সংসদ থেকে জাপাকে বের করে আনার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিনিধি : সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা খুঁজছে বিএনপি। দলের মধ্যে এবং দলের বাইরে সমমনা, সন্ত্রাসীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন একজনকে চাই তাদের। কিন্তু জন্যে হয়ে খুঁজেও তেমন কাউকে পাচ্ছেন না। অপেক্ষায় আছেন লন্ডন থেকে বিশেষ বার্তায়। তবে তার যদি দলে এবং বাইরে গ্রহণযোগ্যতা না পায় তাহলে আরেক সমস্যায় পড়বে বিএনপি।
গত সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই লন্ডনে আস্থানরত নেতা তারেক রহমানের কাছ থেকে আসে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের নামে। দলের মধ্যেই ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ থাকার পরও অন্যন্যোপায় হয়েই বিএনপির নেতাকে কামাল হোসেনকে মেনে নিয়েছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালনি শীর্ষস্থানীয় নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সম্প্রতি প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন যে, ড. কামাল হোসনেকে নেতা মেনে নির্বাচনে যাওয়া তাদের ভুল ছিল। তাঁর এই আত্মপলদ্ধি দলের মধ্যে এবং বাইরেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ প্রশ্নও উঠেছে যে, ড. মোশাররফ কেমন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতা যে ড. কামালকে নেতা মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চায়ের দাওয়াতে যাওয়ার এবং রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নেয়ার সময় তিনি একবারও তাঁর আপত্তির কথা জানাননি। বরং সানন্দচিত্তে স্বাচ্ছন্দ্যে সংলাপে ও নির্বাচেন দলের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করেন। এখন তিনি এর বিপক্ষে কথা বললেও দল কি কোনোভাবে লাভবান হচ্ছে না ড. মোশাররফ দলের মধ্যে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন!
দলেরও দেশের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে খন্দকার মোশাররফ নিজেকে যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন বলেই মনে করেন। কিন্তু দল ও রাজনৈতিক সহযাত্রীদের বড় অংশই তা মনে করে না।
ঘরে বাইরে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন একজনকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। ঢাকায় বিএনপির নেতারা লন্ডন থেকে বিশেষ বার্তা পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। লন্ডন থেকে পাঠানো দলীয় বা বাইরে কোনো নেতা যদি বিএনপি ও সমমনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না পায় তাহলে তা বড় রকমের রাজনৈতিক বিপর্যয়ই ডেকে আনবে। বিএনপির দিক থেকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সরকারকে পুরোপুরি এক ঘরে করা। জাতীয় সংসদে সরকারি দলকে সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ করতে নানামুখী চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সংসদে সরকারি দল তাদের ১৪ দলীয় শরিকরা ছাড়া অন্য কোনো দল যাতে অংশ না নেয় তার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। সাংবিধানিকভাবে সরকারকে সংকটে ফেলার চেষ্টা যাতে সফল না হয় সে ব্যাপারে সরকারি মহলও সতর্ক থেকে কর্মপন্থা স্থির করছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে এবং পরবর্তীতে দেয়া পরিচালনায় বিএনপি থেকে কে নেতৃত্ব দেবেন সে প্রশ্নের সদুত্তর এখনও বিরোধী দল থেকে দেয়া হয়নি।
সরকারি দমন থেকে এক মাসেরও বেশি সময় আগে এ প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এ প্রশ্ন যে কেবল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বা কোন দল, গোষ্ঠীর তাও নয়। রাজনীতি সচেতন মানুষসহ দেশের সাধারন মানুষের মধ্যে এ প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে দুর্বল নেতৃত্ব, অনেকের মতে নেতৃত্বহীন বিএনপির নেতৃত্ব কে দেবেন আগামী সংসদ নির্বাচনে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রয়েছেন। মির্জা আলমগীর বরাবর সক্রিয় এবং ড. মোশাররফ ইদানীং মাঠে নামার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দলের মধ্যেও এদের কেউ ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য নন। বরং তাদের বিপক্ষে তীব্র মতামত রয়েছে।
দণ্ডিত শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সামনে পথ রয়েছে আপিল করার। আপিল করার পর আপিল অনিষ্পন্ন থাকা অবস্থায় তিনি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। শারীরিক সীমাবদ্ধতার চেয়ে বড় ভয় হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল বিবেচিত না হলে, হাইকোর্টের রায় বহাল থাকলে খালেদা জিয়ার পক্ষে বাকি জীবনে আর রাজনীতিতে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকবে না। দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের আদালতের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তার আগে তাঁকে নিম্ন আদালতে হাজির হতে হবে, গ্রেফতার বরণ করতে হবে। বিএনপির পরিকল্পনা হচ্ছে সরকারবিরোধী তীব্র গণ-আন্দোলনের সময় তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার। বিএনপি ও তার জোটের সমান্তরাল কর্মসূচি পালনে বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা ও জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর আপত্তি না থাকলেও তারেক রহমানের মুক্তি প্রশ্নে তাদের আপত্তি রয়েছে। জোটগতভাবে নেতা নির্বাচনে একমাত্র মান্না, রবদের আপত্তি নেই। ড. মোশাররফ, মির্জা ফখরুলকে মেনে নিতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে তা নয়। নেতা নির্ধারণ, নিরপেক্ষ জাতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন কাঠামো, কাদের সমন্বয়ে কত দিনের জন্য এই সরকার গঠন করা হবে। নির্বাচন পরবর্তীতে কাদের সমন্বয়ে কিভাবে সরকার গঠন করা হবে তার রূপরেখা প্রভৃতি জটিল ও জরুরি স্পর্শকাতর বিষযগুলো ঠিক করে নেয়ারও তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
বিএনপির একাধিক নেতৃস্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী বছরের প্রথম দিকেই তারা সরকার বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর করতে চায়। তার আগে আগামী ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস সামনে রেখে তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। এতে সরকার অপসারণের বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সচিবালয় ঘেরাও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাত্রার কর্মসূচি দেয়া হবে। রেলপথ-রাজপথ-নৌপথ সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তাবও রয়েছে। এ জাতীয় কর্মসূচি আর একটু সময় নিয়ে আগামী বছরের প্রথম দিকে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সর্বসম্মত নেতা নির্বাচনের বিষয়টি অনির্ধারিতই থেকে যাচ্ছে। সকলের গ্রহণযোগ্য একজনকে সর্বাত্মকভাবে অনুসদ্ধান করা হচ্ছে। গত সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনকে লন্ডন থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়। এবারে তা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন কাউকে আনার চিন্তা করা হচ্ছে।