ঠিকানা রিপোর্ট : চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল সেশনের ক্লাস। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কলেজে ওরিয়েন্টেশন সম্পন্ন করেছেন। এবার অনলাইনে ওরিয়েন্টেশনের কিছু সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি কিছু অনুষ্ঠিত হয়েছে ইনপারসন। কোনো কোনো কলেজে এক দিনেই ওরিয়েন্টেশন হয়েছে, আবার কিছুু কিছু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক দিনে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত দুই বছর করোনার কারণে সীমিত পরিসরে ওরিয়েন্টেশন রয়েছে। তবে এবার এর ব্যতিক্রম ছিল। ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওরিয়েন্টেশন। যেসব পরিবারের শিক্ষার্থীরা কলেজে যাচ্ছেন, সেসব পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা। কিন্তু এই আনন্দের পেছনেও লুকিয়ে আছে হাজার হাজার পরিবারের কান্না। একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট ও বেদনার কান্না। কারণ, অনেক অভিভাবকই সন্তানকে দূরে পাঠাতে চান না। কিন্তু সন্তানের ইচ্ছা এবং তার সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় তাকে দূরে পাঠানোর অনুমতি দিচ্ছেন। বাবা-মায়েরা সন্তানকে দিয়ে আসছেন কলেজের ডর্মে। এ কারণে বিভিন্ন কলেজে সন্তানকে ডর্মে রেখে আসার দৃশ্য এমনÑহয় বাবা-মা কাঁদছেন অথবা সন্তান কাঁদছেন। আবার বিদায়বেলায় কোনো কোনো পরিবারের সবাই কাঁদছেন। তবে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। বিদায়বেলায় পরিবারও খুশি, শিক্ষার্থীরাও খুশি। কেউ কাঁদছেন না, আনন্দের সঙ্গে বিদায় নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব পরিবার সন্তানদের বাসা ছেড়ে দূরে দিয়ে আসছে, ওই সব পরিবারের বেশির ভাগ বাবা-মায়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তারা নীরবে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছেন। কাউকে কিছু বলছেন না। সন্তানের জন্য মঙ্গল কামনা করছেন, দোয়া করছেন। সন্তানকে ছেড়ে থাকতে তাদের কষ্ট হলেও সন্তানকে বলতে পারছেন না দূরে না যেতে। তারা কান্না করে কষ্ট কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করছেন।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিভাবকদের চিন্তা সবচেয়ে বেশি সন্তান পরিবার ছেড়ে গিয়ে সেখানে ঠিকমতো লেখাপড়া করবে কি না? ভালো রেজাল্ট করতে পারবে কি না? নাকি ভিডিও গেমসহ বিভিন্ন গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। ইদানীং অনেক ছেলেমেয়ে মোবাইল ফোনে বা বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসে গেম খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। এতে বাবা-মায়েরা অতিষ্ঠ হলেও কিছু বলতে পারছেন না, পাছে ভয় তার সন্তানেরা না অভিমান করে বসে অথবা অন্য কিছু করে বসে। পাশাপাশি একা একা চলতে-ফিরতে পারবে কি না, এমন চিন্তাও রয়েছে।
একজন অভিভাবক বলেন, আমার সন্তান উচ্চতর শিক্ষা নিতে গেছে। ডর্মে থাকছে। চিন্তা হলো ঠিকমতো খেল কি না, ঠিকমতো ঘুমাল কি না। বেশি রাত পর্যন্ত জাগল কি না? সবকিছু ঠিকমতো করতে পারছে কি না। বাসায় থাকতে সবই আমরা করে দিতাম। এখন সে তার সব কাজ ঠিকমতো করতে পারবে কি না। কাদের সঙ্গে মিশবে না মিশবে, সেটাও একটি বিষয়। তার পরও কিছু করার নেই, সন্তানের ইচ্ছার কারণেই তাকে পরিবারের বাইরে দূরে দিতে হয়েছে।
আরেকজন অভিভাবক তার সন্তানকে দূরে পাঠিয়ে খুবই বিমর্র্ষ হয়ে পড়েছেন। বারবার সন্তানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সন্তান ব্যস্ত, তাই কথা বলার সময় করে উঠতে পারছেন না। সন্তান দিনে একবার কথা বলছেন। বাবা-মা চাইছেন তার সন্তান টাইম টু টাইম তাদেরকে সব জানান। কিন্তু এটা সম্ভব নয় জানার পরও অভিভাবকেরা কষ্ট পাচ্ছেন, কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। অন্য এক অভিভাবক বলেন, সন্তানকে কখনো দূরে দিতে হবে, এটা ভাবিনি। তার ইচ্ছা ও স্বপ্নপূরণের জন্য তাকে দূরে দিতে হয়েছে। আমরা চাই সে ভালো থাক। তার স্বপ্ন পূরণ হোক।
অভিজ্ঞজনেরা বলছেন, অনেক অভিভাবকই সন্তানদের নিয়ে বেশি চিন্তা করেন। এ কারণে সন্তানদের দূরে দিতে চান না। এটা একদিকে ভালো কিন্তু সন্তানের স্বপ্নপূরণের ইচ্ছাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকলে তাকে স্বাধীনভাবে তার স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে যেতে দেওয়া উচিত এবং তাকে সাহায্য করা উচিত। নিজেদের সিদ্ধান্ত সন্তানের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে বরং তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানা উচিত। যদি তার সিদ্ধান্ত সঠিক মনে না হয়, তাহলে আলোচনা করে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো।