নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের জন্য গঠন করা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। সেই নির্বাচনকালীন সরকার অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের পর এই সরকার গঠন করা হতে পারে। ওই সরকারের প্রধান হবেন সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর কোন ব্যতিক্রমের সুযোগ নেই- কথাগুলো বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।
তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ঠিকানার সঙ্গে আলাপকালে এই সব কথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। তিনি জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে এখানে আসেন। যোগ দিয়েছেন একাধিক অনুষ্ঠানে।
আগামী নির্বাচনকালীন সরকার কত সদস্য বিশিষ্ট হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বর্তমান সরকারের চেয়ে আয়তন ছোট হবে। সেটা বলা যায়। মন্ত্রী সভার বর্তমান সদস্যদের সবাই থাকছেন না সেটাও নিশ্চিত।
কারা কারা থাকতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন। প্রধানমন্ত্রী যাদেরকে মনে করবেন রাখা দরকার তাদেরকেই রাখবেন। তাছাড়া সবাইকে রাখারও প্রয়োজন হবে না, কারণ ওই সময়ে সরকারের কাজ কম। রুটিন কাজগুলো করে নেওয়ার জন্য যতখানি প্রয়োজন।
নির্বাচন যথাসময়ে হবে কিনা এই নিয়ে মানুষের মনে অনেক সংশয় আছে, আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসাবে মনে করেন সংশয়ের কোন কারণ আছে? তিনি বলেন, আমি সংশয়ের কোন কারণ দেখি না। কারণ নির্বাচন যথাসময়ে হবে। এই ব্যাপারে কোন ধরণের সংশয় কারো রাখা উচিত হবে না। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন নিয়ে সংশয় কোন থাকবে না।
রাজনৈতিক অস্থিরতা যে রকম বিরাজ করছে তাতে কি মনে করেন নতুন কোন সংকট তৈরি হতে পারে? তিনি বলেন, নতুন কোন সংকটের কারণ দেখি না। সব কিছু সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে। সবারই সংবিধানের প্রতি আস্থা ও সম্মান থাকতে হবে। কেউ সংকট তৈরি করার চেষ্টা করেন কিংবা নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করে সেগুলো কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে বলে বিভিন্ন দিকে শোনা যাচ্ছে, সরকারের একজন মন্ত্রীও বলেছেন, আপনি তো আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন, আছেন। আপনার কাছে কি তথ্য আছে? ড. মশিউর রহমান বলেন, নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে হতে পারে। তবে একদম দিনক্ষন আমি বলতে পারবো না। নির্বাচনের তারিখ ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের ব্যবস্থা নিবে। তাদের সব প্রস্তুতিও চলছে।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাইয়ে কোন কোন দিকগুলো বেশি গুরুত্ব দিবে? তিনি বলেন, এখনই এটা ওইভাবে বলা যাবে না। তবে যে বিষয়গুলো দেখা হবে সেগুলো হলো জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, দলের জন্য কাজ করেছেন, ত্যাগী, সেই সঙ্গে যোগ্য এছাড়াও আরও বেশ কিছু বিষয়। এছাড়াও আমাদের দলেরতো প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য কমিটি রয়েছে।
এবারের সংসদে এমপি যারা রয়েছেন তাদের সবাইকি এমপি পদে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে পারেন নাকি নতুন মুখের প্রাধান্য থাকবে? তিনি বলেন, নতুন মুখতো সব সময় কিছু কিছু থাকেই। পুরতনও থাকে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলে এই সব বিষয় ও সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই এই সংক্রান্ত কমিটি সিদ্ধান্ত নিবেন। আর দলীয় প্রধানতো আছেনই।
এবার তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আমি নাকি পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি করেছিলাম, টাকা চুরি করেছিলাম আমার সেই চুরির টাকা কোথায়? আপনারা সাংবাদিকরা বলতে পারেন?
উত্তরে বললাম বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের সত্যতা দুদক পায়নি বলেছে। কানাডার আদালতে মামলা খারিজ হয়েছে। তাহলে আমার দোষ কোথায় ছিল? কবে সমালোচনা হয়েছে আমাকে নিয়ে। দুএকটি মিডিয়া ছাড়া সবাই বিপক্ষে লিখেছে। এই কারণে মিডিয়াকে বলবো কোন কিছু প্রমাণ না হওয়ার আগে এভাবে লেখালেখি ঠিক না। এতে দেশের কত বড় ক্ষতি হলো। দেশের ক্ষতির বিষয়টি সাংবাদিকদের বিবেচনা করতে হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর তার সম্মানে ম্যানহাটানে হিলটন হোটেলে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছেন পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে কিছু কথা। তিনি ড. ইউনূস প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পদ্মা সেতুর বিষয়টি তুলে আনেন। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে বলেন, নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরও তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়েন না। কারণ, এমডির পদ ছাড়লে তো গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা মারা যাবে না। তিনি বলেন, তার বন্ধু ছিলেন হিলারী ক্লিন্টন। তিনি তার সহযোগিতায় পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করান। বিশ্বব্যাংকের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। তারা বলেছে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। আর এই দুর্নীতি হয়নি আমি সেটাই বলেছিলাম। এখন সেটাই সত্য হয়েছে। কোন দুর্নীতি পায়নি বিশ্বব্যাংক। আর কানাডার আদালতেও মামলার সকল অভিযোগ মিথ্যে বলে মামলা খারিজ করে দিয়েছে।