লায়ন্সের সভায় বাগ্্বিতণ্ডাধ, বাকি ছিল চুলোচুলি

ঠিকানা রিপোর্ট : প্রবাসে বিরোধপূর্ণ অনেক আঞ্চলিক সংগঠনের কাতারে শামিল হয়েছে নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাব। আসন্ন নির্বাচনে ভোটার করা নিয়ে কোন্দলের আভাস পাওয়া গেছে। আর এই কোন্দল এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে গত ৭ জুন মঙ্গলবারের সভায় তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হলেও দিন দিন রেষারেষি যেন বাড়ছে। ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা মুশকিল, এমন মন্তব্য করেছেন বেশ কয়েকজন সদস্য বা লায়ন।
এদিকে আগামী ২০ জুন মঙ্গলবার নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের নেতৃত্বের নির্বাচন। এই নির্বাচনে আন-অফিসিয়ালি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন সাবেক সভাপতি শাহনেওয়াজ। এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাসান জিলানি পুনরায় থাকতে চান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী এএসএম রাসেল।
লায়ন্স ক্লাব একটি অরাজনৈতিক সেবামূলক সংগঠন। ১৯১৬ সালে মেলভিন জন্স কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালের মধ্যে সারাবিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন সদস্য নিয়ে ৪৬ হাজার হাজার স্থানীয় ক্লাব গঠিত হয়। নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাব এমন একটি স্থানীয় ক্লাব। সাধারণত, ক্লিন ইমেজের লোকজন লায়ন্স ক্লাবের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের বেশকিছু সদস্য আছেন, যারা কমিউনিটিতে নানান কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত। অনেকে দাগী আসামীও। তাদের কেউ অপরাধ ঢাকতে, আবার কেউ অপরাধের শাস্তি কমাতে সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসাবে লায়ন্স ক্লাবের সদস্য হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লায়ন্স ক্লাবের কয়েকজন সিনিয়র সদস্য জানান, সংগঠনের বিধিমালা অনুসরণ না করে আঞ্চলিক সংগঠনের মতই লায়ন্স ক্লাব পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে সদস্য হবার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। নেতৃত্ব বাগিয়ে নিতে মনগড়া সদস্য করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় লোকদেখানো সামাজিক কর্মকাণ্ড চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বা লায়ন জানান, শুরুতে সংগঠনটি ভালো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অযোগ্য ও দুষ্টু লোকেরা ঢুকে পড়ায় সংগঠনটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এখন নেতৃত্ব একপ্রকার বিক্রি হচ্ছে।
গত ৬ জুন মঙ্গলবার জ্যাকসন হাইটসের ইটজি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সভায় ভোটার তালিকা নিয়ে যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে তা অসহনীয় ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বেশ কয়েকজন সদস্য। তারা বলছেন, লায়ন্স ক্লাবের একটি সভায় যে ধরণের ডিসিপ্লিন থাকার কথা ছিল তা মানা হয়নি। সভায় ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রথমে বিতর্ক হয়েছে। পরে এ নিয়ে দুজন নারী সদস্যের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এই দৃশ্য বেশ কয়েকজন সদস্য ভিডিও করেছেন। তাতে দেখা গেছে, দুজন নারী সদস্যের মধ্যে চুলোচুলি বাকী ছিল। আর সবই হয়েছে সেখানে। ক্লাবের কয়েকজন কর্মকর্তার পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ওই ভিডিওতে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন সদস্য বলেন, চালচুলোহীন কিছু লোক ঢুকে পড়েছে লায়ন্স ক্লাবের নেতৃত্বে, যারা কর্মহীন। নিজেরা চলতে পারে না। অন্যের অর্থ বিনাশ করে সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করে তারা। লায়ন্স ক্লাবের বাইরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তাদের আর কোনো পরিচয় নেই। এসব লোকের হাত থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি সংগঠনকে রক্ষা করার সময় এসেছে।
এদিকে ৬ জুন মঙ্গলবারের পর ১৩ জুন মঙ্গলবার জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে পুনরায় লায়ন্স ক্লাবের সভা হয়েছে। সেখানে আগের সপ্তাহের বিষয় উঠে আসে। এ নিয়ে আলোচনা করার পর কয়েকজন সিনিয়র সদস্যের হস্তক্ষেপে সবকিছু স্বাভাবিক হয়।
উল্লেখ্য, ২০ জুন মঙ্গলবার নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের ভোটার হয়েছেন ৭২জন। এই সংখ্যার তারতম্য হতে পারে বলে জানা গেছে।