শিষ্যদের গলায় অলিম্পিকের পদক দেখতে চান ক্লাভস

স্পোর্টস ডেস্ক : পদকের খাতায় বাংলাদেশের নাম তুলেছেন আবদুল্লাহ হেল বাকী। তার এক রুপায় যেন মুহূর্তেই বদলে গেল দলের আবহ। উবে গেল সব চাপ। এর পেছনের কারিগর ক্লাভস ক্রিস্টেনসেন। ‘ব্যাক-আপ প্ল্যান’ কার্যকরী হওয়ার পর এই ডেনিশ রাইফেল কোচ ব্রিসবেনের বেলমন্ট শ্যুটিং কমপ্লেক্সে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধি সনৎ বাবলার কাছে সবিস্তারে রুপা জয়ের কাহিনী বর্ণনা করেছেন-
প্রশ্ন : কোচ অভিনন্দন। কেমন উপভোগ করলেন বাকীর রুপা জয়?
উত্তর : ধন্যবাদ। দারুণ উপভোগ করেছি। ফাইনালে বাকী দুর্দান্ত মেরেছে। শেষ শটটা আরেকটু ভালো হলে স্বর্ণও জিততে পারত। ওই সময় নার্ভ ধরে রাখা বড় কঠিন। খুব ভালো লাগছে, আস্থার প্রতিদান দিয়েছে বাকী।
প্রশ্ন : এটা কি বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আপনার সেরা অর্জন?
উত্তর : যুব এশীয় গেমসে অর্ণব রুপা জিতেছে, সুবাদে নিজের যোগ্যতা দিয়ে সে আর্জেন্টিনায় খেলবে যুব অলিম্পিকে। এটা বাংলাদেশের শ্যুটিংয়ের একটা বিশেষ ঘটনা। তা ছাড়া আবদুল্লাহ হেল বাকী ও আতকিয়া হাসান দিশা ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে স্বর্ণ জিতেছে। তবে কমনওয়েলথ গেমসের লেভেলটা এসবের চেয়ে একটু ওপরে মনে হয়। তাই বাকীর এই জয়টা বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আমার সেরা অর্জন বলতে পারি।
প্রশ্ন : বাকীর কারণে গোল্ড কোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে পদকের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। সেদিক থেকে দেখলেও এটা বড়, কারণ এই রুপা উদ্যাপনের একটা উপলক্ষ এনে দিয়েছে।
উত্তর : বাংলাদেশ পদকের খাতা খুলেছে, সবার জন্য দারুণ আনন্দের উপলক্ষ। এটা আমাদের জন্য চাপ হয়ে ছিল গত তিন-চার মাস ধরে। সবার প্রত্যাশা ছিল শ্যুটিংয়ের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে। শ্যুটাররাও এটা জানত, তাদের ওপর তাই বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছিল। সেদিক থেকে দিনটা যুগপৎ আনন্দের এবং স্বস্তির। তবে বাকীর জন্য ব্যাপারটা মোটেও সহজ ছিল না, ভীষণ চাপে ছিল সে। চাপ সামলে পদক জেতাটাই হলো চ্যাম্পিয়ন শ্যুটারের চরিত্র। আমি খুশি যে তাকে দলে নেওয়াটা যথার্থ হয়েছে এবং রাইফেল হাতে সে আবারও নিজেকে প্রমাণ করেছে অস্ট্রেলিয়ায়।
প্রশ্ন : অক্টোবরে আপনার প্রথম ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের সিলেকশনে তো বাকী ছিল না।
উত্তর : ওই সময় বিওএর নির্দেশনা অনুযায়ী দল নির্বাচন করতে হয়েছিল আমাদের। পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে তখন বাকীর অবস্থা অত ভালো ছিল না, রাইফেল নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। মুন্না ও রিসালাতের স্কোর ভালো ছিল, তাই অক্টোবরে তাদের প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তবে তাকেও রাখা হয়েছিল, যদি কেউ খারাপ করে। বাকী ছিল ব্যাক-আপ প্ল্যানে।
প্রশ্ন : তাহলে শেষ সময়ে এসে রিসালাত খারাপ করছিলেন প্র্যাকটিসে?
উত্তর : ওর স্কোর একটু খারাপ হয়েছিল। এর পরও তার জায়গায় বাকীকে নেওয়া মোটেও সহজ কাজ ছিল না। তিনজনই একই মানের শ্যুটার। সিদ্ধান্তটা নেওয়ার আরেকটি কারণ রিসালাত অসুস্থ হয়ে পড়েছে এখানে, পেটের পীড়ায় ভুগছে সে। তাতে আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজটা সহজ হয়ে যায়, মূল দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বাকীকে। এর সঙ্গে আরেকটি ব্যাপার কাজ করেছিল আমার মধ্যে। মনে হয়েছিল বাকীরই ফাইনালে ভালো করার ক্ষমতা আছে। কমনওয়েলথ গেমসে তার পদক জেতার অভ্যাস আছে, অভিজ্ঞতা আছে। এই বিবেচনাতেও সে এগিয়ে যায়।
প্রশ্ন : কিন্তু তার পার্টনার রাব্বি হাসান মুন্না ভালো শুরু করেও পরে সেই ধারা ধরে রাখতে পারেনি। ফাইনালে উঠতে পারলেন না।
উত্তর : আমি এখনো বলি মুন্না খুব ভালো শ্যুটার, ওর রাইফেলের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আজকে ওর খারাপ সময় গেছে। বেলমন্ট শ্যুটিং রেঞ্জের গরমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। আন্তর্জাতিক রেঞ্জগুলোতে সাধারণত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকে, এখানে সেটা নেই। আর এই গরমে সে হাঁপিয়ে গেছে। এই গরম আর কম্পিটিশনের টেনশন মিলে সে ঘামতে শুরু করেছিল। থুতনিটাকে কখনো নিজের রাইফেলের সঙ্গে ভালোভাবে রাখতে পারেনি, ঘামের কারণে বারবার ওর সমস্যা হচ্ছিল। এ জন্য ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সটা সে করে যেতে পারেনি।
প্রশ্ন : দুটি বছর কেমন উপভোগ করেছেন বাংলাদেশে?
উত্তর : অবশ্যই খুব ভালো। শ্যুটারদের উন্নতি হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সাফল্য পেয়েছিÑ এটাই তো একজন কোচের খুশির জন্য যথেষ্ট। আড়াই বছর আগে যখন প্রথম কথা বলতে আসি তখন ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদকের (ইন্তেখাবুল হামিদ) ভালো করার ইচ্ছা দেখেছি, উন্নয়ন-পরিকল্পনা দেখেছি। এসব দেখেই বাংলাদেশে কাজ করার ব্যাপারে ইতিবাচক হয়েছিলাম। পরে কাজ করতে গিয়ে শ্যুটারদের মধ্যে শেখার আগ্রহ এবং উন্নতি করার প্রবল ইচ্ছা দেখেছি, সেটাই মূলত শ্যুটিংকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে নতুন কিছু প্রতিভাবান শ্যুটারও তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন : এই দুই বছরে ভালো সময় পার করেছে শ্যুটিং, কিছু সাফল্যও উপহার দিয়েছেন আপনি। আপনার মূল লক্ষ্য কী?
উত্তর : চূড়ান্ত লক্ষ্য অলিম্পিক পদক। শ্যুটারের গলায় অলিম্পিক পদক দেখাটা যেকোনো কোচের স্বপ্ন। ওই জায়গায় যেতে সময় লাগবে। আগে চাই কোটা প্লেস, যোগ্যতা দিয়ে বাংলাদেশি শ্যুটার অলিম্পিক গেমসে যাচ্ছে, এটা দেখতে চাই। এখনো দুই বছর সময় আছে, উন্নতি করারও ভালো সুযোগ আছে। আমি বিশ্বাস করি, ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে এখন যারা আছে তারা মনোযোগী হলে অবশ্যই টোকিও অলিম্পিকের কোটা প্লেস অর্জন সম্ভব। বাকী, মুন্না, রিসালাতের সঙ্গে নতুন শ্যুটার অর্ণব ও থমাস আছে। যোগ্যতা দিয়ে অলিম্পিকে যাওয়ার সামর্থ্য তাদের আছে। কারণ তাদের মধ্যে ভালো কম্পিটিশন হয়। শুধু আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার দরকার, বিভিন্ন কম্পিটিশনে গিয়ে ভালো করলে আত্মবিশ্বাস বাড়তে বাধ্য।
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন। এই আসরের শ্যুটিংয়ে কি আর কোনো সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের?
উত্তর : পদকের তালা খুলেছে। একজন জিতলে অন্যরা উৎসাহিত হয়। বাড়ে তাদের আত্মবিশ্বাসও। গত ১০ এপ্রিল মেয়েদের ১০ মিটার আছে, পিস্তল ইভেন্ট আছে। পিস্তলেও কিন্তু পদকের সম্ভাবনা আছে। আমরা আশায় থাকতে পারি।