শেখ হাসিনার পক্ষে নতুন ইসলামি জোট

শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাদের একতাবদ্ধ করে শেখ হাসিনার পক্ষে নতুন ইসলামি জোট করতে চাইছে। তারা দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছে। এটা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ জোটের মধ্য থেকেই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে। শরিক প্রগতিশীল বাম ধারার দলগুলো, এমনকি একটি ধর্মীয় সংগঠনও এর পক্ষে নয়।
জানা যায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের উচ্চস্তরে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রতিপক্ষ বিএনপির ধর্মকে পুঁজি করে সরলমনা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার নীতির বিপরীতে তা হবে কার্যকর পন্থা। দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে নির্বাচনের পক্ষে টানতে পারে না আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষের মনোভাব বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় সংগঠনগুলো ও আলেম-ওলামাদের এক কাতারে শামিল করার কৌশল নিয়েছেন। ধর্মীয় রাজনীতিকে পুঁজি করেই প্রধানত বিএনপি নির্বাচন প্রভাবিত করে আসছে। ইসলামি সংগঠনগুলোকে একতাবদ্ধ করে ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রভাবিত করে আসছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ধর্মকে মূল্যায়ন করে না, তাদের অধিকাংশ নেতাকর্মী ইসলামি আদর্শ ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী নন, তারা ধর্মবিদ্বেষী কমিউনিস্ট-বামপন্থীদের নিয়ে জোট করেছে- এমন সব প্রচার-প্রচারণা লাগাতার চালানো হচ্ছে জামায়াত ও বিএনপিপন্থী ইসলামি সংগঠন এবং আলেম-ওলামাদের উল্লেখযোগ্য অংশের মাধ্যমে। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে ঘরে নির্বাচনী ফল যাতে বিএনপি ও তার সহযোগীরা আর তুলতে না পারে, সে উদ্দেশ্যেই শীর্ষ পর্যায় থেকে কার্যকর কৌশল নেওয়া হচ্ছে। বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে বিএনপি জামায়াত-হেফাজত-খেলাফতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনকে নিয়ে পৃথক জোট গঠন করেছে। আগামী নির্বাচনে এই জোট, জোটের নেতারাসহ অন্যান্য ধর্মীয় নেতারা, আলেম-ওলামাদের দিয়ে দেশব্যাপী বিশেষ করে ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাবে বিএনপি ও তার সহযোগীদের পক্ষে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল বিএনপির এই কৌশলের বিপরীতে ধর্মীয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংগঠনকে নিয়ে পৃথক জোট গঠনের বা মহাজোটে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলামিক ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিসের একটি অংশ, তরীকত ফেডারেশন, এমনকি আল্লামা শফীর ছেলের নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামসহ আরো কয়েকটি ইসলামি সংগঠনকে নিয়ে নতুন এই ইসলামি জোট গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে। হেফাজতে ইসলামকে এর নেতৃত্বে আনা হবে। তবে হেফাজতের ইসলামি জোটে আত্মপ্রকাশ ঘটবে আরো পরে। কৌশলগত কারণেই তাদের এ পর্যায়ে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা গড়ে তোলার জোটে রাখা হবে। আন্দোলনের একটা পর্যায়ে তারা সটকে পড়বে, যা বিএনপির ভাবমূর্তি অধিকতর ক্ষুণ্ন করবে।
এদিকে ইসলামি দলগুলোর অধিকাংশেরই সরাসরি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন, তাদের ছায়াতলে গড়ে ওঠা জোট ১৪ দলে যোগ দিতে আগ্রহী। কিন্তু জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ ইসলামি দলগুলোকে ১৪ দলে নেওয়া এবং তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার প্রবল বিরোধী। তারা তাদের এই আপত্তির কথা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে অবহিত করেছে। কেউ ১৪ দলীয় জোটকে কোনোভাবে দুর্বল করার পক্ষে নন, তবে ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে চলার পক্ষেও নন। দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাদের রাজনৈতিক উপলব্ধিকে বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে নিয়ে পৃথক ইসলামি জোট করার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তরীকত ফেডারেশন ১৪ দলভুক্ত হলেও ইসলামি দলগুলোকে সংগঠিত করে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব এ পর্যায়ে এই সংগঠনকেই দেওয়া হবে। দেশের বেশ কয়েকজন বরেণ্য ইসলামি শিক্ষাবিদ, আলেম-ওলামাকে এতে শরিক করা হচ্ছে। এ জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।