শেখ হাসিনার মধ্যে মায়ের ছায়া দেখলেন ভিপি নুর

রাজধানী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদে নবনির্বাচিত নেতাদের ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দরভাবে চলুক। এ জন্য সেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকতে হবে। আমরা তরুণ প্রজন্মের মেধা ও মননকে আমাদের উন্নয়নের কাজে সম্পৃক্ত করতে চাই, তাদের চিন্তা-ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই।’ ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা গত ১৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আমাদের এগোতে হবে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশকে গড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশ গড়ে উঠবে, এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই তোমাদের চলতে হবে। প্রগতির মশাল জ্বেলে শান্তির পথ ধরে তোমরা এগিয়ে যাবে, এটাই আমি চাই।’

এ সময় মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর ডান পাশে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর এবং বাম পাশে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে শোভন নুরের কাছে প্রায় দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতার শুরুতে স্কুলজীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই স্কুল ছিল তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের বক্তৃতা শুনতে স্কুল ফাঁকি দিয়ে সেখানে চলে যেতেন তারা। পরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু আন্দোলন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত ডাকসু ও হল সংসদ নেতাদের ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে বিজয়ীদের সিংহভাগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। আমরা দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। প্রত্যেক বিভাগে এমন বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করে দেবো।’ ডাকসুর নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা দেখবা, আমরা কত ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যাতে শিক্ষার্থীরা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও কাজ পায়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। তার জন্যও আমাদের শিক্ষিত তরুণ দরকার। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমার লোক দরকার। একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল করব আমরা, তার জন্য লোক দরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ এসেছে, তা দিয়ে বিভিন্ন কিছু তৈরি হবে, তার জন্যও আমার উপযুক্ত লোক দরকার।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলা- এসব দিকেও মনোযোগ থাকতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ওয়াইফাইসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আগামীতে হলেও ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা করব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটা উন্নত করা উচিত। বর্তমান লাইব্রেরিটা কত বছর আগের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজড করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি পাবলিক লাইব্রেরিও উন্নত করা হবে।’

ডাকসু নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তোমাদের দেওয়া বক্তব্য থেকে আমি কিছু বিষয় নোট করেছি; লিফটের ব্যবস্থা করব, জরাজীর্ণ ফ্যান পাল্টে নতুন ফ্যানের ব্যবস্থা হবে। এ জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসব।’

এ সময় ’৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা সময় আমি অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম। এইবার নিয়ে আমি চতুর্থবার ক্ষমতায়, এটা ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুসহ আমার পরিবারের অন্যদের হত্যাকারীদের জন্য মোটেই সুখকর নয়। ’৭৫-এর পরে আমি যেদিন বাংলাদেশে পা রাখি, সেদিন থেকেই আমি জানি, যেকোনো দিন আমাকেও মেরে ফেলতে পারে। যেহেতু আমার কাছে জীবনের কোনো মায়াও নেই, সে কারণে আমার কোনো ভয়ডরও নেই। সব হারিয়েছি, হারাবারও কিছু নেই, পাওয়ারও কিছু নেই। সেক্ষেত্রে দেশকে কতটুকু দিয়ে যেতে পারি, এই হিসাবটাই আমি করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার যে রিপোর্ট, যা সিক্রেট ডকুমেন্ট, এটা কিন্তু প্রথমবার সরকারে এসে আমি সংগ্রহ করেছিলাম। তারপর এটা নিয়ে প্রায় দীর্ঘ ২০ বছর আমি আমার বান্ধবী বেবী মওদুদকে নিয়ে কাজ করেছি। এই নিয়ে আমরা দুই খণ্ডে বই বের করেছি। একজন নেতার বিরুদ্ধে একটা গোয়েন্দা সংস্থা এত রিপোর্ট দিয়েছে, যাতে ৪০ হাজার পৃষ্ঠা। সেসব রিপোর্ট দিয়ে বই করে দিচ্ছি, সেখানে তোমরা দেখতে পাবে, ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কীভাবে তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এদেশ স্বাধীন করতে একটা মানুষ সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, অনেক মানুষ জীবন দিয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না।

ডাকসু নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার শিক্ষাগ্রহণের অংশ হিসেবে দেশকে ভালোবাসতে হবে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে, দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া ভুলে কাজ করতে পারলে, তোমরা একদিন সফল নেতা হবে- এটাই জাতির পিতার শিক্ষা, সেই শিক্ষাই তোমাদের নিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসাইন বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন এবং হল সংসদের ১৮ জন ভিপি বক্তৃতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সংগঠনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জিৎ চন্দ্র দাস স্বাগত বক্তৃতা করেন।