শেষ মুহূর্তের সুপারিশে সরগরম সচিবালয়

বেলাল হোসেন : একমাস পরই গঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচানকালীন সরকার। এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। কে থাকছেন কে থাকছেন না। বর্তমান সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষের আগ মুহূর্তে সচিবালয়েও ভিড় বেড়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সচিবালয়ে দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে দ্বিগুণ। সরকারের এই শেষ সময়ে চাকরির পদোন্নতি, ভালো জায়গায় বদলি ও বিভিন্ন ফাইলের সুপারিশে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের। এছাড়াও আগামী নির্বাচনের এমপি টিকিট পাওয়ার আশায় বেশকিছু হেভিয়েট মন্ত্রীদের দপ্তরে এসে ধরনা দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকার লোকজন। এতে সচিবালয়ে লোকজনের চাপ বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বেশকিছু মন্ত্রণালয়ে সুপারিশের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদবির ও সুপারিশের চাপ একটু বেশি হচ্ছে বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বদলি এই শেষ সময়ে এসে বেশি চেপে গেছে বলে মন্ত্রণালয়ের অনেকেরই ধারণা। এছাড়াও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জন্য আবেদন গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই মন্ত্রণালয়ে আনাগোনা বাড়তে থাকে বিভিন্ন এলাকার সংসদ সদস্যদের। তাদের ধারণা আগামী নির্বাচনের আগে এলাকার স্কুলটিকে এমপিওভুক্ত করতে পারলে তার নিজের ভোটব্যাংক আরো শক্তিশালী হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেসরকারি মাধ্যমিক বিভাগে চলতি মাস থেকে সবসময় ভিড় লেগেই থাকে। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন তৃণমূলের শিক্ষকরা আসছেন তাদের স্কুল-কলেজের অবস্থান জানার জন্য। আর তাদের সবার একই প্রশ্ন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে তো?
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ (বেসরকারি মাধ্যমিক) আমার সংবাদ বলেন, এমপিওভুক্তির কাজ বড় পেইনফুল। সারাদিন প্রায় ১শ লোকের সঙ্গে এমপিওভুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে হয়। অনেকেই আসেন তদবির করতে। আসলে এখানে তদবিরের কিছুই নেই। অনলাইনে সবাই আবেদন করেছেন। এরপর যোগ্যতা ফুলফিল হলেই ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে।
নির্বাচনের আগে তদবিরের চাপ বেড়ে গেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, উনারা তো জনপ্রতিনিধি, ভোটের জন্য বলেন আর যেটাই বলেন, তারা আসবেন। এছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েও প্রশাসনিক লোকদের পদোন্নতির বিষয়ে বেড়েছে আনাগোনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠ প্রশাসন অধিশাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, আগের তুলনায় এখন পদোন্নতির বিষয়ে জানার আগ্রহটা বেশি। তিনি বলেন, সবারণ ধারণা সরকারের শেষ সময়ে তার পছন্দের জায়গা না পেলে নতুন সরকার এসে আবার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হতে হতে অনেক পিছিয়ে যাবে। তার হয়তোবা পছন্দের জায়গায় যাওয়াটা নাও হতে পারে। আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলছে ভালো জায়গায় বদলি হয়ে আসার জন্য সুপারিশ। অনেকেই ধরনা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার রুমে। তারা তাদের বিভিন্ন অসুবিধার বিষয় তুলেও ধরছেন। কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকার নুতন মুখ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে মন্ত্রীদের কাছে আসছেন দোয়া নিতে। তাদের সঙ্গে আসছেন আরও বেশকিছু লোকজন, সব মিলিয়ে লোকের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ওঠা-নামার কাজে ব্যবহৃত লিফট-এ ওঠার জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে। এই ভিড়ের কারণে অনেক সময় মন্ত্রী-সচিবরা ওঠা-নামার ক্ষেত্রে কিছুটা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সচিবালয়ের ৬নং বড় বিল্ডিংয়ের এক লিফট অপারেটর বলেন, গত কয়েক দিন হচ্ছে লোকজনের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। অনেক সময় বড় স্যারদের ওঠা-নামায় একটু সময় লাগছে। এছাড়াও সচিবালয়ের স্ক্যানার চেকিং রুম থেকে শুরু করে রিসিপশনে অফিস চলাকালীন সময়ে ভিড় লেগেই আছে।
সচিবালয়ে দায়িত্বে থাকা স্পেশাল ব্রাঞ্চের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে ১৫ থেকে ২০টা পাস থাকে। আবার কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ে বেশিও থাকে। তবে বিশেষভাবে কিছু মন্ত্রণালয় পাসের ব্যবস্থা করে লোকজনকে ভিতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেন। অপরদিকে অনেকেই অভিযোগ করে বলছেন, বড় কর্তাদের কিছু কিছু গানম্যান গাড়িতে করে দু-একজনকে ভিতরে প্রবেশ করতে সাহায্য করছেন।