শপথ নিয়ে বিএনপি নমনীয়

রাজনৈতিক ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদে দলের নির্বাচিত পাঁচ সংসদ সদস্যের শপথের বিষয়ে নমনীয় হচ্ছে সরকার বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি। বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা মনে করছেন, জোটের আরেক শরিক গণফোরামের নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য শপথ নিলে সংসদে যাওয়ার পথ খুলবে তাদেরও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নির্বাচিত এক সংসদ সদস্য গত ৪ মার্চ এমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, এম মোকাব্বির খান গণফোরাম থেকে নির্বাচিত হলেও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ তো ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। তারা শপথ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি গণফোরাম ও বিএনপি। এতে বোঝা যাচ্ছে, সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি এখন নমনীয়।

এদিকে মোকাব্বির খান জানিয়েছেন, তারা দুজন যে শপথ নিচ্ছেন সে বিষয়ে গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সবুজ সংকেত রয়েছে। শপথ নেওয়ার ঘোষণার পরও দল তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নির্বাচিত ওই সংসদ সদস্য আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সংসদ অধিবেশন শুরুর দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নিতে হয়। সে হিসাবে এখনো সময় রয়ে গেছে। ভেতরে-ভেতরে দলের হাইকমান্ডকে শপথ গ্রহণের ভালো দিকগুলো বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কারণ সংসদে যোগ দিলে রাজপথের পাশাপাশি সংসদেও দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরা যাবে। তার দাবি, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে অনেকে সংসদে যোগ দেওয়ার পক্ষে। তবে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ক্ষুব্ধ হতে পারেন এমন আশঙ্কায় তারা শপথ নেওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে অবস্থান নিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদ জানান, দলের সিদ্ধান্তই তার কাছে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি যাবেন না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে।

গণফোরামের দুই নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও এম মোকাব্বির খান গত ২ মার্চ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বরাবর ৭ মার্চ শপথ নেওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে চিঠি পাঠান। চিঠি পাওয়ার পর স্পিকারের দপ্তর থেকে শপথ নেওয়ার জন্য তাদের চিঠি দিয়ে জানাতে সংসদের আইন শাখাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ২ মার্চ গণফোরামের ওই দুই নেতা স্পিকারকে চিঠি দিলেও সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছিলেন গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। বিষয়টি জানানোর পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মন্টু বলেছিলেন, দু-একদিনের মধ্যে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে দুই সংসদ সদস্যের বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর দুদিন পার হলেও গণফোরাম বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি।

শপথ গ্রহণ করতে চেয়ে স্পিকারকে চিঠি দেওয়া দুই নেতার বিষয়ে গণফোরাম কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানতে চাইলে গত ৪ মার্চ তিনি বলেন, আগে তারা শপথ নিক। তারপরও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর গত ৪ জানুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারের বাসভবনে বৈঠক করেছিলেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন।

ওই নেতারা জানান, এরপর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের বাসায় বিএনপি নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠকের শুরুতে ক‚টনীতিকদের ব্রিফ করেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল। এরপর বিএনপি মহাসচিব ও ফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বিরোধী দলের ওপর ‘সরকারি দলের নির্যাতন’ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে কথা বলেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ক‚টনীতিকদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার, ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্লেক, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিবেট, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট বি ওয়াপকিনস।