চলে এসেছে। মাসখানেক আগে আমি যখন সেখানে ছিলাম তখন সেখানে ডিপথেরিয়ায় ৩৮টি শিশু মারা গেছে।
বাংলাদেশ সফরের সময়ে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে আলাপচারিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে উপস্থিত ২০ শিশুর চারজন বলেছে তাদের নিকটাত্মীয়কে খুন করা হয়েছে। আরেক শিশু তার ভাইকে মারাত্মক আহত হতে দেখেছে। রোহিঙ্গা শিবিরে এমন তথ্য প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এই মারাত্মক সমস্যার দিকে বিশ্বের মনোযোগ দরকার। যদিও বিশ্বের অনেকের মনোযোগ এর ওপর রয়েছে, তবে আমি মনে করি সেখানে বিশ্বের আরও কার্যকর পদক্ষেপ দরকার।
কংগ্রেস সমর্থিত ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টানদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রায়ই জমি দখল ও তাড়িয়ে দেওয়া থেকে রক্ষা করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব সংখ্যালঘুর অনেকেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যালঘু।
সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও গ্রাম্য নেতারা প্রায়ই স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মিলে বিচারবর্হিভূত ফতোয়া ব্যবহার করে নারী ও অন্য মানুষদের ওপর নৈতিক অন্যায় নিপীড়ন চালাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
স্থানীয় সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের বরাতে রিপোর্টে বলা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘ঐতিহ্যগতভাবে অসাম্প্রদায়িক’ পাঠ্যপুস্তকগুলোতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এসব পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে অমুসলিম লেখকদের বাদ দেওয়া, ইসলামিক বিষয়বস্তু যুক্ত করা। ধর্মীয় স্থাপনা, উৎসব এবং সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে এমনসব সম্ভাব্য অনুষ্ঠানে সরকার নিরাপত্তা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে বলেও বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
২০১৭ সাল জুড়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু ও বৌদ্ধদের ওপর হামলা হয়েছে উল্লেখ করে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং প্রকাশ্য বিবৃতিতে দেশটিতে মার্কিন দূত ও অন্যান্য দেশের দূতাবাস ধর্মের নামে সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলা অব্যাহত রেখেছে। তাদের পক্ষ থেকে সরকারকে সংখ্যালঘুদের অধিকার সমুন্নত রাখা এবং সহিষ্ণুতার পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।