লিখিত অঙ্গীকার চায় জামায়াত-হেফাজত

নিজস্ব প্রতিনিধি : বিএনপি সরকার পতন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে নতুন করে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। এই আন্দোলন হবে অভিন্ন কর্মসূচিতে জোটগত। পৃথক সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মহাসমাবেশ এবং পরবর্তী ধাপে আসবে হরতাল। লাগাতার দু-তিন দিনের হরতাল এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় অবরোধ। চূড়ান্ত ধাপে দেশের অর্থনীতি অচল করতে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দরগুলোতে প্রথমে নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য অবরোধ এবং শেষ ধাপে দীর্ঘ সময়ের জন্য অবরোধ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে কোন কোন দল নিয়ে জোট হয়েছে বা হচ্ছে, তা আজ পর্যন্ত খোলাসা করেনি বিএনপি। দৃশ্যত সাত দলের সমন্বয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ হয়েছে। এই জোটের মূল নেতা জেএসডির আ স ম রব জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত নাম হলেও তিনি সমাদৃত নন। নিজ নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের কাছেও তার তেমন একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই। শেখ হাসিনার বদান্যতায় মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। কিন্তু নির্বাচনী এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়নকাজ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও করেননি, পরবর্তীতেও করেননি। তিনিই এখন জোটের প্রধান নেতা সেজেছেন। অবশ্য নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণের সঙ্গে তার তেমন একটা সম্পর্ক না থাকলেও বড় দুই দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপির টিকিট বা সমর্থন পেলে জয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
জোটের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় নেতা ডাকসুর সাবেক জিএস, ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। জাসদের সাবেক এই নেতা পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান এবং আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচনে জয়ীও হন। পরে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রাখা এবং শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগবিরোধী ভূমিকার তথ্য পাওয়ার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে বিএনপির সর্বাত্মক সমর্থন পেলে বগুড়া থেকে তার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা জোনায়েদ সাকী। বাম ধারার রাজনীতির মানুষ হলেও ক্ষমতালিপ্সা তার প্রচুর। দুবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন। দুবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এবার বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার আশায় বামপন্থীদের নিয়ে জোট গঠন করেছেন।
রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল জাতীয় রাজনীতিতে মেননের বিকল্প হতে চান! সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়ার মতো নিধিরাম সর্দার হলেও বিএনপির বদান্যতায় জাতীয় পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী। নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা নেই, নির্দিষ্ট স্বল্পসংখ্যক কর্মী ছাড়া কেউ নেই। ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের সংগঠন বলতে কিছু নেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার পুত্র- এই পরিচয়ই সম্বল রেজার। নির্বাচনী এলাকার লোকজন জানে না, তেমন একটা চেনেও না। ডাকসুর সাবেক ভিপি হিসেবে নুরুল হকের কিছু বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষী রয়েছে।
উল্লিখিত সংগঠনগুলোর কারোই নিজস্বভাবে হাজার লোকের, এমনকি কয়েকশ লোকের কর্মী-সমর্থকের সমাবেশ ঘটানোর মতো সাংগঠনিক, রাজনৈতিক শক্তি-সামর্থ্য নেই। এরাই সরকার উৎখাতের অন্যতম শক্তি। জাতীয় রাজনীতিতে রব-মান্নার পরিচিতি থাকলেও তাদের তেমন কোনো প্রভাব নেই।
অন্যদিকে ধর্মীয় দলগুলো এখনো জোটগতভাবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ ঘটায়নি। ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতসহ অন্তত পাঁচটি ধর্মীয় সংগঠন বেরিয়ে যাচ্ছে। খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন প্রভৃতি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল জোট গঠন করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এই জোট বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে বা বিএনপির নেতৃত্বে নতুন কোনো জোটে যাবে না। তবে বিএনপির দাবি অনুযায়ী অভিন্ন কর্মসূচিতে জোটগত সমান্তরাল কর্মসূচি পালন করবে তারা। বিএনপির সঙ্গে ধর্মীয় এই সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক-আদর্শিক অভিন্নতা না থাকায় এদের সঙ্গে সরকার পতনের আন্দোলন সফল করে আগামীতে জোটবদ্ধভাবে গভীর সমঝোতায় নির্বাচন ও সরকার গঠনের বিষয়টি বিশাল প্রশ্ন হয়ে আছে।
জামায়াত-হেফাজত-খেলাফতসহ অন্য ধর্মীয় সংগঠনগুলো শর্ত সাপেক্ষে বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হওয়ার কথা জানিয়েছে। ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করে রাখার পাশাপাশি জামায়াতের আন্দোলনে শরিক হওয়া কতটা বাস্তবসম্মত ও ঝুঁকিমুক্ত, তা নিয়ে বিএনপিতেই প্রশ্ন উঠেছে। আগামী নির্বাচনে তাদের কোন কোন নির্বাচনী এলাকায় কতগুলো আসনে ছাড় দেওয়া হবে, তার প্রকাশ্য সুস্পষ্ট ঘোষণা চেয়েছে জামায়াত ও হেফাজত। এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। তবে সম্মত সমঝোতা ও লিখিত অঙ্গীকারনামা চাচ্ছে তারা। এ ছাড়া তারা বিএনপির সঙ্গে রাজপথে শরিক হলেও তা কত দিন স্থায়ী হবে, তাও প্রশ্নসাপেক্ষ।