শেখ হাসিনার কথাবার্তায় ‘কুছ পরোয়া নেহি’ ভাবটি বুঝতে হবে!

শিতাংশু গুহ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন ভারতকে ‘ন্যাটো’-তে যোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ভারত রাজি হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শঙ্কর বলেছেন, ভারত নিজের শক্তিতে বলীয়ান, দরকার নেই ন্যাটোতে যোগ দেয়ার। এমন কথা ভারতকেই মানায়, এ সময়ে জয় শঙ্করের মতো একজন দক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল।
মার্কিন ভিসানীতি ও ৬-কংগ্রেসম্যানের বাইডেনকে লেখা চিঠি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এখন একটু দোদুল্যমান অবস্থায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন আমেরিকা, তিনি নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন যাবেন, কংগ্রেসের যৌথ সভায় ভাষণ দেবেন। কেউ কেউ বলছেন, মোদী ওয়াশিংটনে শেখ হাসিনার পক্ষে লবিং করবেন।
ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক এবং দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভারত সরকার কখনো মার্কিন সরকারের কাছে গিয়ে বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগের হয়ে দেন-দরবার করবে না! মোদী কি করবেন তিনি জানেন, তবে ভারত সম্ভবত: শেখ হাসিনার পক্ষে।
মার্কিন ভিসা না দিলে কি হয়? কানাডা বলেছে, তারা মার্কিন ভিসা নীতি অনুসরণ করবে। ইইউ একই পথ ধরবে। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে বসে বাইডেনের সাথে কোলাকুলি করে গেছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান কোনো দেশে আশ্রয় না পেয়ে দেশে ফিরে গেছেন, ভিসা না দিলে ‘বেগম-পাড়া’র অবস্থা কি হবে কে জানে?
যুক্তরাষ্ট্র এবার ‘দৃষ্টিকটু’-ভাবে প্রকাশ্যে নেমেছে। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার পর পরিস্থিতি যথাযথভাবে সামাল দেয়া যায়নি, এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা। এরপর ভিসা ইস্যু। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই না একথা তো বলা যায় না? ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে সরকার গত ৪ বছর বারবারই বেকায়দায় পড়েছে, ভারত ২০১৪ পর থেকে বারবার ত্রাতা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। এবারও ভরসা ভারত।
৬জন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে দেয়া চিঠিটি যথেষ্ট কঠোর। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনীর সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ ঘোষণার পদক্ষেপ নেয়া এবং জিএসপি সুবিধা বাতিলের আনুরোধ এর আগে খোলাখুলি কেউ করেনি। খবর বেরিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আরও ৫১জন বাংলাদেশির ভিসা বাতিল করেছে।
৬জন কংগ্রেসম্যান চিঠিতে বলেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, মন্দির ও মূর্তি ভাঙচুর, খুন, ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর হিন্দুদের বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছে। খ্রিস্টানদের ওপর অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে। এগুলো যে অসত্য তা প্রমাণে নেতাদের দিয়ে বিবৃতি দেয়া হচ্ছে।
সব সরকারের আমলেই হিন্দুরা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে, তাই ৫২ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেকের কম হয়ে গেছে? ২০২২’র আদমশুমারি অনুসারে হিন্দু জনসংখ্যা ৮.৫৪% থেকে কমে ৭.৯৫% হয়েছে (ঢাকা ট্রিবিউন ২৭ জুলাই ২০২২)। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালের শেষে হিন্দু জনসংখ্যা মোট ১.৭০ কোটি বা ১০.৭% (পিটিআই ২৩ জুন ২০১৬)। অর্থাৎ সরকারি হিসাবমতে ২০১৫-২০২২ এই ৭ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা ১০.৭% থেকে ৭.৯৫% অর্থাৎ ২.৭৫% কমে গেছে?
সরকারের উচিত সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিরসনে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনের অঙ্গীকার পূরণ করা। হিন্দুরা এমনিতে বিরক্ত, ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ এবং ‘সংখ্যালঘু কমিশন’ দিলে কিছুটা আস্থা ফিরে আসবে। এমনিতে তো কিছু হচ্ছে না, এর মধ্যে নিউজ দেখলাম, হাইকোর্ট রুলিং দিয়েছে যে, ‘অর্পিত সম্পত্তি লিজ দিতে পারবেন জেলা প্রশাসক’। এটি ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’। হিন্দুরা বলছে, হিন্দুর সম্পত্তি এখন জেলা প্রশাসকের হাতে!
বাংলাদেশে গণতন্ত্র কখন ছিল? গণতন্ত্র বা নির্বাচন নিয়ে এবার আমেরিকার মাথাব্যথার কারণ কি? মদিনা সনদে দেশ চললে গণতন্ত্র থাকে ক্যামনে! আর নির্বাচন? বাংলাদেশের মানুষ ‘হরেক রকমের’ নির্বাচন দেখেছে। বিদ্যুৎ যেমন মাঝে-মধ্যে আসে, থাকে না; গণতন্ত্রও তেমনি হঠাৎ হঠাৎ আসে, থাকে না; সুষ্ঠূ নির্বাচনও তেমনি মাঝে-মধ্যে হয়! মিডিয়া জানাচ্ছে, আমেরিকা নাকি বাংলাদেশিদের ব্যাংক একাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের খোঁজখবর নিচ্ছে? বাংলাদেশ থেকে চোরাই টাকা আমেরিকা এসে নাকি রেমিটেন্স হয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছে।
এসবের মাঝে নুতন জটলা, ভারতের নবনির্মিত পার্লামেন্ট ভবনে ‘অখণ্ড ভারত’-এর (?) মানচিত্র। এতে অনেকে গোস্বা হয়েছেন। আসলে ওটি প্রায় আড়াই হাজার বছর পুরানো ‘অশোক স্তম্ভ’, ভারতের বিদেশ-মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মানচিত্র যা ছিল তাই আছে। মানব-জমিন রিপোর্ট করেছে, ঈদের আগে খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন? সম্ভবত: সরকার দুর্বল-এটি প্রমাণ করতে এ গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কথাবার্তায় ‘কুছ পরোয়া নেহী’ মেসেজটি তাঁরা হয়তো লক্ষ্য করেননি। সিরাজুল আলম খান ‘দাদাভাই’-এর মৃত্যু’তে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
নিউইয়র্ক, ১২ জুন ২০২৩।