শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প কেন নেই

সায়েম খান

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার জন্মলগ্ন থেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিগত ৩৪ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগ দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সম্প্রতি রাজনীতি থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বপ্রণোদিত হয়ে। চলতি মাসের প্রথম ভাগে বাংলাদেশ আনসার ভিডিপির এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই আমি রাজনীতি থেকে অবসর নেবো, আমি আমার গ্রামে চলে যাবো এবং এটাই আমার সিদ্ধান্ত’। এর ধারাবাহিকতায় একটি জাতীয় দৈনিকে ‘শেখ হাসিনার বিকল্প কে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে রাজনৈতিক নেতারা ও বুদ্ধিজীবীদের মন্তব্যের সারমর্মে প্রতীয়মান হয় যে- এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
এখানে শেখ হাসিনার কাজের নিদর্শন বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। শেখ হাসিনা এমন কি করেছেন যার জন্য তিনি অবিকল্প। তার অবিকল্প হয়ে ওঠার কারণ হিসেবে মোটাদাগে বলা যায়, একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ তুলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করেন। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ জেল হত্যার বিচার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না এলে সম্ভবই হতো না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শত চাপে এই বিচারের প্রশ্নে তিনি আপসহীন, ইতিহাসের দায় শোধ করে কলঙ্কের হাত থেকে জাতিকে মুক্তির পথ প্রদর্শক। টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি ক্ষমতায় আসার ফলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ঘটেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। ফলে দেশে একটি ভবিষ্যৎমুখী ইতিবাচক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধারা তৈরি হয়েছে।
টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আমি সকলের প্রধানমন্ত্রী’। অর্থাৎ তিনি সরকারপ্রধান হিসেবে দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করবেন, অব্যাহত রাখবেন দেশের উন্নয়নের ধারা। এত দিন তিনি সেটা করতে না পারার কারণ বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী অপরাজনীতি। কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কলাকৌশলের কাছে এই চক্রটি ধরাশায়ী। প্রায় সমগ্র জাতি আজ এক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে। ফলে তিনিও জাতির খ-িত অংশের অভিভাবক না হয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ক্রিয়াশীল সব শক্তিকে এক প্লাটফর্মে এনে ব্যক্তিগত দর্শনের জায়গা থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক সামষ্টিক উন্নয়নের কথা ভাবছেন। তার মতো সত্যিকারের রাজনীতিবিদের কাছে সমষ্টিগত অনুভবকে প্রাধান্য দেয়াই হলো রাজনীতির মুখ্য বিষয়। তিনি যে শুধু উন্নয়ন করতে চান, তা নয়। উন্নয়নের সঙ্গে চান ঐতিহ্যের সংযোগও। তিনি জানেন আদর্শ ও ঐতিহ্যগত চেতনাবিচ্ছিন্ন উন্নয়ন বিশেষ কোনো কাজে আসে না। সংস্কৃতি ও অতীত ঐতিহ্য বিজড়িত কোনো দর্শন ও জীবনবোধ স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে না। তাই তার পিতার আদর্শের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ উন্নয়ন দর্শনে তিনি বিশ্বাসী।
দলীয় বা জাতীয় রাজনীতিতে শেখ হাসিনাই একমাত্র কা-ারী। তিনি রাজনীতিতে মত ও পথের সৃষ্টি করেন। তার সৃষ্ট মত ও পথের অনুগামী দলের অন্য সব নেতাকর্মীরা। তার পরও তিনি ভালো করেই জানেন, নেতার কাজ দুই ধরনের- ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত। ব্যক্তিগত হলো দর্শন আর সমষ্টি গতটা দর্শনের প্রয়োগ। শুধু ব্যক্তিগত দর্শনে বোঝাপড়া থাকলেই হবে না। সেটা প্রয়োগের জন্য একটি সমষ্টি দরকার। যাকে বলা হয় পার্টি বা সংগঠন। পার্টি বা সংগঠনকে অস্বীকার করে কোনো দর্শনই বাস্তবায়ন করা যায় না এবং তিনি সেটা করার চেষ্টাও করেন না। তাই তো তিনি অকপটে স্বীকার করেন আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি হলো তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নেত্রীর দর্শন প্রয়োগ ও এর সফল বাস্তবায়ন দলের নেতাকর্মীদেরই নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি রাজনীতিকে উৎসের ধরন বিচারে ভাগ করি তাহলে রাজনীতি দুই প্রকার- প্রাইমারি রাজনীতি এবং সেকেন্ডারি রাজনীতি। শেখ হাসিনা রাজনীতির যে পথ ও দর্শন সৃষ্টি করেন উৎসগত দিক থেকে এটা প্রাইমারি রাজনীতি। তার সৃষ্ট পথ ও মতাদর্শ মাঠে বাস্তবায়নের প্রয়াস হলো সেকেন্ডারি রাজনীতি। এ ক্ষেত্রে যারা সুন্দরভাবে কাজটি করতে পারেন প্রাইমারি উৎস ধারণকারীর সঙ্গে তারাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। পিতার মতো মানুষের প্রতি বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা শেখ হাসিনাকে ভাবায়। তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, একটা বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য। তাইতো সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতা থেকে প্রায়শ উদ্ধৃত করেন-
‘চলে যাব-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’।
সর্বোপরি বলতে চাই, রাজনীতি যদি সাধনা হয়, শেখ হাসিনা সেই সাধনার মহাসাধক। এ দেশে রাজনীতি যদি নীতির প্রশ্ন হয়, তাহলে শেখ হাসিনা সেই নীতির শুদ্ধ চরিত্র। সুতরাং বঙ্গবন্ধুহীন এই দেশে রাজনীতিতে বর্তমানে শেখ হাসিনার বিকল্প ভাবা আমাদের জন্য সত্যিকারার্থেই অসম্ভব।

লেখক : রাজনৈতিক কর্মী।