লক্ষ্মীপুরে প্রবাসীকে প্রকাশ্যে কোপালেন যুবলীগ নেতা

ঠিকানা অনলাইন : লক্ষ্মীপুরে সৌদি প্রবাসী আফসার উদ্দিন আসিফ ও জসিম নামের দুজনকে প্রকাশ্যে কোপালেন ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা নুরউদ্দিন। মোটরসাইকেল না দেওয়ায় তাদের ছুরি দিয়ে কোপানো হয় বলে অভিযোগে ওঠে। এ ঘটনার পর গত ৬ আগস্ট হামলার শিকার জসিম উদ্দিনের বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

অভিযুক্ত নুর উদ্দিন সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৩০ জুলাই দুপুরে সদর উপজেলার আবুর গোজা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু গত দুই দিন ধরে হামলার দুই মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

এদিকে এ ঘটনায় মামলা হলেও ২০ দিনে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে মামলা তুলে নিতে বাদীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হামলার শিকার প্রবাসী আফসার উদ্দিন আসিফ ও জসিম উদ্দিন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, নুরউদ্দিন এলাকায় চুরি ও ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সৌদি প্রবাসী আফসার উদ্দিন আসিফ ও জসিম উদ্দিন ৩০ জুলাই দুপুরে আত্মীয় আবুল কাশেমের বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে লক্ষ্মীপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। সদর উপজেলার আবুর গোজা এলাকায় মোটরসাইকেলটি পৌঁছালে নুরউদ্দিনসহ অন্যরা মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। পরে মোটরসাইকেলটি দিতে বলে। এ সময় আফসার উদ্দিন মোটরসাইকেল দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে নুর উদ্দিন ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় আহত জসিম উদ্দিনের বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। এতে ওই এলাকার নুর উদ্দিন, ফয়েজ আহম্মদ, বেল্লাল আহমেদ, সোহেল হোসেনের নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

প্রবাসী আফসার উদ্দিন আসিফ বলেন, ‘আমার সাথে নুরউদ্দিনের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি বিদেশে থাকি। নুরউদ্দিন যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ঘটনার দিন হঠাৎ আমার পথরোধ করে মোটরসাইকেল দিতে চাপ দেয়। এতে রাজি হইনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি ছুরি দিয়ে আমার মাথা লক্ষ্য করে কয়েকটি কোপ দেয়। পরে হাত দিয়ে সেগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। এতে হাত-পেটে কোপ লাগে।’

আফসার উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমার কী দোষ, সেটাও জানি না। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আসার পর গত দুই দিন ধরে মামলা তুলে নিতে অপরিচিত কয়েকটি নম্বর থেকে ফোন আসে। যদি মামলা তুলে না নিই, তাহলে লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।’

উদ্বেগ প্রকাশ করে আফসার উদ্দিন বলেন, ‘এত দিনেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। তাদের ভয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কে আছি। বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

এদিকে হামলার স্বীকার জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, নুরউদ্দিন পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় চারজনকে চিনতে পারলেও বাকিদের চিনতে পারিনি। মামলা দায়েরের ২০ দিন পার হলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তাদের হুমকি-ধমকিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।

এ বিষয়ে লাহারকান্দি ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক তফসির উদ্দিন জানান, নুরউদ্দিন ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে কোপানোর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ নিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল জানান, আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। আশা করি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত নুরউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হবে।

ঠিকানা/এনআই