লিবিয়ায় চার শ’ডলারে মানুষ বিক্রি

বিশ্বচরাচর ডেস্ক : উন্নত জীবনের মোহে আফ্রিকা থেকে ইউরোপের পথে পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রতিদিন শত শত শরণার্থী অপহƒত হচ্ছে। পরে তাদের বিক্রি করে অপহরণকারীরা আয় করছে হাজার হাজার ডলার।
শুধু তাই নয় এসব শরণার্থীর উপর চলছে ধর্ষণ এবং হত্যাযজ্ঞ। আর এসব ভয়াবহ ঘটনাগুলো সংঘটিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লিবিয়াতে। গত ২৮ জানুয়ারি কাতারভিত্তিক বার্তাসংস্থা আল জাজিরা ও আমেরিকার সাপ্তাহিক পোর্টাল নিউজউইকের দুই পৃথক প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
রিপোর্ট বলছে, সুদান, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়রা দালাল ধরে বিভিন্ন পথে লিবিয়ায় এসে জড় হয়। সেখান থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার মতে বর্তমানে লিবিয়াতে প্রায় ৭০ লাখেরও বেশি অভিবাসী অবস্থান করছে। আফ্রিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে বাঁকে বাঁকে ফাঁদ পেতে বসে থাকে মানব পাচারকারী চক্রের দালালেরা। তাদের কাছেই একেবারে পানির দরে শরণার্থীদের বেঁচে দেয় দালালরা।
সবচেয়ে বড় চক্র হচ্ছে লিবিয়ায়। যেখানে ওঁৎ পেতে রয়েছে অপহরণ চক্রের মতো ভয়াবহ গোষ্ঠী। এই অপহরণ চক্রের কাজ হচ্ছে শরণার্থীদের জিম্মি করা কিংবা অন্য কোনো অপরাধ চক্রের কাছে আটককৃতদের দিগুণ দামে বিক্রি করে দেয়া। ত্রিপোলির ‘বড় হাটে’ সর্বনি¤œ চারশ’ ডলারেও বিক্রি করা হয় তাদের।
১৮ বছর বয়সী ইরিত্রিয়ান শরণার্থী সামিকে সুদান থেকে একদল অপহরণকারী অপহরণ করে লিবিয়া ১৫০০ ডলারে লিবিয়াতে অন্য এক দলের কাছে বিক্রি করে দেয়।
সেখানে দিনের পর দিন তাকে অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়। তারা প্রতিনিয়ত সামিকে লাঠি দিয়ে মারত কিংবা গায়ে গরম তেল ঢেলে গা পুড়িয়ে দেয়া হতো, এমনকি কখনও তাকে বৈদ্যুতিক টর্চার করা হতো টাকার জন্য।
সামি জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি আমাকে একটি মাত্র রুটি খেতে দিত তারা, এক গ্লাস পানি খেতে চাইলেও তারা আমাকে মারত। আমাকে অত্যাচার করার সময় আমার মাকে ফোন করে আমার চিৎকার শোনাত।
ওরা আমার একমাত্র বন্ধুকেও আমার চোখের সামনে বৈদ্যুতিক টর্চারের মাধ্যমে মেরে ফেলে। আমিসহ অন্যদের এমন এক বাড়িতে রাখা হয় যেখান থেকে প্রতিদিন কানে ভেসে আসত হাজারও নারী-শিশুদের ধর্ষণের চিৎকার।
প্রতিদিন হাজার হাজার পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের একসঙ্গে ট্রাকে করে নিয়ে আসত এবং তাদের কথা না শুনলে তারা গুলি করে মারত।
সামির মা অপহরণকারীদের মুক্তিপণের টাকা দেয়ার পর তারা তাকে সেখান থেকে আজ-জাহিয়া সমুদ্রে ছেড়ে দিয়ে আসে। সেখান থেকে তাকে কোস্ট গার্ড ত্রিপোলিতে নিয়ে আসে এবং পরে তাকে ইরিত্রিয়ান পাচারকারীদের কাছে ১২২৫ ডলারে বিক্রি করে দেয়। সেখানেও তার উপর চলে পাশবিক অত্যাচার।
টাকা ছাড়া তারা কোনো প্রকার খাবার দিত না এবং অপহরণকারীরা এবার তার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২২০০ ডলার দাবি করে। সামিকে সেখানে দুই মাস অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয় তারপর এক দিন সে পালিয়ে এক মসজিদে আশ্রয় নেয় এবং খাদেমের চাকরি করতে থাকে।
জোনাথান তেক্লে (২৪), সামির মতো তাকেও সুদানের বর্ডার থেকে অপহরণ করে খাবতুম স্থানে নিয়ে আসে এবং সেখানে তার কাছে ১৬০০ দলার মুক্তিপণ দাবি করে।
সেখানে সে হোটেল ক্লিনার হিসেবে দিন-রাত কাজ করে তাদের টাকা পরিশোধ করার পর তাকে লিবিয়াতে ছেড়ে দিয়ে আসে। লিবিয়াতে আসার পর জোনাথানকে একদল পোশাক পরিধানকারী দল আটক করে এবং তার কাছে ৫০০০ ডলার মুক্তিপণ দাবি করে।
টাকা না দিতে পারায় তাকে অন্য একদল শরণার্থীদের সঙ্গে একটি বড় কনটেইনারের ভেতর আটকে রাখা হয় মাসের পর মাস। জোনাথান বলেন, ছয় মাস তাদের একটি অন্ধকার কনটেইনারের ভেতর আটকে রাখা হয়।
অনেক মানুষ থাকার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হতো। একবেলা খাবার আর পানি দিত আর প্রস্রাব-পায়খানা সেখানেই করতে হতো তাদের।