নিজস্ব প্রতিনিধি : শিশু শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য বরাদ্দ করা অর্থের একটা অংশ খাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এ খাতে চারটি এনজিওকে বছরে দিচ্ছে ২৭ কোটি টাকা। তারা আরো আট কোটি টাকা চেয়েছে। বিদেশে প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণে ব্যয় হচ্ছে ২৫ কোটি টাকা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি দেশের ২১টি উপজেলায় প্রাক্্-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার সরবরাহ করে। ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে চার দিন রান্না করা খাবার এবং অপর দুই দিন শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়। শুকনো খাবার বলতে পাউরুটি বা বিস্কুট, কলা ও একটি সেদ্ধ ডিম। এনজিওগুলোই খাবার সরবরাহ করে।
ছাত্রপিছু প্রতিবেলায় খাবারের জন্য তারা ২০ টাকা করে নেয়। অথচ সরবরাহ করা শুকনো খাবারে খরচ হয় বড়জোর ১০ টাকা। রান্না করা খাবারে থাকে খিচুড়ি ও ডিমের ভুনা। সরকারিভাবে রান্না করা খাবারেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরাও এতে আগ্রহী। বৈচিত্র্য আনার জন্য সরকারিভাবে সরবরাহ করা শুকনো খাবার দেওয়া হয় সপ্তাহে দুই দিন। চার দিন রান্না করা খাবার। এতে ডিম ভুনার সঙ্গে সবজিও দেওয়া হয়। শুকনো খাবারে শিক্ষার্থীপিছু ব্যয় হয় ৯ টাকা। রান্না করা খাবারে খরচ হয় ২১ টাকা। চাল, তেল, ডাল সরকারিভাবেই সরবরাহ করা হয়।
স্থানীয়ভাবে স্কুলভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে মহিলা অভিভাবকদের সমন্বয়ে। অভিভাবক মহিলারাই রান্নার দায়িত্ব ভাগ করে নেন। পৃথকভাবে বেতনভোগী রাঁধুনি থাকে। অভিভাবক মহিলারা স্বেচ্ছাশ্রমে তদারকি ও খাবার বিতরণের দায়িত্ব পালন করছেন। ন্যায্যমূল্যে ডিম সরবরাহ করেন স্থানীয় মহিলা অভিভাবকরা।
এতে তাদেরও আর্থিক সংস্থান হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০৪টি উপজেলার ৩০ লাখ শিশু শিক্ষার্থীকে খাবার সরবরাহ করা হয়। এ বছর এ সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫ লাখ করা হয়েছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা উপজেলাগুলোকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। জরিপে দেখা যায়, পটিয়া উপজেলায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীর সংখ্যা ৩ শতাংশ, যা সবচেয়ে কম। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এ হার ৩৫ থেকে ৪৭ শতাংশ। গাইবান্ধার ফুলছড়িতে সর্বাধিক বেশি ৪৮ শতাংশ। এখানকার সব কটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেই এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।
এ কর্মসূচিতে সরকারের ব্যয় হয় ৫৪০ কোটি টাকা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির খরচ হচ্ছে ৫০০ কোটি। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অপেক্ষাকৃত অনেক কমসংখ্যক শিক্ষার্থীকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা সত্ত্বেও খরচ অনেক বেশি পড়ছে। এ নিয়ে সংস্থাটির মাথাব্যথা নেই। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিশ্ব খাদ্য সংস্থার নজরে এনেছে। অপচয়, অহেতুক বাড়তি খরচ বন্ধ করে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য বলেছে। মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এনজিওগুলো খাবার বাবদ অনেক বেশি টাকা নিচ্ছে।
দ্বিগুণেরও বেশি টাকা নেয়া বাবদ তারা মোট ৫০ কোটি টাকার বেশি নিয়ে যাচ্ছে। এই এনজিওগুলোর তত্ত্বাবধানে এনজিও কর্মী, শিক্ষক, অভিভাবকদের বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণ ও অর্থ অপচয় করা হচ্ছে। ভারত, শ্রীলঙ্কায় শিক্ষার্থীদের খাবার সরবরাহ কার্যক্রম সাফল্যজনকভাবে চলছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা পরিচালিত কার্যক্রমের আওতায় বছরে শতাধিক টিম বিদেশে পাঠানো হয়। গত বছর এ খাতে ব্যয় দেখানো হয় ২৩ কোটি টাকা। এ বছর বরাদ্দ রয়েছে ২৫ কোটি টাকা।