সঙ্গীতজ্ঞ বারীন মজুমদারের পাবনার বাড়ি বেদখলে

পাবনা : পাবনা পৌর এলাকার রাধানগর মজুমদারপাড়ায় বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ বারীন মজুমদারের পৈতৃক বাড়িটি অবৈধ দখলে চলে গেছে। এতে অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে তার সব স্মৃতিচিহ্ন। স্মৃতি ধরে রাখতে সংগ্রহশালা ও সঙ্গীত একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সংস্কৃতিসেবীরা।

জমিদার বংশ মজুমদার পরিবারে ১৯১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন বারীন মজুমদার। বাবা নীশেন্দ্রনাথ মজুমদার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভক্ত ছিলেন, দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে বাড়িতে নিয়মিত আসর বসাতেন। সেখান থেকেই সঙ্গীতের প্রতি আসক্তি বারীন মজুমদারের। চর্চায় বাদ সাধেনি পরিবারও। তার প্রচেষ্টাতেই ১৯৬৩ সালে ঢাকার কাকরাইলে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়। তালিম দিয়েছেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতেও। সঙ্গীত সাধনায় তার খ্যাতি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপমহাদেশে।

পাবনার বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী প্রলয় চাকী বলেন, ছোটবেলা থেকে বিত্ত-বিলাসেই বড় হয়েছেন বারীন। বর্তমানে বেদখলে থাকা রাধানগরের পুকুরঘাটের জমিদারবাড়িতে তিনি এলে আশপাশের জেলা থেকে গুণী শিল্পী ও যন্ত্রীরা ছুটে আসতেন। মজুমদার পরিবারের দেওয়া জমিতেই গড়ে উঠেছে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, রাধানগর মজুমদার একাডেমিসহ (আরএম একাডেমি) আরও নানা স্থাপনা। তা ছাড়া ওই এলাকার নামকরণই হয় মজুমদারপাড়া।

তিনি আরও বলেন, সুর সাম্রাজ্যে নিমগ্ন থাকায় বিষয়সম্পত্তি নিয়ে ভাবনা ছিল না বারীন মজুমদারের। এতে সব সম্পত্তি চলে যেতে শুরু করে অবৈধ দখলদারদের হাতে। অভিমানে প্রতিবাদটুকুও করেননি তিনি। এক সময় মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকুও বেহাত হলে ক্ষোভে তিনি মৃত্যুর আগে আর পাবনায় আসেননি।

বারীন মজুমদারের বড় ছেলে সঙ্গীত পরিচালক পার্থ সারথি মজুমদার বলেন, পাবনায় আমাদের পূর্বপুরুষের বাড়ি। অসাধু ব্যক্তিরা এক হাজার ২৩৭ সহস্রাংশ জমি জাল কাগজ তৈরি করে দখল করে নিয়েছে। সঙ্গীত অনুশীলন কক্ষ আর পূর্বপুরুষের গড়া মন্দির ছাড়া সবই এখন বেদখলে। যাদের বাবা আশ্রয় দিয়েছেন, তারাই বাবার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

ছোট ছেলে সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার বলেন, পূর্বপুরুষের মাটিতে আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা নেই। আইনি লড়াইয়ে প্রতারণা প্রমাণ হয়েছে। তারপরও অবৈধ দখলদাররা সম্পত্তি ফিরিয়ে দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতা চাইছি।

পাবনার প্রবীণ আইনজীবী পুলক কুমার চক্রবর্তী বলেন, বারীন মজুমদারের মা প্রয়াত কমলা রানী মজুমদারকে জীবিত দেখিয়ে ২০০৫ সালে ডিক্রি করে ওই সম্পত্তি দখলে নিতে চেষ্টা করে একটি চক্র। জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে ওই সম্পত্তি বারীন মজুমদারের উত্তরাধিকারীদের বলে রায় দেন। অভিযুক্তরা নির্ধারিত সময়ে দখল না ছাড়ায়, প্রথম সাব জজ আদালতে একটি উচ্ছেদ মামলা চলমান রয়েছে।

জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেলে বারীন মজুমদারের সম্পত্তি উত্তরসূরিদের ফিরিয়ে দিতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্মৃতি ধরে রাখতে যেকোনো উদ্যোগে সরকারি সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।