শক্তিশালী করা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন

অনুমোদন পেল ২ হাজার জনবল নিয়োগ প্রস্তাব

ঢাকা : দ্রুত অনুমোদন পেল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জনবল নিয়োগ প্রস্তাব। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইসিকে আরও শক্তিশালী করতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে নতুন দুই হাজার তিনটি পদ সৃজনের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই জনবল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে।

এর মধ্যে ক্যাডার পদে হবে স্থায়ী নিয়োগ এবং নন-ক্যাডার পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে লোকবল ঘাটতি মেটাতে এসব পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমান প্রায় চার হাজারের বেশি লোকবল কাজ করছে নির্বাচন কমিশনে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
লোকবল নিয়োগের পাশাপাশি ইসিতে এক যুগেরও বেশি পদোন্নতি না পাওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাদের মতে, পদ আপগ্রেডেশনের জন্য ৮ থেকে ৯ বার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।

সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে সারা দেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে ইসি ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ইসির এক কর্মকর্তা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম, সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের।

এর পাশাপাশি ইসির সঙ্গে চলমান সংলাপে রাজনৈতিক দলসহ অন্যরা নিজস্ব জনবল বাড়িয়ে ইসিকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে ইসিতে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, শুরু থেকে ইসির নিয়োগ প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়ার পক্ষে ছিল না। কারণ সরকার নতুন করে পদ সৃজন করতে চায় না। এতে সরকারের বড় ধরনের ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইসিতে নতুন পদ সৃজনের অনুমোদন দেয়া হয় ৯টি শর্তে।

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে নতুন পদগুলো সৃজনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। জিও (সরকারি আদেশ) জারির আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে।
এ ছাড়া প্রশাসনিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সচিব কমিটির সুপারিশ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বেতন স্কেল নির্ধারণের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন বিভাগের নিয়ম অনুসরণ করতে বলা হয়। এ ছাড়া আড়াই হাজার লোকবল নিয়োগের যেসব পদ নিয়োগবিধিতে নেই সে ক্ষেত্রে নিয়োগবিধি প্রয়োজনীয় সংশোধনী শর্ত দেয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ইসিতে কম নতুন পদ সৃজনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে তাদের প্রস্তাবে আড়াই হাজার লোকবল নিয়োগের কথা বলেছিল। সেখান থেকে ৫০০ পদ বাতিল করে দুই হাজার তিনটি পদের অনুমোদন দেয়া হয়।

কারণ নতুন পদের মধ্যে ডাটাএন্ট্রি অপারেটর নিয়োগের কথা ৫১৭টি। পাশাপাশি সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে আরও ৫০০ লোকবল চাওয়া হয়। এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডাটাএন্ট্রি অপারেটর এবং সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর উভয় পদের কাজ একই ধরনের। সে বিবেচনায় সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদ সৃজন বাতিল করে শুধু ডাটাএন্ট্রি অপারেটর পদ রাখা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ সৃষ্টির মধ্যে সারা দেশে উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসের জন্য সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা ৫১৭টি, স্টোর কিপার ৬৪টি, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ৪২টি এবং নির্বাচন কমিশন সবিচালয়ে ২৯টি পদ রয়েছে। এ ছাড়া অবশিষ্ট পদে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হবে।
এ দিকে ইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, লোকবল নিয়োগ ভালো উদ্যোগ। কিন্তু অনেক কর্মকর্তা আছেন যাদের কোনো পদোন্নতি হচ্ছে না একযুগের বেশি । এ ছাড়া ইসিতে ১১০টি পদ আপগ্রেড করতে ইতিপূর্বে ৮ থেকে ৯ বার জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে প্রস্তাব।

কিন্তু সেখান থেকে বিভিন্ন কোয়ারি দিয়ে বারবার ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। তিনি বলেন, একই পদে দীর্ঘদিন থাকার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) পেয়ে ইতোমধ্যে নিজের বেতন গ্রেড থেকে আরেক ধাপ উপরের গ্রেডের আর্থিক সুবিধার স্তরে পৌঁছে গেছেন। এখন পদোন্নতি দেয়া হলে অফিসিয়াল মর্যাদা বাড়বে। কিন্তু আর্থিক দিক থেকে লাভবান হবেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কমিশনের অধীনে কমিশন সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়, ৬৪টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় এবং ৫১৭টি উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় রয়েছে। এসব মিলিয়ে ৫৯৪টি দফতর রয়েছে।
এর মধ্যে কমিশন সচিবালয়ে নতুন করে ২৬টি পদ সংযুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেখানে নতুন একজন যুগ্মসচিব, দুই উপসচিব, দুই সিনিয়র সহকারী সচিব, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী যুক্ত করা হচ্ছে। আর মাঠ প্রশাসনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক, জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ের দফতরগুলোতে ১৮শ’ নতুন পদ সৃজনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।