শৈশব থেকেই আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম

সাক্ষাৎকারে অ্যাটর্নি রাশেদ মজুমদার

নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একজন আইনজীবী হব। ছিলাম অবিচল-যত কষ্টই হোক পূরণ করতে হবে সেই স্বপ্ন পূরণে। এ জন্য অনেক পড়াশোনা ও পরিশ্রম করতে হয়েছে। আইনজীবী হওয়ার পেছনে আমার বাবা-মা ও পরিবারের সাপোর্ট ছিল অনেক। তাদের সহযোগিতা না থাকলে এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় ঠিকানার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ব্রঙ্কস ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি (ডিএ) অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি (এডিএ) হিসেবে কর্মরত রাশেদ আহমেদ মজুমদার।
রাশেদ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান। বয়স ২৭ বছর। তার বাবা মোহম্মদ এন মজুমদার, মা রেক্সোনা মজুমদার, বোন অ্যাটর্নি নাসরীন মজুমদার। বাবা বাংলাদেশের আইনজীবী, এই দেশ থেকে মাস্টার্স অব ল’ করেছেন। তার বোন ইমিগ্রেশন বিষয়ে আইনজীবী। রাশেদ মজুমদারের পরিবারে আইনজীবী রয়েছেন একাধিক। তাই ছোটবেলা থেকে বাবাকে আইন পেশায় কাজ করতে দেখে তার মধ্যে স্বপ্ন জন্ম নেয় আইনজীবী হওয়ার। বড় হয়ে বাবার সঙ্গে আইন বিষয়ে কাজ করার সুযোগ পান। সব মিলিয়ে তার এই পেশায় আসা।

মা-বাবা ও বোনের সাথে অ্যাটর্নি রাশেদ মজুমদার।

রাশেদ মজুমদার বলেন, আইনজীবী হিসেবে এ বছরই অফিশিয়ালি শপথ নিয়েছি। এখন ব্রঙ্কসের ডিএ অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করছি। এই অফিসে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ক্রিমিনাল ল’ নিয়ে কাজ করি। এখানে সরাসরি সেই কাজের সুযোগ রয়েছে। কোর্টরুমে বিচারক থাকেন। তার সঙ্গে এবং ডিএর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাই সরাসরি আইন বিষয়ে চর্চা করতে পারছি। পাশাপাশি অভিজ্ঞতা তৈরি হচ্ছে। কাজটি করার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই খুশি।
রাশেদ তার শিক্ষার প্রসঙ্গে বলেন, আমি ম্যানহাটনের গ্রাফিক্স কমিউনিকেশন আর্টস স্কুল থেকে ২০১৩ সালে হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েশন করেছি। জিপিএ ছিল ৩.৫, এরপর জন জে কলেজ থেকে ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ে ২০১৮ সালে ব্যাচেলর করেছি। সেখানেও জিপিএ ছিল ৩.৫। এরপর আমি পেস ইউনিভার্সিটির পেস ল’ স্কুল থেকে আড়াই বছরে জেডি সম্পন্ন করি। সেখানেও ভালো রেজাল্ট করেছি। জেডি পাস করার পর ডিএ অফিসে জয়েন করেছি।
তার সাফল্যের পেছনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমি অনেক কমিউনিটি সার্ভিসে অংশ নিয়েছি। এখনো নেই। বিভিন্ন ইয়ুথ প্রোগ্রাম, লিডারশিপ প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছি। এ ছাড়া বিভিন্ন রিচার্স প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছি। সব মিলিয়ে এসব কিছু আমার লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অনেক কাজে লেগেছে। বাবার সাথে আইন বিষয়ে কাজ করার কারণেও লেখাপড়ায় অনেক হেলপ হয়েছে।
তিনি বলেন, সবাই জানে ল’ স্কুল অনেক এক্সপেনসিভ। আমার সুবিধা ছিল, আমি পাবলিক কলেজ থেকে ব্যাচেলর করেছিলাম। এ কারণে সেখানে তেমন খরচ হয়নি। পেস ল’ স্কুলে স্কলারশিপ পেয়েছিলাম, পাশাপাশি লোন নিতে হয়েছে। যারা ল’ স্কুলে পড়তে চাইবে তাদের জন্য আমার সাজেশন হবে, ব্যাচেলর কিউনির কলেজ থেকে পাস করে ল’ স্কুলে যাওয়া। সেটি হলে ৫০ হাজার ডলারের মতো লোন নিলে লেখাপড়া শেষ করা সম্ভব হবে। কারণ ভালো জিপিএ থাকলে ভালো স্কলারশিপ পাওয়া যায়। ল’ স্কুলে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে, সেখান থেকেও অর্থ পাওয়া যায়। এতে পড়ার খরচ জোগানো সহজ হয়।
তিনি বলেন, আমাদের এখানকার অনেক অভিভাবক ও স্টুডেন্ট মনে করেন, তার সন্তান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবেন, কম্পিউটার সায়েন্স পড়বেন। আইন পেশায় বেশি আসতে চান না। আমি বলব, যারা ম্যাথে ভালো নয়, তাদের আইন বিষয়ে লেখাপড়া করা উচিত।
ভবিষ্যৎ ইচ্ছা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাশেদ মজুমদার বলেন, ভবিষ্যতে পিএইচডি কিংবা মাস্টার্স করার ইচ্ছা আছে। হিস্ট্রি কিংবা ইংরেজি বিষয়ে পিএইচডি করব। পাশাপাশি নিজের ক্যারিয়ারে আরো মনোযোগ দেব। আমি ক্রিমিনাল ল’ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চাই। অ্যাটর্নি হওয়ায় কেবল ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো স্টেটে আইন পেশায় কাজ করতে পারব। ওই দুটি স্টেটের জন্য আলাদা পরীক্ষা দিতে হয়। তিনি বলেন, আমি বিচারক হওয়ার স্বপ্ন যেমন দেখি, পাশাপাশি স্বপ্ন দেখি একজন রাজনীতিবিদ হওয়ার। তবে এখনই এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না। কমিউনিটিতে থাকতে চাই। কমিউনিটির মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে রাশেদ বলেন, বাংলাদেশের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। আমি সেখানে আব্বুর সাথে যাই। আমার নানা নুরুজ্জামান ভূঁইয়ার নামে মাদ্রাসা রয়েছে। সেটিকে আমি বড় করতে চাই এবং এটি আরো উন্নত করতে চাই। আমি এখানে কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের জন্যও কাজ করতে চাই।