নিজস্ব প্রতিনিধি : অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ নিয়ে সরকার এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সরকারের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। কিন্তু আইনগত জটিলতায় জেলা প্রশাসন হস্তান্তর করতে পারছে না। অথচ এ ব্যাপারে ভারতের দিক থেকে জোর অনুরোধ রয়েছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতৃস্থানীয়দের কাছ থেকে প্রবল চাপ রয়েছে। এদিকে নির্বাচন আসন্ন এবং এই সম্পত্তি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে আশঙ্কায় এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সরকার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আইনগত প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে। এর পাশাপাশি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের ডেকে তাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি ও বিদেশি কূটনীতিকদের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয়দের প্রভাবিত করা হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ বেড়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাও রয়েছেন। রাজশাহীস্থ ডেপুটি হাইকমিশনেও তাদের যোগাযোগ, বৈঠক হচ্ছে।
বাংলাদেশে ফেলে যাওয়া ও বিক্রি করে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, জমিজমা, বিষয়-সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তরের জন্য সরকার আইন করলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। সারা দেশে অর্পিত সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার জন্য প্রায় দুই লাখ আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু কোনো সম্পত্তিই মূল মালিক বা তাদের ওয়ারিশদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ক্রয়সূত্রে মালিকানা দাবিদার ও মূল মালিকদের উত্তরাধিকার দেখিয়ে তারা এসব বিষয়-সম্পদ সরকারের কাছ থেকে নিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসনকেও সংশ্লিষ্টরা নানাভাবে প্রভাবিত করেছে বলে অনেকেরই অভিযোগ। ভূমি মন্ত্রণালয় লিভ টু আপিল দায়ের করার আগ পর্যন্ত নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু দুই বছর আগে ভূমি মন্ত্রণালয় ভুয়া উত্তরাধিকার দেখিয়ে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া নিয়ে আদালতের আশ্রয় প্রার্থনা করলে বিষয়টি থেমে যায়।
ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী সম্পত্তি হস্তান্তর হচ্ছে না। বিশেষ করে, উত্তরাধিকার দাবিদারদের ক্ষেত্রে এটা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। আইনে বলা রয়েছে, উত্তরাধিকার দাবিদারদের এ দেশের নাগরিকত্ব সনদ, ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম সনদ, ৭০-এর নির্বাচন ও পরবর্তী জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নাম ভোটার তালিকাভুক্ত থাকার বিষয়গুলো দেখাতে হবে। কিন্তু প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে শর্তগুলোর অধিকাংশ মেনে চলা হচ্ছে না। ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রের বদলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক পরিচিতিপত্র প্রদান, ইউপি চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যের সার্টিফিকেট দাখিল করা হচ্ছে এবং তা গ্রহণ করে এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ক্রয়সূত্রে দেখানো মালিকানা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জেলা প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। মন্ত্রিপরিষদের দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়। ভূমি মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে আদালতের আশ্রয় নেওয়ার ফলেই সমস্যা দেখা দেয়। এদিকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল ভূমি মন্ত্রণালয়ের উত্থাপিত বিষয়টি অযৌক্তিক দাবি করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সম্পত্তি তাদের উত্তরাধিকারদের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবি করেছে। ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্য বলেছে। এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ে তারা স্মারকলিপি দিয়েছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনকেও অবহিত করে তাদের সহযোগিতা কামনা করেছে। জানা যায়, এ নিয়ে ঢাকাস্থ হাইকমিশনার ভূমিমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
জানা যায়, এ নিয়ে জটিলতা না বাড়িয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা উপর মহল থেকে দেওয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক করা লিভ টু আপিল রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনে যাতে এর প্রভাব না পড়ে, সে জন্য হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ডেকে বোঝানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বল্প সময়ে নির্বাচনের আগে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নাও হতে পারে। নির্বাচনের পর এ ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া এবং অর্পিত সম্পত্তি দ্রুত প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আশ্বস্ত করা হবে বলেও জানা যায়।
সংখ্যালঘু ভোট প্রভাবিত করতে সরকারের পক্ষে ভারত
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ জটিলতা