লন্ডনে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ

ঠিকানা ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৃটেন সফরের প্রতিবাদে লন্ডনের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে কমপক্ষে আড়াই লাখ মানুষ। এতে যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা জেরেমি করবিনও। যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লালগালিচা অভ্যর্থনা দিয়েছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, সেখানে লাখ লাখ মানুষ তাকে বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা। গত ১৩ জুলাই, শুক্রবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৪দিনব্যাপী বৃটেন সফরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। ‘স্টপ ট্রাম্প’ নামের একটি সংগঠন এ বিক্ষোভের আয়োজন করে।
বিক্ষোভকারীরা মধ্য লন্ডনের রাস্তায় দিনভর প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা স্লোগানে স্লোগানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘বিশ্বাসঘাতক-হিংসুক-স্বৈরশাসক’ বলে অভিহিত করেন। মিছিলে ‘ঈশ্বর, রানীকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত থেকে রক্ষা করো’- লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
সাবেক মার্কিন নৌবাহিনীর নারী সেনা ট্রিক্সি মনক্স বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বৃটেনে চলে আসেন। এখন বৃটেনে তাদের শান্তি বিনষ্ট করতে এখানে চলে এসেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি ট্রাম্পের ‘জিরো টলারেন্স’ অভিবাসন নীতিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সমালোচনা করেন।
৩৯ বছর বয়সী এ নারী বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছেন। তিনি আমাদের মিত্রদের আক্রমণ করছেন, আর পুতিন যা যা চাইছেন সব দিয়ে দিচ্ছেন।’
টম আগার নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, শুধু জাতীয়তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকদের নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ট্রাম্প বর্ণবাদীর পরিচয় দিয়েছে।
এদিকে, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে চেকারসে তার সরকারি বাসভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বকে বিশেষভাবে পুনর্ব্যক্ত করেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এর প্রতিক্রিয়ায় জানান, কোনোভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বাস করা যায় না। তিনি নিজের ইচ্ছামতো সবকিছু করতে পারেন। তিনি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর যে কোনো দেশের জন্য হুমকি। লালগালিচা অভ্যর্থনা দেয়ায় তেরেসা মে’রও সমালোচনা করেন তারা।
স্কটল্যান্ডেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ : স্কটল্যান্ডে হাজার হাজার মানুষ ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। এ বিক্ষোভের মধ্যেই স্কটল্যান্ডে পা রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটেনে দু’দিনের সফর শেষে স্থানীয় সময় ১৩ জুলাই, শুক্রবার, রাতে স্কটল্যান্ডে পৌঁছান তিনি। ট্রাম্পের মা ছিলেন একজন স্কটিশ নাগরিক। স্কটল্যান্ডে দু’দিনের ব্যক্তিগত সফরে গেছেন ট্রাম্প। সেখানে আইরসায়ারে তিনি তার টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে অবকাশযাপন করেন।
ট্রাম্পের স্কটল্যান্ডে পা রাখার খবর শুনেই গ্লাসগোর জর্জ স্কোয়ারে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। টার্নবেরিতে বড় প্যারাসুট ব্যানার ওড়ানো হয়। তাতে লেখা ছিলোÑ ‘ট্রাম্প গড়পরতার চেয়েও খারাপ।’ ‘দ্য স্কটল্যান্ড ইউনাইটেড আগেইনস্ট ট্রাম্প’ নামের একটি গ্রুপ জানিয়েছে, তাদের ধারণা, গ্লাসগোতে প্রতিবাদে তারা প্রায় তিন হাজার লোককে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো স্কটল্যান্ডের মানুষ যে ট্রাম্পকে অপছন্দ করে, তা জানিয়ে দেয়া।
ব্রিটেন সফরে রাজকীয় রীতি ভঙ্গ করে সমালোচনায় ট্রাম্প : ব্রিটেন সফরে রাজপরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে রাজকীয় রীতি ভেঙে সমালোচনার মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সামরিক জোটÑ ন্যাটোর সম্মেলনে যোগ দিয়ে ব্রিটেনে চার দিনের সফর করছেন। তিনি অন্তত তিনবার রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজকীয় প্রটোকল লঙ্ঘণ করেছেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
গত ১৩ জুলাই, শুক্রবার, এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প রানীর সাথে সাক্ষাতে গিয়ে তার প্রটোকল লঙ্ঘণ এবং অপমান করেছেন। প্রথমত, ট্রাম্প উন্ডসর ক্যাসলে রানীর সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে ১০মিনিট দেরিতে উপস্থিত হয়ে তাকে অপেক্ষারত রেখেছেন। দ্বিতীয়ত, উভয়ে হেঁটে রাজকীয় সৈন্যদের গার্ড অব অনার নেয়ার সময় ট্রাম্প রানীর আগে হেঁটে তাকে পেছনে রেখে রাজকীয় রীতিনীতির অবমাননা করেছেন।
অন্যদিকে, রাজকীয় কোরিয়গ্রাফির জন্য অগ্রসর হওয়ার সময় রানীর সামনে যেতে ডান পায়ের পরিবর্তে বাম পায়ে গমন করেছেন, যা তাদের রীতিনীতি ও সম্মানের চরম লঙ্ঘন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের : ন্যাটো সম্মেলনের প্রথম দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোটভুক্ত দেশগুলোকে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। গত ১২ জুলাই, বৃহস্পতিবার, সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আফগান সঙ্কট মোকাবিলা নিয়ে ন্যাটো নেতৃবৃন্দের আলোচনা হয়।
ন্যাটো সম্মেলনের প্রথম দিনে ২৯টি দেশের এই জোটের সদস্য দেশগুলোকে নিজেদের জিডিপির চার শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বাড়াতে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে জোটের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে সদস্য দেশগুলোর জিডিপির দুই শতাংশ ব্যয় বাড়ানো। দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় ইউরোপের দুই দেশ- জর্জিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয় জোট নেতাদের। দুই দেশই পশ্চিমা এ সামরিক জোটে যোগ দিতে আগ্রহী।
সম্মেলন শুরুর আগেই ন্যাটো মহাসচিব জিন্স স্টোলটেনবার্গ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে পর্যন্ত আফগান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন।
২০০১ সালে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের অভিযান শুরু হয়। কিন্তু গত ১৭ বছরেও শেষ হয়নি সেই যুদ্ধ। এখন এ ব্যাপারে কৌশলগত পর্যালোচনার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আফগান বাহিনীর সহায়তায় দেশটিতে অতিরিক্ত আরও তিন হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে থেকে দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে আরো ১২ হাজার মার্কিন সেনা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সম্মেলনের প্রথম দিন ১১ জুলাই নিশ্চিত করেন, তার দেশ আফগানিস্তানে আরও ৪৪০ সেনা মোতায়েন করবে।
সম্মেলনের প্রথম দিনে ন্যাটো মহাসচিব জিন্স স্টোলটেনবার্গ আশা প্রকাশ করেন, পশ্চিমা এই সামরিক জোট ২০২৪ সাল পর্যন্ত আফগান নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর জন্য তহবিল যোগাতে সম্মত হবে।